উগ্র ডানপন্থী নেতা জর্জিয়া মেলোনি শুক্রবার ইতালির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। তিনি হলেন, ইতালির প্রথম নারী সরকার প্রধান। শনিবার দেশটির স্থানীয় সময় সকালে নতুন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বেনিতো মুসোলিনের পর প্রথম পোস্ট-ফ্যাসিস্ট ‘ব্রাদার্স অব ইতালি পার্টি’ ২৫ সেপ্টেম্বরের আইনসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল কিন্তু সরকার গঠনের জন্য দলের বাইরের জোটের সমর্থনের প্রয়োজন ছিল। ব্রাদার্স অব ইতালি পার্টি ইউরোসেপ্টিক (ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্ষমতা বৃদ্ধির বিরোধী) এবং অ্যান্টি-ইমিগ্রেশন বা অভিবাসন বিরোধী।
মেলোনির নিয়োগ ইউরোজোনের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং ব্রাদার্স অব ইতালি পার্টির জন্য একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এই দল আগে কখনো সরকারে ছিল না। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নাম ঘোষণার পরপরই রোম থেকে ৪৫ বছর বয়সী মেলোনি তার মন্ত্রীদের নাম ঘোষণা করেছেন। মেলোনির ব্রাদার্স অব ইতালি পার্টি গত মাসে ২৬ শতাংশ ভোট জিতেছে। যেখানে তার মিত্র ফোরজা ইতালিয়া এবং অতি-ডানপন্থী লীগ যথাক্রমে আট এবং নয় শতাংশ ভোট পেয়েছে। তিনি ছয় নারীসহ তার ২৪ জন মন্ত্রীর তালিকা প্রকাশ করেছেন। ইতালির অংশীদারদের আশ্বস্ত করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। তিনি অর্থমন্ত্রী হিসেবে জিয়ানকার্লো জিওরগেত্তির নাম ঘোষণা করেছেন। যিনি মারিও দ্রাাঘির আগের সরকারের অধীনে কাজ করেছিলেন।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাবেক মন্ত্রী জিওরগেত্তিকে মাত্তিও সালভিনির লিগের আরও চড়া মধ্যপন্থী এবং ইউরোপ পন্থী সদস্যদের একজন হিসাবে বিবেচনা করা হয়। মেলোনি ফোরজা ইতালিয়ার প্রাক্তন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট তাজানিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও মনোনীত করেছেন। সালভিনি উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং অবকাঠামো ও পরিবহনমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এই নিয়োগটি সম্ভবত সালভিনিকে হতাশ করবে, যিনি ২০১৮ এবং ২০১৯ সময়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। তিনি আবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের আশা করছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদটি তার পরিবর্তে একজন টেকনোক্র্যাট মাত্তিও পিয়ান্তেডোসিকে দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে নেতৃত্ব দেওয়ার আগে রোববার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দ্রাঘির থেকে মেলোনির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য একটি আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকে ইউক্রেনের প্রতি মেলোনির প্রবল সমর্থন নিয়ে তার দুই জোটের অংশীদারদের সাথে মতবিরোধের কারণে জোটবদ্ধ সরকার গঠনের ক্ষেত্রে ছায়া পড়েছিল। ফোরজা ইতালিয়া এবং লীগের নেতারা উভয়কেই মস্কোর কাছাকাছি বলে মনে করা হয়।
ফোরজা ইতালিয়ার প্রধান, ইতালির প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বার্লুসকোনির একটি রেকর্ডিং ফাঁস হয়েছিল। যিনি মস্কোর সাথে তার উষ্ণ সম্পর্কের বিষয়ে কথা বলেছেন এবং ইউক্রেনের যুদ্ধের জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে দোষারোপ করেছেন। তার অন্য জোটের অংশীদার সালভিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের দীর্ঘ দিনের ভক্ত এবং রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করেছেন। তার ইউরোসেপ্টিক অবস্থান সত্ত্বেও, মেলোনি ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবশিষ্ট অংশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ইউক্রেনের প্রতি তার সমর্থনের বিষয়ে দৃঢ় ছিলেন। মেলোনি বলেন, ‘আমি একটি স্পষ্ট এবং দ্ব্যর্থহীন বৈদেশিক নীতি লাইনের সাথে সরকারের নেতৃত্ব দিতে চাই।’ ‘ইতালি সম্পূর্ণভাবে, এবং তার মাথা উঁচু করে, ইউরোপ এবং আটলান্টিক জোটের (ন্যাটো) অংশ।’
মন্তব্য