আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘জনসমাগম কাকে বলে তা আগামীকাল থেকে বিএনপিকে তা বুঝিয়ে দেওয়া হবে।’ আজ শুক্রবার নিজ বাসভবনে ব্রিফিংকালে বিএনপি মহাসচিবের উদ্দেশ্যে তিনি এ কথা বলেন।
‘বিএনপির তিনটা সমাবেশ দেখেই সরকারের কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেছে’, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখানে সরকারের কাঁপা-কাঁপির কি আছে? কোনো কোনো সমাবেশে দশ লাখের টার্গেট করেও এক লাখ হয়নি, আবার কোথাও পাঁচ লাখ টার্গেট করেও এক লাখেরও অর্ধেকও হয়নি। এটাই তো বিএনপির সমাবেশের চেহারা।’
তিনি আরও চ্যালেঞ্জ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগরিতে ওয়ার্ড ও থানার সম্মেলনে কত হাজার লোক হয়েছে তা দেখুন, যা পত্রপত্রিকা ও মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছে।’
‘খেলা হবে’ বলার প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যারা ১৭ কোটি মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চায়-তাদের বিরুদ্ধে খেলা হবে বলেছি।
খেলা হবে হাওয়া ভবন, লুটপাট, অর্থপাচারের বিরুদ্ধে, খেলা হবে দুর্নীতি, বিদ্যুৎবিহীন খাম্বার বিরুদ্ধে। খেলা সোয়া এক কোটি ভুয়া ভোটার সৃষ্টিকারী, ভোট চুরি আর জালিয়াতির বিরুদ্ধে।’
তিনি বলেন, ‘খেলা হবে দেশের উন্নয়নবিরোধীদের বিরুদ্ধে এবং সাম্প্রদায়িক অপশক্তির লালন ও পালনকারীদের বিরুদ্ধে, খেলা হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা বিশ্বাস করে না তাদের বিরুদ্ধে।’
‘নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা না দিলে কোনো নির্বাচন হবে না’, বিএনপি মহাসচিবের এমন বক্তব্যের প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপনাদের দৃষ্টিতে নিরপেক্ষতার মানদণ্ড কী? সেটা প্রমাণতো আপনারা ক্ষমতাসীন হয়ে বারবার দেখিয়েছেন। বিএনপির নেত্রীই তো একসময়ে বলেছিলেন, পাগল আর শিশু ছাড়া কেউই নিরপেক্ষ নয়, তাহলে আপনারা কি পাগল ও শিশু দ্বারা পরিচালিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চান?’
তিনি বলেন, ‘ক্ষমতার মোহে অন্ধ বিএনপি নেতারা সেটাই চাইতে পারেন।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এদেশে সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশন রয়েছে, যার অধীনে যথাসময়ে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সরকার শুধু নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা দেবে।’
‘নির্বাচন কোনো ব্যক্তিবিশেষ বা কোনো দলের খেয়ালখুশি মতো হবে না’, এমনটা জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, একইভাবে বাংলাদেশেও নির্বাচন হবে।’
‘দেশের রিজার্ভ নিয়ে বিএনপি কথা বলে কোন মুখে, এটা জনগণের প্রশ্ন’, উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘রিজার্ভের টাকা সরকার গিলে ফেলেছে নাকি আমদানি ব্যয়ে দেশের উন্নয়ন এবং জনগণের কল্যাণে ব্যয় করেছে?’
‘রিজার্ভের টাকা তো গিলে ফেলেছেন ফখরুল সাহেবরা’, এমনটা উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের আবারও বিএনপি মহাসচিবের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘রিজার্ভ কত রেখে গিয়েছিলেন মনে আছে? যখন ক্ষমতা ছেড়েছেন তখন যা রেখে গিয়েছিলেন, তা পাঁচ বিলিয়নেরও কম।’
‘বিএনপির আমলে রিজার্ভ তো শূন্যই ছিল, সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ৪৮ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত আমাদের রিজার্ভ উঠেছিল’, উল্লেখ করে তিনি, বলেন, ‘আজ বৈশ্বিক সংকটের কারণে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন থেকে ৩৬ বিলিয়নে এসে ঠেকেছে। এ সংকট শুধু বাংলাদেশের নয়, দুনিয়ার সব উন্নত দেশ হিমশিম অবস্থায় রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপির রিজার্ভের ভান্ডার ছিল শূন্য, এখন তারা কোন মুখে রিজার্ভ নিয়ে কথা বলে?’ বর্তমানে যে রিজার্ভ রয়েছে তা দিয়ে আগামী ৫ থেকে ৬ মাস সরকার আমদানি করতে পারবে বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।
‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পরিবহন ধর্মঘটের জন্য মালিক শ্রমিকদের প্রতি উপদেশ বর্ষণ করছেন, উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘২০১৩-১৪ সালে যখন শত-শত গাড়ি বিএনপি ভাঙচুর করেছিল, পেট্রল নিক্ষেপ করে গাড়ি ও পরিবহন শ্রমিকদের পুড়িয়ে মেরেছিল, পরিবহন শ্রমিকদের রিজিকের ওপর হাত দিয়েছিল এবং মালিক শ্রমিক পরিবারকে নিঃস্ব করেছিল তারা সেটা এখনো ভুলে যায়নি। ভুলে যায়নি বিএনপির সেই আগুন সন্ত্রাস ও জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পরিবহন মালিক শ্রমিক নির্দিষ্ট কোনো দলের নন, এখানে সকল দলেরই লোক আছে।’ তিনি বিএনপি নেতাদের স্মরণ করে দিয়ে বলেন, ‘পরিবহন মালিক সংগঠনের সভাপতি আওয়ামী লীগের, সাধারণ সম্পাদক বাসদের, বিএনপির বড় নেতা শিমুল বিশ্বাসও বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। তাকেই জিজ্ঞেস করুন, কেন ধর্মঘট করেছে?’
‘সব দলের সমন্বয়ে মালিক সমিতি, সেখানেও প্রেসিডেন্ট হচ্ছে জাতীয় পার্টির, জেনারেল সেক্রেটারি আওয়ামী লীগ সমর্থিত, অন্যান্য সকল দলেরই প্রতিনিধিত্ব রয়েছে’। বিএনপি নেতাদের তাদের সাথে কথা বলার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তাদের জিজ্ঞেস করুন, কেন তারা আপনাদের ভয় পায়, কেন ২০১৩-১৪ সালের দুঃসহ স্মৃতি আজও ভুলতে পারেনি, তাদের জিজ্ঞেস করুন।’
মন্তব্য