নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রথমবারের মতো যুদ্ধ হেলিকপ্টার তৈরি করেছে ভারত। দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্পের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ পরিকল্পনার উদ্যোগ নিয়েছেন। সেই উদ্যোগের আওতায় ‘প্রচণ্ড’ নামে এ হালকা যুদ্ধ হেলিকপ্টারটি নির্মাণ করা হয়েছে। গত সোমবার ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ যোধপুরে হেলিকপ্টারটির উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এ সময় ভারতের চিফ অব এয়ার স্টাফ চিফ মার্শাল ভিআর চৌধুরী তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ভারতের বিমানবাহিনী স্থানীয় সময় গত শুক্রবার ‘প্রচণ্ড’ নামে হেলিকপ্টারটি প্রদর্শন করে। এটি বিভিন্ন পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র বহনসহ একাধিক অস্ত্র দিয়ে সাজানো হয়।
ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস লিমিটেড হেলিকপ্টারটি নির্মাণ করেছেন। লাইট অ্যাটাক হেলিকপ্টারটি আগামী কয়েক বছরে ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং বিমানবাহিনীতে অ্যাটাক হেলিকপ্টার ইউনিট গঠনের ভিত্তি হবে। প্রায় ৬ টন (৫.৮ টন) ওজনের দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট হেলিকপ্টারটিতে এরইমধ্যে বিভিন্ন অস্ত্র যুক্ত করা হয়েছে এবং সেগুলোর পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ জানান, এ হেলিকপ্টারটির নাম দেয়া হয়েছে ‘প্রচণ্ড’।
রাজনাথ বলেন, ‘আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। বিশ্বের সামনে ভারতের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনে উৎকর্ষ আবার প্রমাণ হলো।’প্রচণ্ডকে বাহিনীর হাতে তুলে দেয়ার প্রক্রিয়ার কর্মসূচিতে রাজনাথ বলেন, ‘আমাদের একটি আক্রমণে সক্ষম হেলিকপ্টার প্রয়োজন ছিল। ১৯৯৯-এর কার্গিল যুদ্ধের সময় সেই অভাব অনুভূত হয়েছিল। প্রচণ্ড দুদশকের নিরন্তর গবেষণার ফল। সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদনের নিরিখে গত সোমবার মাইলফলক হিসেবে থেকে যাবে।’ এরই মধ্যে হেলিকপ্টারটি থেকে বিভিন্ন অস্ত্র অব্যর্থ নিশানায় লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করায় সাফল্য অর্জন করেছে। লাদাখে পরীক্ষামূলকভাবে এ চপার উড়ে বেড়িয়েছে। তাতে দেখা গেছে, উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন চীনা ড্রোনকে যেমন অনায়াস দক্ষতায় আঘাত হানতে পারছে, তেমনই মাটির ওপর দিয়ে চলা ট্যাঙ্ককেও ছিন্নভিন্ন করে দিতে সামর্থ্যক প্রচণ্ড। কারণ এতে রয়েছে ‘এয়ার টু সারফেস অ্যান্টি ট্যাঙ্ক মিউনিশন্স’। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ৯৫টি অ্যাটাক হেলিকপ্টার যুক্ত হবে। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি ভারতীয় বিমানবাহিনীও ৬৫টি যুদ্ধ হেলিকপ্টার পাবে। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পে ভারতীয় বিমানবাহিনীর জন্য প্রাথমিক বরাদ্দ হয়েছে সাড়ে তিন হাজার কোটি রুপি। প্রচণ্ড হেলিকপ্টারে ৭০ মিলিমিটারের ১২-১২ রকেটের দুটি প্যাড লাগানো আছে।
এ ছাড়াও হেলিকপ্টারটির ‘নোজ’ বা একেবারে সামনের অংশে একটি ২০ মিলিমিটারের বন্দুক লাগানো আছে। এ বন্দুক ১১০ ডিগ্রির মধ্যে যে কোনো নিশানায় গুলি চালাতে সক্ষম। প্রচণ্ড হেলিকপ্টারে ফ্রান্স থেকে বিশেষভাবে আনানো ‘মিস্ট্রাল’ এয়ার টু এয়ার বা আকাশ থেকে আকাশে আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র এবং আকাশ থেকে মাটিতে আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র মজুত আছে। এ হেলিকপ্টারটি এতটাই আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন যে, পাইলট বা হেলিকপ্টার চালক ককপিটে বসেই সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
মন্তব্য