চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি:
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিএনপির ছেড়ে দেওয়া দুই আসনে মোট ১২ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে আব্দুল ওদুদ বিশ্বাস ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে মু. জিয়াউর রহমানকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। তবে উভয় আসনে ক্ষমতাসীন দলের অন্তত তিন প্রভাবশালী নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। প্রার্থী রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের (ইনু)। স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে গত নির্বাচনে হেরেছে নৌকা। এবারও বিদ্রোহী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিন নেতা থেকে গেলে চ্যালেঞ্জে পড়বেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা। বিএনপির দুই সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ এবং মো. আমিনুল ইসলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসন থেকে পদত্যাগ করায় আসন দুটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। পরে আসন দুটিতে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি উপনির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদ বিশ্বাসকে দল মনোনীত করলেও তাঁর সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিরোধ জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সামিউল হক লিটনের। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিরোধী পক্ষের ‘ওদুদ ঠেকাও’ আন্দোলনের নেপথ্যে ছিলেন লিটন। তাঁর সঙ্গে ওদুদের বিরোধ শুরু হয় ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর। ওই নির্বাচনে ওদুদ বিশ্বাস বিজয়ী হয়ে এমপি হন। পরে পৌর মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পান যুবলীগের তৎকালীন সভাপতি লিটন। কিন্তু তিনি মাত্র ১ হাজার ভোটে জামায়াতের কাছে হেরে যান। এ জন্য দলীয় এমপিকে দায়ী করেন লিটন। এ দ্বন্দ্বের জেরেই গত পৌর নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাননি তিনি। পরে বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিলে দল থেকে লিটনকে বহিস্কার করা হয়। এবার উপনির্বাচনে মওকা নিতেই তিনি আওয়ামী লীগের একাংশ এবং ওদুদ ঠেকাও গ্রুপের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। লিটন বিএনপিদলীয় ভোটের বড় অংশ ছাড়াও ওদুদবিরোধীদের সমর্থন পাবেন। জাতীয় পার্টির (লাঙ্গল) মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল এবং জাসদের (ইনু) মো. মনিরুজ্জামানও শক্ত প্রার্থী। এখানে বিএনএফ থেকে কামরুজ্জামান খাঁন ও স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাহারিমা। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ লিটনকে ম্যানেজ করতে না পারলে নৌকার পক্ষে জেতা কঠিন হবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সূত্রগুলো।
সামিউল হক লিটন জানান, তিনি মনেপ্রাণে আওয়ামী লীগ করেন। নির্বাচন করা মৌলিক অধিকার। জনগণ ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের চাপে প্রার্থী হয়েছেন। কারও প্রতি প্রতিশোধ নেওয়ার তথ্য সঠিক নয় বলে দাবি তাঁর।
আব্দুল ওদুদ বিশ্বাস বলেন, ‘সরকারি দলের এমপি না থাকায় এ এলাকায় কোনো উন্নয়ন হয়নি। উন্নয়নের স্বার্থে জনগণ নৌকাকে বিজয়ী করবেন। দলে ঘাপটি মেরে থাকা সুবিধাভোগীরা কিছুই করতে পারবে না।’ চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে মু. জিয়াউর রহমানকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তিনি জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি। এখানে বিদ্রোহী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন রাজশাহী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ আলী সরকার এবং গোমস্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খুরশিদ আলম বাচ্চু। রয়েছেন জাতীয় পার্টির (লাঙ্গল) মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, জাকের পার্টির গোলাম মোস্তফা ও বিএনএফের নবীউর ইসলাম।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, ২০০৮ সালে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে এমপি হন জিয়াউর রহমান। ২০১৪ সালে জিয়াউর ও গোলাম মোস্তফা মনোনয়ন দাবি করেন। পরে গোলাম মোস্তফাকে প্রার্থী করলে জিয়ার অনুসারীরা পরোক্ষভাবে বিরোধিতা করেন। যদিও শেষ পর্যন্ত গোলাম মোস্তফা এমপি হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তাঁরা মনোনয়ন চান। আওয়ামী লীগ জিয়াউরকে বেছে নিলে গোলাম মোস্তফার অনুসারীদের বিরোধিতার মুখে পড়েন। এটিকে কাজে লাগিয়ে জয় তুলে নেন বিএনপির প্রার্থী আমিনুল ইসলাম।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ উপনির্বাচনেও মোহাম্মদ আলী সরকার এবং খুরশিদ আলম বাচ্চুর হয়ে কাজ করবে। নৌকাকে কোণঠাসা করতে বিএনপি জোট আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীকে বেছে নেবে। ফলে এখানে নৌকার প্রার্থী কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যদিও গোলাম মোস্তফার দাবি, তিনি আওয়ামী লীগের বাইরের কেউ নন। দলের পক্ষে নৌকাকে জেতাতেই কাজ করবেন। খুরশিদ আলম বাচ্চু বলেন, ‘কয়েক দফা মনোনয়ন চাইলে দল আমাকে মূল্যায়ন করেনি। স্থানীয়দের চাপে প্রার্থী হয়েছি। ভোটের মাঠ আমার পক্ষে রয়েছে।’
মন্তব্য