শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
 

পটুয়াখালীতে রহিমা-আলামিনদের বাদাম বিক্রি !

JK0007
প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২২

---

মুনতাসির তাসরিপ, পটুয়াখালীঃ
ভাইয়া বাদাম কিনবেন? “আমার নাম রহিমা। বয়স ১১ বছর। আমি ৩-৪ বছর ধরে বাদাম বিক্রি করি। আমার সাথে আরো অনেকে আছে। আমার মা আগে একটা বাসায় পানি দিত, এখন সেই বাসায় টিউবওয়েল উঠাইছে তাই তাদের পানি লাগে না। বাবা! বাবা তো সদরে রিকশা চালায়। পড়ালেখা! আমি পড়ালেখা ছাড়ছি অনেক আগে। প্রথমে মাদরাসা এবং পরে স্কুলে প্রথম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ছিলাম।”

আবার পাশেই ছিলো আলামিন, সে বলে, “ভাইয়া আমার থেকে নিন। আমার বয়স ১৪। বাসা আরামবাগে। রহিমা আর আমার বাসা পাশাপাশিই। বাবা কিছুই করে না। দুই ভাই বাদাম বিক্রি করি। ছোটোভাই আর আমি। বাবা বাদাম ভাঁজে মাত্র। কিছু করে না। খায় আর ঘুমায়।

খুব আনন্দ নিয়েই পটুয়াখালীর পিডিএস মাঠের জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে বাদাম বিক্রি করতে আসা রহিমা-আলামিনের হাস্যজ্বল মুখে উচ্চারিত হয়েছিলো বাক্যগুলো।

অনেকটা হাসি-খুশির মাধ্যমেই পটুয়াখালীতে বাদাম বিলিয়ে যাচ্ছে রহিমা-আলামিনদের মতো অসংখ্য শিশু। কিন্তু এমন বয়সে একটি শিশুর কতোটা যত্নে লালিত হওয়ার কথা, কত আদরে বড় হওয়ার কথা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, পটুয়াখালীর পিডিএস মাঠ, ঝাউবাগান, শেখ রাসেল পার্ক সহ বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় এই শিশুদের বাদাম-চানাচুর বিক্রি করতে দেখা যায়। এসব শিশুর ভবিষ্যৎ যে অন্ধকারে ঘেরা তা বুঝতে বাকি নেই কারোরই। তবে এমন ঘটনার প্রতি তীব্র আক্ষেপে অনেকে দোষারোপ করেন তাদোর পিতা-মাতাদের। শিশুদের ভবিষ্যতকে অন্ধকারে রেখে নিজেদের লোভের কারণে রাস্তায় নামিয়ে দিচ্ছেন তারা। শিশুদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎকে সামনে রেখে তাদের ভাগ্যের উন্নতির জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হোক এমনটাই দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের কারণে উড়ন্ত বয়সের সময় দুরন্ত রহিমা- আলামিনদের হতে হয়েছে ভ্রাম্যমাণ বাদাম বিক্রেতা। অথচ এই বয়সে তারা সপ্ন দেখবে লেখাপড়া করে দেশবাসীর কল্যান সাধনের।

বিষয়েটি নিয়ে পটুয়াখালী পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর লুৎফর রহমান শাহরিয়ার বলেন, আমরা এসব শিশুদের বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে থাকি। তারা আমাদের পৌরসভার পক্ষ থেকে অনেক সময় অনেক সহযোগিতা পায়। বর্তমানে নতুন কিছু শিশুদের দেখা গেছে। আমরা তাদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা আবদুল্লা আল জব্বার বলেন, আমরা তো আসলে আমাদের জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে সমন্বয় ছাড়া কোনো কাজ করতে পারি না, যদি উপর থেকে আমাদের কোনো প্রকল্প দেয়া হয় তবে আমরা এসব বাচ্চাদের পূনর্বাসন বলেন, যত্ন বলেন, লেখাপড়া ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে পারি। এছাড়া সরকারী শিশু পরিবার যদি চায় তবে তারা এসব শিশুদের স্বযত্নে লেখাপড়া ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে পারে।

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক শিলা রানী দাস জানান, এমন অবস্থা শুধু পটুয়াখালীতে নয় সারা বাংলাদেশে দেখা যায়। আমরা শিশুদের তো কিছু করতে পারবো না তবে, তাদের বাবা-মা যদি বেকার হয়, তাহলে তাদের আবেদনের ভিত্তিতে আমরা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দিতে পারি বা যদি বয়স্ক হয় তাদের বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা, প্রতিবন্ধী হলে প্রতিবন্ধী ভাতা ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে পারি।

শিশুদের পুনর্বাসন ও শিক্ষায় জেলা প্রশাসন থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, এ বিষয়ে জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তার সাথে সমন্বয় করলে তাদের হাতে বিভিন্ন প্রকল্প রয়েছে সেগুলি বাস্তবায়িত হবে।

মন্তব্য

পঠিতসর্বশেষ

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon