নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি,
অবশেষে বন্দরবাসীর স্বপ্নের তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর দ্বার উম্মোচন হচ্ছে। সোমবার (১০ অক্টোবর)দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। সেই লক্ষ্যে সব ধরণের প্রস্তুতি শেষ করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। উদ্বোধনের পরই যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে শীতলক্ষ্যা নদীর উপর নির্মিত বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম নাসিম ওসমান তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু। সেতুর উদ্বোধন ঘিরে উচ্ছাস আনন্দ বিরাজ করছে বন্দরবাসীর মধ্যে।
তবে সেতুর পুরো কাজ শেষ হলেও রোড মার্কিংসহ ফিনিশিংয়ের বেশ কিছু কাজ এখনও বাকি রয়েছে। তবে উদ্বোধনের জন্য ইতিমধ্যে সব ধরণের প্রস্তুতি শেষ করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।
প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি সেতুটি উদ্বোধন করলেও জেলা প্রশাসন ও জেলা সড়ক বিভাগ বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের ফরাজিকান্দা এলাকায় সেতুটির টোল প্লাজা প্রান্তে প্রজেক্টরের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানে যুক্ত হবেন জেলার সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, বন্দর উপজেলা প্রশাসন প্রমুখ।
সংশ্লিষ্টদের তথ্যমেত, ১ হাজার ২৩৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৪৫৬ কোটি টাকা। নদীর গভীরে পাঁচটিসহ মোট ৩৮টি খুঁটির উপর নির্মান করা হয়েছে সেতুটি। এটি চালু হওয়ার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাড়কের সঙ্গে পদ্মা সেতুর দূরত্ব কমবে অন্তত নয় কিলোমিটার। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ শহরের সঙ্গে বন্দর উপজেলার বাসিন্দাদের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক সহজ হবে। মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর হয়ে শ্রীনগরের ছনবাড়ি পয়েন্ট দিয়ে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা সুপার এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে পদ্মা সেতুর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে এই সেতু। ফলে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর ও সাইনবোর্ডসহ কমবে রাজধানীর যানজটও অনেক কমে যাবে।
এর পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের মধ্যে যোগাযোগের পথ সহজ হওয়ার পাশাপাশি পণ্য পরিবহন ব্যবস্থারও উন্নতি হবে। এছাড়া পদ্মা সেতু দিয়ে চট্টগ্রামগামি দক্ষিণাঞ্চলের যানবাহনগুলো সেতু ব্যবহার করলে সময় বাঁচবে দুই ঘন্টা।
নারায়ণগঞ্জ শহর ও বন্দর উপজেলার মাঝখানে বয়ে যাওয়া শীতলক্ষ্যা নদীর মদনপুর থেকে মদনগঞ্জ পর্যন্ত তেরোটি খেয়াঘাট দিয়ে প্রতিদিন নৌকা, ট্রলারে ভোগান্তি ও ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হন শহর-বন্দরের দুই লক্ষাধিক মানুষ। জনগণের ভোগান্তি দূর করতে ২০১৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী এই সেতুর নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শীতলক্ষ্যার উপর মদনগঞ্জ থেকে সৈয়দপুর পর্যন্ত নির্মান করা হয় নারায়ণগঞ্জবাসির এই স্বপ্নের সেতুটি। যার নামকরণ করা হয় শহর-বন্দর আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম নাসিম ওসমানের নামে। ছয় লেন বিশিষ্ট এই সেতুর চার লেনে দ্রুত গতির ভারী যানবাহন এবং নির্ধারিত দুই লেনে চলবে রিকশা সাইকেল ভ্যানসহ স্বল্পগতির ছোট যানবাহন। দুই পাশে রেলিং ঘেঁষে মানুষের চলাচলের জন্য ফুটপাত রাখায় পায়ে হেঁটেও পার হওয়া যাবে এই সেতু। দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হওয়ায় খুশি শীতলক্ষ্যার দীর দুই তীরের বাসিন্দারা।
সেতুটির ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের সহধর্মিনী পারভীন ওসমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ আমরা সেতুটি দ্রুত পেয়ে যাচ্ছি। আমার স্বামীর নামে সেতুটির নামকরণ করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমি ও আমার পরিবার কৃতজ্ঞ। তবে খুব কষ্ট হচ্ছে, আজকে তিনি (নাসিম ওসমান) নেই। তিনি থাকলে অনেক।খুশি হতেন। এই সেতুটি তার স্বপ্ন ছিল।
পারভীন ওসমান বলেন, চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত এই নেতা জাতীয় সংসদের অধিবেশনে জীবনের শেষ বক্তব্যেও বলেছিলেন এবার শীতলক্ষ্যা সেতু করতে না পারলে আর নির্বাচন করবেন না। মহান আল্লাহ তাঁর স্বপ্ন পূরণ করেছেন। নিশ্চই তাঁর আত্মা শান্তি পাবে।
রবিবার (৯ অক্টোবর).সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সেতুর দুই পাশে রঙ বেরংয়ের পতাকা লাগিয়ে সাজানো হয়েছে। সেতুর মূল কাজ শেষ হলেও রোড মার্কিং, এ্যাপ্রোচ রোড ও মাইনর ওয়ার্কসহ আনুষাঙ্গিক কিছু কাজ এখনও বাকি রয়েছে।
এ ব্যাপারে সেতুর প্রকল্প প্রকৌশলী মো: ওসমান গনি জানান, উদ্বোধনের পর যান চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেয়া হলেও এই কাজগুলো চলমান থাকবে এবং এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ করার ব্যাপারে তিনি আশাবাদি।
২০২০ সালে সেতুটির নির্মান কাজ শেষ করার কথা থাকলেও করোনা মহামারি কারণে বিদেশ থেকে নির্মান সরঞ্জাম সঠিক সময়ে না পৌঁছায় দুই বছর পিছিয়ে যায়। এই সেতুর মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের সাথে ঢাকা, মুন্সীগঞ্জসহ চট্রগ্রাম ও সিলেট বিভাগের মধ্যে যোগাযোগের দূরত্ব অনেক কমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, স্থানীয় সংসদ সদস্য (নারায়ণগঞ্জ-৫ শহর-বন্দর আসনের) সেলিম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান এবং জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ বেলা এগারোটায় অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত থাকবেন।
মন্তব্য