জবি প্রতিনিধি,:
একাডেমিক ফিল্ড ওয়ার্কের অংশ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থাপনা ঘুরে দেখেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা।
আজ শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস’কোর্সের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা এই ফিল্ড ওয়ার্কে অংশ নেন।
এসময় শিক্ষার্থীদের সাথে কোর্স টিচার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সহকারী অধ্যাপক মো. মিঠুন মিয়া এবং অতিথি শিক্ষক হিসেবে বীর মুক্তিযোদ্ধা অজয় দাশ গুপ্ত উপস্থিত থেকে স্থাপনাগুলো ঘুরে দেখান।
এ সময় শিক্ষার্থীরা কোর্সের পাঠ্য জ্ঞানের সাথে বাস্তবে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি ঐতিহাসিক স্থাপনা দেখেন। এসময় শিক্ষার্থীরা মুক্তিযোদ্ধা অজয় দাশ গুপ্তের কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও পাকিস্থানি বাহিনীর বর্বতা ও নিষ্ঠুরতার বর্ণনা শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা অজয় দাশ গুপ্ত বলেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ভর্তি হই ১৯৬৮ সালে। উনসত্তরে ছাত্রদের ভূমিকা আমি কাছ থেকে দেখেছি। ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন কার্যক্রম ঢাকা মেডিকেলের পেছনে আমতলায় হয়। ভাষা আন্দোলন পরবর্তী মিটিং, সমাবেশ হয় এই বটতলা কেন্দ্র করে। কিন্তু পাকিস্তানিরা এই বট গাছকেও সহ্য করতে পারেনি, তারা ৭১ সালে এ গাছটি সমূলে উপড়ে ফেলে। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে আবার রোপণ করা হয়।
এছাড়া তিনি তিনি সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ও জগন্নাথ হল সম্পর্কে নিজের স্মৃতিচারণ ও ইতিহাস নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেছেন।
ফিল্ড ওয়ার্কে অংশগ্রহণকারী গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম খলিল বলেন, আজকে এসে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। আজ নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আদর্শ শিক্ষার্থী হিসেবে মনে হয়েছে।
আরেক শিক্ষার্থী তানভীর হাসান বলেন, আমরা এর আগে অনেকবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি। কিন্তু এভাবে কখনও ইতিহাস রিলেট করে স্থাপত্য গুলোকে দেখেনি। একজন মুক্তিযোদ্ধার চোখ দিয়ে আজ সব দর্শনীয় স্থান নতুন মনে হলো।
রাজিয়া রাশা বলেন, আমরা আগেও ঢাবিতে অনেকবার এসেছি। তখন সেলফি তুলতাম, আড্ডা দিতাম আর চলে যেতাম। কিন্তু আজ আমাদের ইতিহাস নিজ চোখে দেখে উপলব্ধি করতে পেরেছি।
এ সম্পর্কে বিভাগের কোর্স শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক মো. মিঠুন মিয়া বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রকৃত ইতিহাস সম্পর্কে জানাতে শুধু ক্লাসে ইতিহাসের ওপর লেকচার দেওয়ার মাধ্যমে সম্ভব নয়। এজন্য তাদের ঐতিহাসিক স্থানসমূহ দেখিয়ে তাদের মধ্যে অতীত ইতিহাস উপলব্ধি করানো দরকার। এটিই করার চেষ্টা করেছি মাত্র। আমি ধন্যবাদ জানাই বীর মুক্তিযোদ্ধা অজয় দাশগুপ্ত স্যার ও আমার শিক্ষার্থীদের।
এর আগে সকাল ১০টায় শিক্ষার্থীরা বটতলা থেকে পায়ে হেঁটে ভিসি চত্বরের যান। পরে সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও জগন্নাথ হল প্রদক্ষিণ করেন। সবশেষে রোকেয়া হলের পাশ দিয়ে ঢাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার হয়ে মধুর ক্যান্টিনে গিয়ে উপস্থিত হন। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি মধুর ক্যান্টিনের মালিক মধুদা’র আন্তিরকতা ও সহযোগিতার কথা বর্ণনা করেন অজয় দাশ গুপ্ত।
মন্তব্য