রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫
 

‘চেতনা’ চার হাজার গ্রাহকের শত কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা

JK0007
প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২২

---

নিজস্ব প্রতিবেদক,

চার হাজার গ্রাহকের শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায় চেতনা বহুমুখী সমবায় সমিতিতে জড়িতরা।

সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুরে মানববন্ধন করেছে প্রতারণার শিকার গ্রাহকরা। এ বিষয়ে ৫৬০ জন ভুক্তভোগী র‌্যাব-৪ বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।

লাখে ১২০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা করে মুনাফা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ‘চেতনা বহুমুখী সমবায় সমিতি লি.’-এ বিভিন্ন সঞ্চয়ী প্রকল্প, ডিপিএস, এফডিআর, পেনশন পলিসি করেছে হাজারো গ্রাহক। শুধু তাই নয়, ফ্ল্যাট, ডায়াগনস্টিক, স্কুল, হোটেল ব্যবসায় লগ্নি করার প্রলোভন দেখিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। শুরুতে কিছুদিন লভ্যাংশ দিয়ে বিশ্বাস অর্জন করত। এরপর শুরু হতো তালবাহানা।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত ও গোয়েন্দা কার্যক্রমের ভিত্তিতে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় লাপাত্তা ‘চেতনা বহুমুখী সমবায় সমিতি লি.’ এর সভাপতি মো. জাকির হোসেন (৫৪) ও সাধারণ সম্পাদককে মশিউর রহমানকে (৪২) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৪ এর একটি দল।

র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, চেতনা বহুমুখী সমবায় সমিতির অফিস থেকে ভর্তি ফরম, ঋণ গ্রহীতার ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র, ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের জীবন বৃত্তান্ত, লিফলেট, সিল, বিভিন্ন নামে সঞ্চয় পাশ বই উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ৩৭ বছর আগে এই সমিতি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর-৮৩। প্রথমদিকে তারা স্থানীয় বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও স্বল্পআয়ের মানুষকে অধিক মুনাফায় সঞ্চয় ও ক্ষুদ্রঋণের প্রতি আকৃষ্ট করত। তারা চেতনা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের ব্যানারে আরও বড় পরিসরে কাজ শুরু করে।

তারা টার্গেট করে মিরপুর এলাকার মধ্যবিত্ত, গার্মেন্টসকর্মী, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, অটোচালক, সবজি ব্যবসায়ী, ফল ব্যবসায়ী, গৃহকর্মী ও নিম্নআয়ের মানুষকে উচ্চ মুনাফা দেওয়ার আশ্বাসে সঞ্চয়ী পলিসি, এফডিআর, ডিপিএস, পেনশন পলিসি, শিক্ষা পলিসি, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী পার্টনার পলিসিতে আকৃষ্ট করত।

---

এমন চটকদার ১৮ থেকে ৩০ শতাংশ হারে মুনাফা এবং ফিক্সড ডিপোজিটের ক্ষেত্রে ৩/৫ বছরের দ্বিগুণ মুনাফা দেওয়ার আশ্বাসে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের অনেকে সমিতিতে টাকা জমাতেন। অনেকে নিজের পেনশনের টাকা, গ্রামের ভিটাবাড়ি বিক্রি করা টাকা, বিদেশ থেকে কষ্ট করে অর্জিত টাকা এ সমিতিতে উচ্চ মুনাফা লাভের আশায় জমা রাখা শুরু করেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে, গত তিন-চার মাস আগে হঠাৎ অফিসে তালা দিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। গ্রাহকের বিনিয়োগ করা অর্থে তারা বিভিন্ন জায়গায় নামে-বেনামে জায়গা-জমি কেনা, বহুতল ভবন নির্মাণ, বিভিন্ন ছোট-বড় প্রতিষ্ঠান করেছেন বলে র‌্যাবের অনুসন্ধানে জানা গেছে।

ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, কমিটির সভাপতি জাকির হোসেন খান বি.কম পাস করে একটি ফার্ম থেকে ১৯৯৫ সালে চার্টাড অ্যাকাউন্টেন্ট সার্টিফিকেট সম্পন্ন করেন। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত একটি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০০৬ সাল থেকে মিরপুর-১০ এলাকায় ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন।

১৯৯৩ সালে তিনি চেতনা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডে সাধারণ সদস্য হিসেবে যোগদান করে বর্তমানে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার নামে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে একাধিক ফ্ল্যাটসহ নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। তিনি সমিতির কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বও পালন করছিলেন।

গ্রেপ্তার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান ঢাকার একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.কম সম্পন্ন করেন। তিনি ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ঢাকার একটি কলেজে শিক্ষকতা করেন। পরে ২০০৩ সাল থেকে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি ২০২১ সালে সমিতির সহ সভাপতি এবং গত জানুয়ারি থেকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। গুলশান-নিকেতনে নিজের ফ্লাটে বসবাস করেন। এছাড়া তার নামে-বেনামে অনেক সম্পদ রয়েছে বলে দাবি করেন র‌্যাব-৪ সিও।

চেতনা বহুমুখী সমবায় সমিতির বিনিয়োগ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আরও পাঁচটি নামসর্বস্ব কোম্পানি পরিচালনা করছিলেন অভিযুক্তরা। সেগুলো হলো— চেতনা টাওয়ার, চেতনা কুঠির, চেতনা মডেল একাডেমি, চেতনা ডায়াগনস্টিক ও হোটেল ব্লু বারশি।

সমিতির বর্তমান সম্পদের পরিমাণ সম্পর্কে ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, প্রতিষ্ঠানের নামে বর্তমানে মিরপুরের ৬০ ফিটে চেতনা টাওয়ারে চারটি ফ্ল্যাট, বর্তমান অফিস চেতনা কুঠিরে তিনটি ফ্লোর, রূপনগরে একটি ফ্ল্যাট, মোহাম্মদপুরে একটি ফ্ল্যাট, মিরপুর-১০ এ একটি একটি দোকান, চেতনা মডেল একাডেমি এবং চেতনা ডায়াগনস্টিক রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ৩০ কোটি টাকা। ঢাকা জেলার সমবায় কর্মকর্তার অডিট অনুযায়ী, গত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী সমিতির ফান্ডে মাত্র ৫৪ লাখ টাকা জমা রয়েছে এবং বিপরীতে রয়েছে ৭০ কোটি টাকার বেশি ঋণ। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ আইনানুগ পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

মন্তব্য

সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon