শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
 

রাস্তায় চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য, ভোগান্তিতে সাধারণ জনগণ

JK0007
প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২২

---

রাস্তায় বের হলেই দেখা যায়, সিনএনজিসহ বিভিন্ন যানবাহনকে রাস্তার মাঝে দাঁড় করিয়ে টাকা নেওয়া হচ্ছে। কখনো রশিদ দেওয়া হয়, কখনো দেওয়া হয় না।

কিন্তু কেনো এই টাকা তোলা হয়?
কারা এই টাকা তোলে?
এর কি কোনো সরকারি বাধ্যবাধকতা আছে? আছে কি বৈধতা?- এসব প্রশ্নের উত্তর জানা নেই।

মালিক-শ্রমিকদের নামে বেপরোয়াভাবে চাঁদাবাজি চলছে কুমিল্লায়। জিপি (চাঁদা) ছাড়া সিএনজি ও মেসি-মারতি’র (মিনি মাইক্রোবাস) চাকা ঘোরে না। এদের নৈরাজ্যে জিন্মি সাধারণ মানুষও। মানা হচ্ছে না সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের কোনো নিয়মনীতি।

দৈনিক ইকিলাবের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ কুমিল্লার জেলা-উপজেলার সিএনজি ও মেসি-মারতির স্ট্যান্ডগুলোতে রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে মালিক-শ্রমিক সমিতির চাঁদাবাজি চলছেই। এমনকি চাঁদা আদায়ের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা নিয়ে সংঘাত হয়েছে বেশ কয়েকবার। চাঁদাবাজির প্রতিবাদে চালকরা কয়েকবার সিএনজি ও মেসি-মারতি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রথম দিকে চাঁদাবাজি সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু ক্রমেই তা মহাসড়কের বাসস্ট্যান্ডগুলোতেও ছড়াতে শুরু করে। অভিযোগ রয়েছে, মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের স্থানীয় নেতাদের দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় কমিটি করে দিয়ে চাঁদাবাজি চালাচ্ছে। এতে করে সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তী চরম আকার ধারন করে।

এবিষয়ে কুমিল্লা জেলা মেসি-মারতি পরিবহনের পরিচালক জানান, দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা ক্যান্টারমেন্ট থেকে চান্দিনা পর্যন্ত প্রায় শতাধিক মেসি-মারতি পরিবহন চলাচল করে আসছে।

গত কয়েকদিন ধরে মহাসড়কের নিমসার এলাকায় কুমিল্লা জেলা বাস ও মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের আওতাধীন নিমসার বাজার লিয়াজো অফিসের নামে প্রতি গাড়ী থেকে ৩০ টাকা করে চাঁদা আদায় করতে থাকে। কিছু চালক চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে নিমসার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতির নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা চালকদের মারধর করে। এর প্রতিবাদে মেসি-মারতির প্রায় শতাধিক চালক মহাসড়কের কালাকচুয়া এলাকায় মহাসড়কের পার্শ্বে গাড়ী রেখে ধর্মঘট শুরু করে।

প্রতিবেদনটি থেকে আরো জানা যায়, প্রকাশ্য এই চাঁদার বাইরেও একজন সিএনজি ও মেসি-মারতি মালিককে দৈনিক গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। এটি নিয়ন্ত্রণ করে মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো। কিন্তু ভয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খোলে না।

সূত্র জানায়, বর্তমানে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কসহ কুমিল্লার বিভিন্ন সড়কে চলাচলকারী প্রায় সব সিএনজি ও মেসি-মারতি বিভিন্ন সমিতির অধীনে চলে। এসব সমিতির নেতৃত্বে রয়েছেন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা।

এদিকে জিপির নামে চাঁদাবজির কারনে কুমিল্লার শাসনগাছা-ব্রাহ্মণপাড়া সড়কে বাড়তি ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে অভিযোগ সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রীদের। চালকদের অভিযোগ, জিপির নামে মালিক সমিতি ও স্ট্যান্ডের ইজারাদার চাঁদা আদায় করায় বাড়তি ভাড়া নিচ্ছেন তারা। অথচ স্ট্যান্ড ইজারাদাতা কর্তৃপক্ষ জেলা পরিষদ বলছে নির্ধারিত হারের অধিক টোল আদায় করা হলে ইজারা বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চালকদের অভিযোগ, শাসনগাছা-ব্রাহ্মণপাড়ার ২৩ কিলোমিটার সড়কে জিপির নামে প্রতিদিন সিএনজি প্রতি ৩৩০ টাকা চাঁদা দিতে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক জানান, শুধু শাসনগাছা স্ট্যান্ডেই প্রতিদিন জিপি দিতে হয় ২৫০ টাকা। বুড়িচংয়ে ৩০, ব্রাহ্মণপাড়ায় ৩০, ভরাসার বাজারে ১০ ও বারেশ্বরে ১০ টাকা জিপি দিতে হয়। সব মিলিয়ে চালকদের শুধু জিপির টাকাই গুনতে হয় ৩৩০ টাকা। তাই তারাও বিপাকে রয়েছেন। জিপির কারণে বাড়তি ভাড়া গুনতে অসম্মত যাত্রীদের সঙ্গে চালকদের মারামারির ঘটনাও ঘটে। বর্তমানে এই রাস্তায় অনেকটা বাধ্য হয়েই চলতে হয় যাত্রীদের।

এ চাঁদাবাজি শুধু রাঙ্গামাটি কিংবা কুমিল্লাতেই নয় বরং এ চিত্র পুরো দেশের।

যানবাহনের চালকরা জানান, গাড়ি থামিয়ে চাঁদার রশিদ ধরিয়ে দেয়া হয়। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মারধর করে গাড়ি আটকে রাখাসহ নানা হয়রানি করা হয়। অনেক সময় গাড়ি ভাঙচুর ও চাকার হাওয়া ছেড়ে দেয়া হয়।

তারা আরো জানান, রশিদের মাধ্যমে প্রতিদিন দুবার করে একটি সংগঠনের নাম ব্যবহার চাঁদা আদায় করা হয়। চালকদের কল্যাণে এ টাকা ব্যয় করার কথা থাকলেও কোথায় যায় এ টাকা তারা তা জানে না। যারা রাস্তায় চাঁদাবাজি করে তারা পুলিশকে টাকা দিয়ে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করছে বলে তারা মনে করে।

মঈন নাসের খাঁন (রাফি)
কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি

মন্তব্য

পঠিতসর্বশেষ

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon