২০১৭ সাল থেকে শাকিব-অপুর জীবন গল্পের আলোচনা চলার পর চলতি বছর আবার শাকিব-বুবলীর গল্প বেশ আলোড়ন তুলেছে। তাদের নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই জনমনে। নানা প্রশ্ন আর রহস্যের মধ্য দিয়েই এগোচ্ছে তাদের এই কৌতূহলোদ্দীপক জীবন চিত্রনাট্যের সিকোয়েন্স। শাকিব খান ও বুবলীর বৈবাহিক সম্পর্ক অটুট আছে নাকি বিবাহবিচ্ছেদ ঘটেছে- এমন প্রশ্ন বুবলী তাদের সন্তান নিয়ে আত্মপ্রকাশের পর থেকে সাধারণ মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। অথচ এই দুজনের কেউই খোলাসা করে বিষয়টি বলছেন না। যদিও গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বুবলী বলছেন, বিচ্ছেদের খবর নেহাতই গুজব এবং শাকিবকে নিয়ে তিনি সুখে সংসার করতে চান। কিন্তু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে শাকিব এ নিয়ে সরাসরি কিছু না বললেও পরোক্ষভাবে বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে কি নেই সেটা যারা সবকিছু দেখেও না দেখার এবং বুঝেও না বোঝার ভাণ করে আমি সময়মতো তা সবাইকে বুঝিয়ে দেব?’ এমন পরোক্ষ জবাব দিয়ে বিষয়টি নিয়ে রহস্য না করে সরাসরি জবাব চাইলে শাকিব বলেন, দেখেন, ‘অনেক সত্য চাইলেই বাচ্চাটার (পুত্র শেহজাদ খান বীর) স্বার্থে প্রকাশ করতে পারি না। কারণ বীর বড় হচ্ছে, আমি চাই না আগামীতে তার মনে এ নিয়ে কোনো বাজে প্রতিক্রিয়া তৈরি হোক। শাকিব খান কথোপকথনের একপর্যায়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা পেয়েছি দুটি সময়। প্রথমত. করেনাকালে যখন একাকী ছিলাম, দ্বিতীয়ত. আবারও যখন নিঃসঙ্গভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেছি তখন। আমি সেই দিনগুলোতে একাকী থাকায় নিজের জীবনের ফেলে আসা দিনগুলো নিয়ে হিসাব করার অফুরন্ত সময় পেয়েছিলাম। তখন নিজের পেছনের জীবনের হিসাবনিকাশ করতে গিয়ে দেখলাম, না বুঝে অনেক ভুল করে ফেলেছি। বেশির ভাগ ভুল করেছি ভুল মানুষের সঙ্গে মিশে। মনে হচ্ছে সেই ভুলেরই খেসারত দিচ্ছি এখন। তাই জীবনের বাকি দিনগুলোতে আর কোনো ভুল মানুষের সঙ্গে মিশতে চাই না। আর কোনো ভুল করতে চাই না। ভুল করে মেশা সেই বাজে মানুষগুলোকে আর পাশে রাখতে চাই না। এখন থেকে শুধুই পজিটিভ ওয়েতে চলব। সৃষ্টিকর্তা আমাকে এমন উচ্চাসনে উপবিষ্ট করার এবং আমার দর্শক-ভক্তরা আমাকে আকাশসমান ভালোবাসা দেওয়ার পরও আমি কেন ভুল পথে চলে আজ আমার কর্ম ও ব্যক্তিজীবন নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি। এটিই এখন আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অনুশোচনা। শাকিব কথা বলতে বলতে একপর্যায়ে ভীষণ আবেগতাড়িত হয়ে ওঠলেও একসময় চোখের কোণে জমে ওঠা চিকচিকে অশ্রুবিন্দু মুছে নিয়ে আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে বলে ওঠেন, অনেক অপ্রাপ্তির মাঝেও আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি হলো আমার দুই প্রাণপ্রিয় সন্তান আবরাহম খান জয় ও শেহজাদ খান বীর। আমি আমার এ দুই আদরের সন্তান ও যেসব মানুষ, যারা আসলেই আমাকে মনেপ্রাণে ভালোবাসে, পছন্দ করে, তাদের নিয়েই আগামীর পথে এগোতে চাই। পূজা চেরির সঙ্গে এই নায়কোত্তমের সম্পর্কের কথা তুলতেই তিনি ক্ষোভে ফেটে পড়ে বলেন, যারা পূজাকে নিয়ে আমার বিরুদ্ধে গুজব ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই আমি আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি। এতদিন