মোর্শেদ আলম, কক্সবাজার
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার শেষ দিন বিজয়া দশমীতে লাখো মানুষের অংশগ্রহণে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের লাবণি পয়েন্টে দেবী দুর্গাকে বিসর্জন দেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালন করেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। তবে হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশাপাশি প্রতিমা বিসর্জনে দেখা গেছে দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ সব সম্প্রদায়ের মানুষকে।
বুধবার (৫ অক্টোবর) বিকাল ৩টার দিকে প্রতিবারের মতো কক্সবাজার জেলা পূজা উৎযাপন পরিষদের উদ্যোগে ও কক্সবাজার পৌরসভার সহযোগিতায় এবারও সমুদ্র সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের উন্মুক্ত মঞ্চে জেলা পূজা উৎযাপন কমিটির সভাপতি এ্যাডভোকেট বাবু উজ্জল করের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বেন্টু দাশের সঞ্চালনায় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপ-মন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন, সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ, পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম , র্যাব ১৫ এর অধিনায়ক খায়রুল ইসলাম সরকার। কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি উজ্জল কর জানান, দেশের সবচেয়ে বড় প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান এটি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছরও এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ লাখো মানুষের সমাগম হয়েছে।
জানা গেছে, গত ১ অক্টোবর থেকে শুরু হয় শারদীয়া দূর্গাপুজা। ১ অক্টোবর ষষ্টী, ২ অক্টোবর সপ্তমী, ৩ অক্টোবর অষ্টমী, ৪ অক্টোবর নবমী ও ৫ অক্টোবর দশমীর মধ্যদিয়ে আজ সমাপ্ত হচ্ছে ৫ দিনব্যাপী শারদীয়া উৎসব। জেলায় প্রতিমাপুজার সংখ্যা ছিল ১৪৮টি ও ঘটপুজার সংখ্যা ছিল ১৫৮টি।
জেলা পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বেন্টু দাশ জানান, কক্সবাজারে সদর উপজেলায় ২৮টি, ঈদগাঁও উপজেলায় ২৬টি, কক্সবাজার পৌরসভায় ২১টি, রামু উপজেলায় ৩২টি, চকরিয়া উপজেলায় (চকরিয়া পৌরসভাসহ) ৯২টি, পেকুয়া উপজেলায় ৯টি, কুতুবদিয়া উপজেলায় ৪৫টি, মহেশখালী উপজেলায় (মহেশখালী পৌরসভাসহ) ৩১টি, উখিয়া উপজেলায় (রোহিঙ্গা ক্যাম্প সহ) ১৬টি, টেকনাফ উপজেলায় ৬টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া। শেষ অনুষ্ঠান হয়েছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে। এখানে জেলার বিভিন্ন মন্ডপ থেকে প্রতিমা এনে বিসর্জন দেয়া হয়েছে ।
জেলার রামু, উখিয়া, টেকনাফ, সদর, ঈদগাহ, চৌফলদন্ডী ছাড়াও নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে শোভাযাত্রা সহকারে প্রতিমা আসতে শুরু করে। প্রতিমায় ভরে যায় সমুদ্রসৈকতের অনুষ্ঠানস্থল। লাবণি পয়েন্টে বিকাল ৩টা থেকে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ। বিকাল প্রায় ৫টা পর্যন্ত সৈকতের বালুচরে রাখা দুর্গা প্রতিমা ঘিরে চলে ভক্তদের শেষ আরাধনা। শুধু তাই নয়, নাচে-গানে এক অন্যরকম আনন্দমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয় বিশ্বের দীর্ঘতম এ সৈকতে। অনুষ্ঠানকে ঘিরে সমাগম ঘটে পর্যটকসহ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লাখো মানুষের। আয়োজকরা জানান, শুধু সৈকতের লাবণি পয়েন্টে বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা শতাধিক প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে। একই সময়ে কক্সবাজারের রামুর বাঁকখাল নদী, চকরিয়ার মাতামুহুরী, টেকনাফের সাগর ও নাফনদী, উখিয়ার ইনানী সৈকত এবং রেজুনদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। রামু ও চকরিয়ায় পৃথক প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, তিন স্তরে নিরাপত্তা জোরদারের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব শেষ হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তিমূলক পোস্ট, মন্তব্য ও ছবি আপলোড করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার আশংকায় সকল অপপ্রচার রোধে জেলা পুলিশ, কক্সবাজারের একটি বিশেষ টিম সার্বক্ষণিক সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং এ দায়িত্ব পালন করেছে।শুধু সৈকত এলাকায় প্রায় কয়েকশ ফোর্স মোতায়েন করা হয়। যানজট নিরসনে সৈকতের কলাতলী থেকে আশপাশের সড়কগুলোতে ট্রাফিক পুলিশের বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়।
মন্তব্য