আজ সোমবার ইরানের বিরুদ্ধে নিজেদের কাতার বিশ্বকাপের অভিযান শুরু করছে ইংল্যান্ড দল। বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হবে এই ম্যাচ। কিন্তু খেলার শুরুতেই হলুদ কার্ড দেখার সম্ভাবনা রয়েছে ইংলিশ অধিনায়ক হ্যারি কেইনের। ফিফার নিয়ম ভঙ্গ করার পর তার বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
জানা গেছে, অধিনায়কের বাহুবন্ধনী বা আর্মব্যান্ড নিয়ে ফিফার সঙ্গে বিরোধে জড়াতে চলেছে যুক্তরাজ্যের দুই দেশ- ইংল্যান্ড ও ওয়েলস। ফিফার নির্দেশ না মেনে নিজেদের মতো করে বাহুবন্ধনী নিয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই দুই দল। পাশাপাশি ইংল্যান্ড তাদের ম্যাচ শুরুর আগে মাঠেই হাঁটু মুড়ে বসে প্রতিবাদ জানানোরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, নানা বিতর্কে জর্জরিত কাতার বিশ্বকাপ। সমকামী-বিদ্বেষ ও বিদেশি শ্রমিকদের দুর্দশা নিয়ে কাতারের বারবার সমালোচনা করেছে ইউরোপীয় দেশগুলো। সেই প্রতিবাদের অংশ হিসেবে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হ্যারি কেইন, ওয়েলস অধিনায়ক গ্যারেথ বেলসহ নয়টি দলের অধিনায়কের ‘ওয়ান লাভ আর্মব্যান্ড পরে মাঠে নামার কথা।
কিন্তু সমস্যা তৈরি হয়েছে বিশ্বকাপ শুরুর ঠিক আগের মুহূর্তে অধিনায়কেরা কী বাহুবন্ধনী পরবেন, সেটি ফিফা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। ফিফা নতুন বার্তা সংবলিত আর্মব্যান্ড চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ইংল্যান্ড, ওয়েলস তাদের ‘ওয়ান লাভ’ আর্মব্যান্ড পরার সিদ্ধান্তে অনড়।
ফিফার নির্দেশনা মানবে না ইংল্যান্ড, নাম প্রকাশ না করে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন অব ইংল্যান্ডের এক কর্তা।
অধিনায়ক হ্যারি কেইন জোর দিয়ে বলেছেন, তিনি বিশ্বকাপে ‘ওয়ান লাভ আর্মব্যান্ড’ পরার জন্য জরিমানা কিংবা শাস্তির ঝুঁকি নিতেও প্রস্তুত।
তবে ইংল্যান্ড ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে ফিফার সঙ্গে আলোচনা করছেন। উদ্বেগের বিষয় হল টুর্নামেন্টের নিয়ম অমান্য করার জন্য অধিনায়ককে হলুদ কার্ড দেখানো হতে পারে।
ইংল্যান্ড ওই ৯ দেশগুলোর মধ্যে একটি যারা আর্মব্যান্ড পরার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে তারা সেই দলগুলোর মধ্যে প্রথম আজ কাতারে খেলতে নামছে। ফলে প্রথম যেকোনও শাস্তির শিকার হতে পারে এই দলের অধিনায়ক।
তবে হ্যারি কেইন বলেছেন, “আমি মনে করি আমরা একটি দল হিসেবে, একজন কর্মী হিসেবে এবং একটি সংস্থা হিসেবে এটি পরিষ্কার করেছি যে আমরা আর্মব্যান্ড পরতে চাই। আমি জানি ফুটবল অ্যাসেসিয়েশন এই মুহূর্তে ফিফার সাথে কথা বলছে। আমি নিশ্চিত তারা এ বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত নেবে। তবে আমরা পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছি যে আমরা এটা পরতে চাই।”
ইংল্যান্ডের কোচ গ্যারেথ সাউথগেট বলেছেন, “হ্যারি কেইন যা বলেছে তাতে আমি আর নতুন কিছু যোগ করতে পারছি না। আমি জানি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। আমি মনে করি বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ কথা বলেছে, আমরা আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছি, আশা করি, সবকিছুর সমাধান হবে খেলার আগে।”
মিরর অনলাইনের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইংল্যান্ডের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশেন ফিফার আদেশ অমান্য করার জন্য মোটা জরিমানা গুনতেও প্রস্তুত। কিন্তু হলুদ কার্ডের বিষয়টি নিয়েই উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, ফিফা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আর্মব্যান্ডের মাধ্যমে বিশ্বকাপ জুড়েই জাতিসংঘের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সামাজিক প্রচার করা হবে। প্রতিটি রাউন্ডের জন্য থাকছে আলাদা প্রচার। যেমন- কোয়ার্টার ফাইনালে প্রচারের থিম হবে ‘নো ডিসক্রিমিনেশন’ (বৈষম্যহীনতা)।
প্রসঙ্গত, গত অক্টোবর মাসেই ‘ওয়ান লাভ’ আর্মব্যান্ড পরার জন্য ফিফার অনুমতি চেয়েছিল ইংল্যান্ডের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। এতটাই মরিয়া ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস যে তারা ‘ওয়ান লাভ’ আর্মব্যান্ড পরার জন্য প্রয়োজনে জরিমানাও দিতে রাজি। কাতারের মানবাধিকার পরিস্থিতির প্রতিবাদে ডেনমার্ক আবার প্রতিবাদের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছিল তাদের ম্যাচের জার্সিকে। সম্পূর্ণ কালো জার্সি ও প্যান্ট পরে বিশ্বকাপে মাঠে নামার কথা ছিল ড্যানিশদের । তবে ডেনমার্ককে সেই অনুমতি দেয়নি ফিফা। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, মিরর অনলাইন, রয়টার্স
মন্তব্য