সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি ,
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে গোদনাইল সফুরা খাতুন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ভুল বুঝিয়ে গত এক মাস পূর্বে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে রাস্তা অবরোধ করিয়ে ছিল কিছু অসাধু চক্র বিগত একমাস পরে আবারও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ভুল বুঝিয়ে রাস্তায় নামিয়েছে সেই অসাধু চক্রটি।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের পদত্যাগ দাবী করে বুধবার (২৬ অক্টোবর ) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন করে নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-চাষাড়া সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। তাতে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যানযট সৃষ্টি হলে খবর পেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করে এবং সড়ক ছেড়ে স্কুল মাঠে অবস্থান নেয়ার অনুরোধ জানান। পরবর্তীতে পুলিশ ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সফর আলী ভুইয়া ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাফিজুর রহমান মানিক শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে ক্লাসে ফিরিয়ে নেন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে তদারকি করার জন্য মাঠে প্রকাশ্যেই নেমেছেন গোদনাইল পদ্মা ও মেঘনা তেল ডিপোর কতিপয় শ্রমিক নেতা ও এক প্রভাবশালী এক সময়ের তেল চোর এখন বড় তেল ব্যবসায়ী ইন্দন যোগাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বেশ করেকজন সচেতন অভিভাবক। কারণ পদত্যাগী খন্ডকালীন দুই শিক্ষকের মধ্যে সোহেল নামে একজন তার আত্মীয়। এছাড়া ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ফারুক ও নেপথ্যে শিক্ষার্থীদের ইন্দন যোগাচ্ছেন। তার সাথে রয়েছে মাইগগা জাহাঙ্গীর, স্কুলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিপেন চন্দ্র ও পদত্যাগকারী খণ্ডকালীন দুই শিক্ষক। যাদের পদত্যাগ পত্র বিদ্যালয়ের সভাপতি গ্রহণ করেছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আমরা শ্রেণী কক্ষে পড়া দিতে না পারলে প্রধান শিক্ষক আমাদের ছবি তোলে তার মোবাইলে নিয়ে নিতেন। পড়া না পাড়লে তিনি তাঁর হাত দিয়ে আমাদের শরীরে থাপ্পর দিতেন।
এ বিষয় সফুরা খাতুন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জানান, গত মাসের মতো আজকেও তার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের ভুল বুঝিয়ে ও প্ররোচিত করে বিক্ষোভে বাধ্য করেছে। আমার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের করা অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কোন একটি পক্ষ তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বলে তিনি জানান। তিনি আরও জানান, খণ্ডকালীন দুই শিক্ষক পদত্যাগ করার পর নতুন করে দুইজন শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ম্যানেজিং কমিটি। আজকে ছিল তাদের নিয়োগ পরীক্ষা। এই পরীক্ষা বানচাল করার জন্যই ছাত্রদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকজন শিক্ষিকার সাথে কথা বলে জানা গেছে অন্য তথ্য। সাবেক শরীর চর্চা বিষয়ক শিক্ষিকা সুমিতা নাথ, গানের শিক্ষিকা শাহীন চৌধুরী, ইংরেজী শিক্ষিকা ফরিদা আক্তার, সমাজ বিজ্ঞান শিক্ষিকা শাসচ্ছুন্নাহার শিলা উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, আমরা কখনো প্রধাণ শিক্ষক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের করা অভিযোগের বিষয়টি জানতে পারিনি।
২০১৯ সালে রফিক স্যার এখানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এর পরে করোনা কারণে প্রায় দুই বছর বিদ্যালয় বন্ধ ছিলো। গত বছরের শেষের দিকে যখন বিদ্যালয় চালু হয় তখন থেকে এখন পর্যন্ত রফিক স্যার আমাদের সাথে এমন কোন আচরণ করে নাই যাতে তার অন্য কোন উদ্দেশ্য প্রকাশ পায়।
এই বিদ্যালয়ের দু,জন খন্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন সোহেল ও বিল্লাল । ২৫ সেপ্টেম্বর তারা পদত্যাগ পত্র জমা দিয়ে চাকরি ছেড়ে দেয়। স্কলের সভাপতি সফর আলী ভুইয়া পদত্যাগ পত্র গ্রহণ তাদের স্থলে নতুন দুইজন শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নেন। বুধবার সকাল ১০ টায় নতুন দুই শিক্ষকের নিয়োগ পরীক্ষার সময় নির্ধারন করা ছিল।
সেই নিয়োগ পরীক্ষা বানচাল করার জন্যই আজকে শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামায় চক্রটি। এবং রাতে বেলা বেশ কয়েকটি ব্যানার করে দেয়।
এদিকে স্থানীয়দের একটি সুত্র জানায়, পদত্যাগী খণ্ডকালীন দুই শিক্ষকসহ বিদ্যালয়ের একটি চক্র প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে নানাভাবে ষড়যন্ত্র করে আসছে। অনেক অবৈধ সুযোগ সুবিধা বন্ধ হয় গেছে চক্রটির। পদত্যাগি দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তারা দীর্ঘদিন থেকে ওই স্কুলের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়াতেন। এই প্রাইভেট পড়াতে গিয়ে তারা পরীক্ষার আগেই প্রাইভেট শিক্ষার্থীদের কাছে কৌশলে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দিতেন।
এতে করে তাদের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতো। শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করায় তাদের প্রাইভেট শিক্ষার্থী ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকে।
প্রধান শিক্ষক যোগদান করার পর থেকে তিনি নিজেই প্রশ্নপত্র তার নিয়ন্ত্রনে রেখে তৈরী করতেন। এরফলে ওই দুই শিক্ষকের প্রাইভেট শিক্ষার্থীরা এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারনেই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রাইভেট পড়া শিক্ষার্থীদের ফুঁসলিয়ে ও ভুল বুঝিয়ে বিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে এ আন্দোলন করা হচ্ছে।
এসব ছাত্রীরা হচ্ছে কোমলমতি। তারা এখনো ষড়যন্ত্র কি তা বুঝে না। তাদেরকে ভুল বুঝিয়ে মিথ্যা বলানো হচ্ছে। দীর্ঘ দিন বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ছিল না। আমার যোগদান কেউ কেউ ভালো ভাবে নেয়নি।
বিদ্যালয়ের নতুন ভবন, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ, লেখা পড়ার মান বৃদ্ধিসহ নানা কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি অল্প সময়ের মধ্যে। আজকে আমার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ করানো হচ্ছে তা অত্যন্ত লজ্জাজনক ও দুক্ষ্য জনক। আমি সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।
মন্তব্য