এসব দুষ্ট লোক, যারা নিজেদের স্বার্থে তাদের ইউটিউব আর ফেসবুক পেজের ভিউ বাড়াতে আমার সঙ্গে পূজাকে জড়িয়ে মিথ্যা কথা চাউর করেছে এবং পূজার সঙ্গে আমার বিয়ের প্রমাণ আছে বলে দাবি করেছে তারা এবার আইনের সামনে সেই প্রমাণ তুলে ধরুক, আমি সেটিই চাই। আর প্রমাণ দিতে না পারলে আইন তাদের কঠোর শাস্তি দেবে বলেই আমি জানি। শাকিব আবারও আবেগপ্রবণ হয়ে বলেন, দেখুন ফিল্মস্টার হলেও অন্য ১০ জনের মতো আমিও কিন্তু একজন সাধারণ মানুষ। সবার মতো আমারও ব্যক্তিগত জীবন বলে একটা কিছু আছে। প্রেম, বিয়ে, সন্তান- প্রত্যেক মানুষের একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। এগুলো ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করার বিষয় নয়। আর আমি আমার পার্সোনাল লাইফকে পাবলিকের সামনে আনতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি না। আমার ইচ্ছা ছিল সময়মতো সুন্দর আয়োজনের মাধ্যমে ঘটা করে বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে সবার সঙ্গে একসঙ্গে আনন্দ করব। কিন্তু অপু বা বুবলী কেউই আমাকে সেই সুযোগ দেয়নি। আমার অপছন্দের এমন কাজ করে সবার কাছে আমাকে ছোট করার পরও কী তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা যায়? আমার সঙ্গে তাদের বিয়ে ও সন্তান নিয়ে তাদের মনে যখন এমনই উচ্ছ্বাস ছিল, তখন তারা বিয়ে বা সন্তান জন্মের পরপরই সবাইকে বিষয়টি কেন জানাল না। কোথায়, আমি তো তাদের মুখ বন্ধ করে রাখিনি। প্রকাশই যদি করতে হলো তাহলে এত দেরিতে কেন? তাহলে কী তারা আমার শত্রুদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমাকে অপমান আর ধ্বংস করতে চেয়েছিল? এই প্রশ্ন আমি আমার ভালোবাসার দর্শক-ভক্তদের কাছেই রাখলাম।উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৩ সেপ্টেম্বর গণমাধ্যমের সামনে বুবলী তাঁর সন্তানের ছবি প্রকাশ করে জানান আড়াই বছর আগেই বাবা-মা হয়েছেন শাকিব-বুবলী। ২০২০ সালের ২১ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ড জুইশ মেডিকেল হাসপাতালে সন্তানের জন্ম দেন তিনি। ছেলের নাম রাখা হয় শেহজাদ খান বীর। পরে বুবলী আরও জানান ২০১৮ সালের ২০ জুলাই গোপনে তাদের বিয়ে হয়। অনেক জল ঘোলা হওয়ার পর ২০১৭ সালের ২২ নভেম্বর অপুর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন শাকিব খান। এটি কার্যকর হয় ২০১৮ সালের ১২ মার্চ। তার ঠিক চার মাস নয় দিন পর বুবলীকে বিয়ে করেন শাকিব খান। বুবলীর দেওয়া স্ট্যাটাস হিসাব করে এ তথ্যই পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে, ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল বেসরকারি টিভি চ্যানেল ‘নিউজ টোয়েন্টিফোর’-এর লাইভ প্রোগ্রামে এসে অপু বিশ্বাস জানিয়েছিলেন শাকিব-অপুর বিয়ে হয়েছিল ২০০৮ সালের ১৮ এপ্রিল। শাকিব খানের উত্তরার বাসায় দুই পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে মালা বদল করেছিলেন তারা। যদিও বিয়ের খবরটি গোপন রেখেছিলেন এ জুটি। শুধু বিয়েই নয়, সন্তান জন্মের খবরও গোপন রেখেছিলেন শাকিব-অপু। ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর কলকাতার একটি ক্লিনিকে তাদের সন্তানের জন্ম হয়। নাম রাখা হয় আবরাম খান জয়। ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করেই বিয়ে ও সন্তানের বিষয়টি গোপন রাখেন শাকিব-অপু বলে সেদিন জানিয়েছিলেন অপু বিশ্বাস।’’
মন্তব্য