বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
 

অবশেষে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে নাসিম ওসমান সেতু, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ

কণ্ঠস্বর ডেস্ক, ঢাকা
প্রকাশ: ৭ অক্টোবর ২০২২

ফাইল ফুটেজ

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি: মোঃ ইমরান হোসেন তালহা,

দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সোমাবার উদ্বোধন হতে যাচ্ছে নাসিম ওসমান সেতু সোমবার এ, সম্পূর্ণ দৃশ্যমান হয়েছে নারায়ণগঞ্জের তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু। ইতোমধ্যেই সরকার প্রয়াত সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম নাসিম ওসমানের নামে এই সেতুটি নামকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেতুটি চালু হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাড়কের সঙ্গে পদ্মা সেতুর দূরত্ব কমবে ৯ কিলোমিটার। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ শহরের সঙ্গে মেলবন্ধন তৈরি হবে বন্দর উপজেলার। বেগবান হবে এ অঞ্চলের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের অগ্রগতি।

নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে বন্দর উপজেলাকে আলাদা করে রেখেছে শীতলক্ষ্যা নদী। প্রতিদিন নৌকা ও ট্রলারে ভোগান্তি নিয়ে নদী পার হন এ অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ।

স্থানীয়রা জানান, সিটি করপোরেশন ও সংসদ নির্বাচনগুলোর আগে এই সেতুকেই প্রধান ইস্যু বানানো হতো বৈতরণী পার হওয়ার জন্য। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলই সেতুর ইস্যুতে জোর দিত জনমত টানার জন্য। ১৯৯১ সাল থেকে পরের সংসদ নির্বাচনগুলোতে (১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮) নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর ও বন্দর) আসনের প্রার্থীরা প্রায় প্রত্যেকেই নির্বাচনি প্রচারণায় শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু গত ২৫ বছরেও সেই সেতু দৃশ্যমান হয়নি।

নারায়ণগঞ্জের অবহেলিত জনপদ হিসেবে শীতলক্ষ্যার পূর্ব পাড় বন্দরকে অনেক সময় উল্লেখ করা হয়। বন্দর উপজেলা প্রশাসনের ওয়েব পোর্টাল থেকে জানা যায়, এখানে মোট জনসংখ্যা ৩ লাখ ১২ হাজার ৮৪১ জন। তবে সেখানে রয়েছে শতফুট চওড়া সড়ক, পর্যাপ্ত স্ট্রিট লাইট, ড্রেনেজ ব্যবস্থা সহ আধুনিক নাগরিক সুযোগ-সুবিধা। আক্ষেপ ছিল শুধু সেতুর জন্য। তবে অবশেষে গত ৮ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবের অর্থায়নে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সঙ্গে চীনা কোম্পানি সিনো হাইড্রো করপোরেশন লিমিটেডের সেতু নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এর আগে ২০১৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বন্দরবাসীকে শীতলক্ষ্যা সেতুর প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনি বৈতরণী পার হন বিএনপির সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম। তবে তিনি প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেননি। ১৯৯৬ সালের জুনে অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও একই ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আওয়ামী লীগ থেকে এমপি নির্বাচিত হন এস এম আকরাম। তবে তিনিও কিছুই করতে পারেননি।

বিগত বিএনপি সরকারের শেষের দিকে সেতু নির্মাণের কোনও সম্ভাব্যতা যাচাই ও ফান্ড জোগাড় না করেই ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবর ওই সময়ের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া শহরের নবীগঞ্জ খেয়াঘাট এলাকায় সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তবে সেটা ছিল নিছক নির্বাচনি প্রচারণা। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদও সেতুর আশ্বাস দিয়েছিলেন। ওই বছরের ২৯ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনের পর ২০১১ সালের ২০ মার্চ নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মদনগঞ্জ এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রধান অতিথি হয়ে এসেছিলেন তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন তিনি মদনগঞ্জে সমাবেশ করে দ্রুত সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন।

সেতুটির প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে ২০১৫ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারী নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই প্রকল্পে অর্থায়নকারী সংস্থা সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং বাংলাদেশ সরকার। বন্দর মদনগঞ্জ থেকে শহরের সৈয়দপুর প্রান্তে নির্মিত হয়েছে এ তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু, যার নামকরণ করা হয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিম ওসমান সেতু। নদীতে পাঁচটিসহ মোট ৩৮টি খুঁটির উপর এখন দাঁড়িয়ে আছে কাঙ্খিত সেই শীতলক্ষ্যা সেতু। এখন চলছে সংযোগ সড়কের কাজ ৬ লেন বিশিষ্ট এই সেতুর ৪ লেনে দ্রুত গতির যানবাহন এবং ২ লেনে চলবে রিকশা সাইকেল ভ্যানসহ স্বল্পগতির যানবাহন। সেতুর দুই পাশের রেলিং ঘেঁষে রয়েছে ফুটপাত। তাই পায়ে হেঁটে পাড়ি দেওয়া যাবে এই সেতু।

নারায়ণগঞ্জ ৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রয়াত নাসিম ওসমানের শেষ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল শীতলক্ষ্যা সেতু। একেএম নাসিম ওসমানের স্ত্রী ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য পারভিন ওসমান বলেন,শেষ নির্বাচনে নাসিম ওসমান নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে জনগনকে বলেছিলেন তিনি জয়ী হলে শীতলক্ষ্যায় সেতু করতে না পারলে তিনি আর নির্বাচন করবেন না। মৃত্যুর আগে তিনি এই সেতু নির্মানের জন্য সংসদে ভূমিকা পালনসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে দিনরাত পরিশ্রম করে এ প্রকল্পটি পাশ করান। কাজের উদ্বোধনের পর তিনি প্রয়াত হন। কিন্তু এই সেতু নির্মানের মধ্যদিয়ে তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ বাসির বহুদিনের প্রত্যাশা পূরণ হলো সেতুটি বাস্তবায়ন হওয়ায়। নাসিম ওসমানের নামে সেতুটির নামকরণ করায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন আমরা যেনো সব সময় আপনাদের পাশে থাকতে পারি। আমার ছেলে আজমেরী ওসমান এর জন্য দোয়া করবেন ও যেনো ওর বাবার মত সব সময় মানুষ এর পাশে থেকে সেবা করতে পারে।

মন্তব্য

পঠিতসর্বশেষ

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon