বাংলাদেশ প্রতিনিয়ত হিমসিম খেয়ে চলেছে নিজস্ব জনসংখ্যার বৃদ্ধি এবং ঘনবসতিপূর্ণ সমাজ গড়ে উঠার দেশ হিসেবে । বিভিন্ন বিভাগ, জেলা, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এক হুমকির ন্যায় হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্তমান সময়ে । জনসংখ্যা বৃদ্ধির সমানুপাতিক হারে বেড়ে চলেছে জনগন কর্তৃক সৃষ্ট দূষণ । বেড়ে চলেছে প্রতিনিয়ত বর্জ্য পদার্থ এর পরিমাণ । তারই ধারাবাহিকতায় দেশের অন্যতম বিভাগ ময়মনসিংহ বর্তমান সময়ে রেড জোন এ পরিণত হতে চলেছে অন্যান্য অঞ্চলের মতন । বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনার ঘাটতি অনেক ভাবেই জীবনযাত্রার মান নষ্ট করে চলেছে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন জনগণের ।
ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন (মসিক) বাংলাদেশের ময়মনসিংহের একটি স্থানীয় সরকার সংস্থা । ২০১৮ সালের ২ এপ্রিল ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন ঘোষণা করা হয় । শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যে ঘেরা ময়মনসিংহ বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিভাগ নামে পরিচিতি নেয় ২০১৫ সালে। উন্নয়নশীলতার ধারাবাহিকতায় প্রতিনিয়ত নিজের রূপ রেখা পালটে নিয়ে যাচ্ছে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন । বর্তমানে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন এর আয়তন ২১.৭৩ বর্গকিলোমিটার। ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন এর মোট জনসংখ্যা ৮ লাখ ১৩ হাজার ১৪১ জন । জনসংখ্যার ঘনত্ব যেখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৮ হাজার ৯২২ জন। বিশাল জনসংখ্যার আবাসস্থল গড়ে উঠার অন্যতম কারণ হচ্ছে গ্রামের অধিকাংশ মানুষের শহরমুখী হওয়া । সেই সাথে দিনের পর দিন বর্জ্য উৎপাদন এর হার বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিনিয়ত । ময়মনসিংহ সিটিতে অতিরিক্ত পরিমাণ জনসংখ্যার চাপে মানব সৃষ্ট বর্জ্য পদার্থ এর পরিমান লাগামহীন বেড়েই চলেছে যা দেশ ও দশের জন্য ক্ষতিকর । সুষ্ঠ্যু ব্যবস্থাপনা যেখানে অতিব প্রয়োজন বলে দাবী এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারদের । সাম্প্রতিক সময়ে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের এক প্রকল্পে উঠে এসেছে – ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও মেশিনারিজ সরবরাহ করার লক্ষ্যে এক বিশাল অর্থের বাজেট । ১৯ এপ্রিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির ( একনেক ) সভায় জানানো হয়েছে এই প্রকল্পের কথা । যার মেয়াদকাল দুই বছরের আওতাধীন হবে। এবং সিটি কর্পোরেশন হয়ে উঠবে এক নতুন রূপ রেখা অর্জিত সিটি কর্পোরেশন ।
কিন্তু বর্তমান সময়ে উল্লেখ্য যে , ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন নগরীতে প্রবেশের জন্য জেলার উত্তরাঞ্চলের মানুষকে বর্জ্যের তীব্র গন্ধে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে । নগরীর শম্ভুগঞ্জ সেতু সংলগ্ন মহাসড়কের পাশে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের ডাম্পিং এলাকায় ফেলা হতো বর্জ্য। এসব স্তুপকৃত বর্জ্য তীব্র গন্ধ সৃষ্টি করে এবং ডাম্পিং স্টেশন থেকে বর্জ্য ও বর্জ্য গন্ধ গড়িয়ে এসে চরম জনভোগান্তি তৈরি করছে প্রতিনিয়ত । জন–সচেতনতার অভাবে রাস্তায় বা ড্রেনে ফেলা নানান বর্জ্য দূষিত করছে জীবনযাত্রার মান ও পরিবেশ কে।যেখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নতুন রূপ রেখাই পারে সার্বিকভাবে মানুষের দীর্ঘ দিনের ভোগান্তির অবসান ঘটাতে। ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনে একদিনে বর্জ্যরে পরিমান প্রায় ৪০০ মেট্রিকটন । যা অন্যান্য অঞ্চলের সাথে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনকে বানিয়ে তুলেছে রেড জোনে । সিটি কর্পোরেশন এর ডাম্পিং স্টেশন এলাকাটি ছোট হওয়ায় এবং মূল মহাসড়ক থেকে ডাম্পিং স্টেশনের ভেতরে নিয়ে বর্জ্য ফেলার মতন ব্যবস্থা না থাকার কারণে ভোগান্তির শেষ হচ্ছে না । ফলে জনগণের সাথে নিজস্ব রূপ হারাচ্ছে পরিবেশ। পরিবেশ রক্ষার্থে এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারদের (পরিবেশ প্রকৌশলী) প্রয়োজনীয়তা বর্তমানে এক অলংকৃত চাহিদা। ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারদের রয়েছে ব্যাপক প্রয়োজনীয়তা । মাটি, পানি, বায়ু এই তিন উপাদান রক্ষার্থে প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ার রা । ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারদের হাত ধরে আসতে পারে এক পরিচ্ছন্ন ময়মনসিংহ নগরী । দৈনিক উৎপাদিত হও্য়া ৪০০ মেট্রিক টন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারদের প্রয়োজনীয়তা আসতে পারে নানান ধাপে।
বর্জ্য সংরক্ষনে এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ার রা বলছেন আবর্জনা সংগ্রহ করে তা নির্দিষ্ট স্থানে রাখার জন্য । যা পরিবেশের জন্য মঙ্গলদায়ক । উৎসের উপর ভিত্তি করে বর্জ্যকে পৃথক করতে হবে । এবং আলাদাভাবে সংরক্ষণের জন্য গৃহস্থালি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বর্জ্যের উপাদানের উপর ভিত্তি করে ডাস্টবিন এর নিশ্চিতকরন। ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের অনেক ময়লা রাস্তায় খোলা অবস্থায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায় । তা ডাস্টবিনে ফেলা এবং ডাস্টবিনের ঢাকনা নিশ্চিত করা। ফলে ময়লা ও ময়লার ভেতরকার গন্ধ পরিবেশে ছড়িয়ে যেতে পারবে না। পরিবেশের ফেলনা বস্তু পুনরায় ব্যবহার করার নানান রকম ইতিহাসের সাক্ষী রেখে চলেছে জনগণ ।
বর্জ্য পূণর্ব্যবহারে বর্জ্যের সংরক্ষণের উপর ভিত্তি করে বর্জ্য পচনশীল হয় প্রায় সকল বর্জ্যের ৬০ভাগ। পচনশীল বর্জ্যকে সরক্ষণ করে কম্পোস্ট বা জৈব সার তৈরীর মাধ্যমে কৃষিকাজে ব্যবহার করে তা থেকে নানান ভাবে লাভবান হওয়া যায়। এবং অপচনশীল বর্জ্য পদার্থ পচনশীল না হলে রিসাইক্লিং এর আওতায় নিয়ে এসে তা পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করে তোলা । ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের জন্য কম্পোস্টিং এবং বর্জ্য পদার্থ পুনরায় ব্যবহার করার উপযোগী করে তোলা পরিবেশের জন্য এক স্বপ্নের হাতছানির মতন । এবং অত্যাধিক বর্জ্য পদার্থ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বর্জ্য রিসাইক্লিং করার লক্ষ্যে বর্জ্য পদার্থ রিসাইক্লিং কারখানা স্থাপন করতে হবে।
প্লাস্টিক বর্জ্যে এনভায়নমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারদের নতুন রুপ রেখায় ড্রেন বা পানি অতিবাহিত হবার যেকোনো মাধ্যমে প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে নষ্ট হওয়া পানির প্রবহমানতা যুগ যুগ ধরে দৃষ্টান্ত মূলক । প্লাস্টিকের চাহিদা জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়েই চলেছে । এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ার দের চিন্তানুযায়ী যেখানে প্লাস্টিকের বিকল্প অনেক সমাধান রয়েছে, প্লাস্টিক পুনব্যবহার বা প্লাস্টিক ব্যবহারে পরিবেশ ও জনপগণের ক্ষতির দিক গুলো সুস্পষ্ট সেখানে প্লাস্টিক কে না বলাটাই মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনে । প্লাস্টিক পচনশীল না এবং পরিবেশ ও মানব জীবনে হুমকিস্বরূপ। প্লাস্টিকের মাঝে থাকা সিন্থেটিক জৈব যৌগ যা শত শত বছরেও পচনশীল হয়ে উঠে না । ২০০২ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশে Single Plastic Ban নিয়মে জারি হয় আইন । ব্যবহার করা শুরু হয় কাগজের ঠোঙ্গা সহ কাগজের নানান দ্রব্যাদি। যা কালের পরিক্রমায় আবারো দিক হারিয়েছে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনে । আটকে দিচ্ছে জীবন চক্রকে , নষ্ট করে চলেছে পরিবেশ ।
বর্জ্য নিষ্কাশনে এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ার বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য এবং পরিবহনের জন্য জানা দরকার ময়লার স্তূপের ঘনত্ব। ময়লা বহণকারী প্রতিটি গাড়ির থাকে নির্দিষ্ট ভারবহণ ক্ষমতা। গাড়িগুলো আকারে সীমাবদ্ধও থাকে। কোন জায়গা থেকে প্রতিদিন আনুমানিক কি পরিমাণ বর্জ্য বহণ করে ল্যান্ডফিল বা ডাম্পিং এর কাছে নিয়ে যাওয়া হয় তা গড় হিসেব করে বর্জ্য সংগ্রহ করতে নির্দিষ্ট আকারের ও ক্ষমতার গাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত নিয়ন্ত্রকরা। যা এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ার দের একটি বিষয় নিয়ন্ত্রণে।
এবং কোনো কোনো বর্জ্য কে চেপে আয়তন কমিয়ে ফেলার যন্ত্র থাকে। এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকারী মাঝে মাঝে স্তূপের ঘণত্ব বা ওজন-আয়তনের উপর ভিত্তি করে শ্রমীকের মূল্য পরিশোধ করে। Recycle, Reuse, Reduce এই মাধ্যমগুলো বর্জ্য নিষ্কাশণের জন্য এক অনন্য ভূমিকা রাখে। সচেতনতার এক দারূণ রূপ বর্জ্য আবার ব্যবহার এর উপযোগী হয়ে উঠলে।
পরিবেশ রক্ষার্থে প্রতিনিয়ত জ্ঞান অর্জন করে চলেছে সকল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ার , বর্তমান পরিবেশ কে সুস্থ্য করার লক্ষ্যে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারদের জন্যে । ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্যগুলোর সঠিক দিক নির্দেশনা, অযথা দুর্গন্ধ ছড়ানো বন্ধ করা , বর্জ্য বৃদ্ধির হ্রাস ঘটানোর লক্ষ্যে নানান নিত্য নতুন উদ্যাগ এর মাধ্যমে এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারদের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম । বাসা-বাড়ি, কর্মস্থ্যলে ডাস্টবিন বা ময়লাক ফেলবার নির্দিষ্ট স্থান ব্যবহার করা। বর্জ্য পরিবহণকারী গাড়ির সংখ্যা বাড়ানো বা বর্জ্যের পরিমাণ অনুযায়ী গাড়ির আকার-আয়তন নির্ধারণ করা। প্রতিদিনের বর্জ্য প্রতিদিন বর্জ্য পরিবহণ গাড়ির মাধ্যমে ডাম্পিং এলাকায় পাঠিয়ে দেওয়া পুনরায় ব্যবহার করা যায় এমন বর্জ্য না ফেলে তা পুনরায় ব্যবহার এর উপযোগী করে তোলা। 3R ( Recycle, Reuse, Reduce ) এর আওতাধীন করা যায় এমন বর্জ্য পদার্থ চিহ্নিত করে রাখা । পচনশীল বর্জ্য পদার্থ দিয়ে কম্পোস্ট বা জৈব সার বানিইয়ে তা কৃষিকাজে ব্যবহার করা । যেখানে সেখানে বর্জ্য ছুড়ে না ফেলে তা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা। বিশেষ করে রাস্তাঘাট, ড্রেন, বা আনাচে-কানাচে না ফেলা। প্লাস্টিকের ব্যবহার মাত্রা কমিয়ে প্লাস্টিক পুনব্যবহার করার উপযোগী করে তোলা । জনসচেতনতা সৃষ্টিতে এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ার দের কর্তৃক কাউন্সিল এর আয়োজন করা। সময়ের পরিক্রমায় বাড়ছে জনসংখ্যা , বাড়ছে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য স্তূপেরর সংখ্যা, বাড়ছে প্লাস্টিকের অনিয়ম ব্যবহার । তারই পরিপ্রেক্ষিতে এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ার দের কর্তৃক নানান সমাধানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা হয়ে উঠবে এক অন্যরকম গতিশীল সুস্থ্য নগরীতে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন । যা আমাদের দেশ ও দশের জন্য ভালো । সার্বিক বিবেচিনা করে , প্রতি স্তরের জনগণের সাহায্যে একদিন বর্জ্য পদার্থ সঠিক ব্যবস্থাপনায় আনার লক্ষ্য বাস্তবায়নে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন প্রথম সারির নগরীতে রূপ নিবে।
মন্তব্য