মুনতাসির তাসরিপ, স্টাফ রিপোর্টারঃ
মাটসোনা ডিলিয়াও বলেছেন,”একটি তারকা তার আকারের জন্য নয়,তার আলোর জন্য জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।” তেমনি যেন আলো ছড়াতে ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী দশমিনায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগ দেন ইউএনও মহিউদ্দিন আল হেলাল৷ তারই যেন আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই।
যোগদানের পরপরই জনপ্রিয়তা অর্জন করতে থাকেন তারকা খ্যাত এই ইউএনও। পটুয়াখালী জেলার এককালের অবহেলিত, দরিদ্রপীড়িত, স্বাস্থ্য, শিক্ষা থেকে শুরু করে সবকিছুতেই পিছিয়ে থাকা একটি উপজেলার নাম দশমিনা। এই উপজেলার মানুষের দিকে যেন একটু নজরদারি করতে এবং সকল সুযোগ-সুবিধাকে এই প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার স্বার্থে আগমন ঘটে মহিউদ্দিন আল হেলাল’এর।
উপজেলায় প্রবেশ এর পরেই ধাপে ধাপে আগাতে থাকে সকল কার্যক্রম। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ময়লার ভাগারকে পুষ্টিবাগানে রুপান্তর, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে(ফেসবুক)পোস্ট দেখে নিজের রক্তদানের মাধ্যমে বৃদ্ধকে বাঁচানোর মধ্য দিয়ে ব্লাড ব্যাংক এর উদ্বোধন, হঠাৎ করেই ছাত্র-ছাত্রীদের বাসায় গিয়ে লেখাপড়ার খোঁজ নেয়া, দশমিনা উপজেলার সকল গৃহহীন ও ভুমিহীনদের বাছাই করে তাদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পৌঁছে দিয়ে উপজেলাকে ভুমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা, ২৭ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মত দশমিনা উপজেলায় সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত এর আয়োজন করা,সড়ক দূর্ঘটনায় রাস্তার পাশে পরে থাকা ৫ বছরের শিশুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা, উপজেলার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, ‘তারা ঝিলমিল’ নামক প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে শিশুমেলার আয়োজন করা, মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর সন্তান প্রসবের পর তার দায়িত্ব নেয়া, মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে খাবার পৌছে দেয়া, ৩৯টি বাল্যবিয়ে বন্ধ, নিজের হাতে আগাছা পরিষ্কার করে দশমিনার প্রথম পর্যটন কেন্দ্রের ঘোষনা,ইলিশ মৌসুমে সাধারণ মানুষের ন্যায় মধ্যরাতে নদীর পাড়ে ঘুরে বেড়ানো, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এ মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সতর্ক করা এবং প্রত্যেক কেন্দ্রে অবস্থান করা, এসএসসি পরীক্ষায় শ্রুতি লেখককে আটক,”দশমিনা স্কিল ল্যাব’ এর প্রতিষ্ঠা এবং সম্প্রতি উপজেলার ইতিহাসে প্রথমবার শিক্ষার্থীদের মাঝে ‘গনিত উৎসব’ এর আয়োজন এবং এসএসসি ও এসএসসি দাখিল পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা নিয়ে আলোচিত হন এই কর্মকর্তা। এরই মাঝে নির্বাচিত হন পটুয়াখালী জেলার শ্রেষ্ঠ ইউএনও হিসেবে।
মোবাইল কোর্ট,মাদকবিরোধী অভিযান, জুয়ার আসরে অভিযান, অফিস, মাসিক সভা, উঠান বৈঠক, পুষ্টি মেলা, বিভিন্ন সভা সেমিনার, ফল মেলা, খেলাধুলা থেকে শুরু করে সবকিছুতেই ছিল নিয়মানুবর্তিতা। সম্প্রতি একটি দোকান উচ্ছেদের পর এই কর্মকর্তার নামে মিথ্যা অভিযোগ দেয়া হলে ক্ষিপ্ত হয় দশমিনাবাসী। রাস্তায় নামে সব ধরণের শ্রেনী পেশার মানুষেরা।
বর্তমানে দশমিনা উপজেলা থেকে বদলি হয়ে গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন দশমিনায়। উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে যেন কখনোই হারাতে চায় না দশমিনাবাসী।
ইউএনও’র কর্মযোজ্ঞ সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি অফিসার ও অফিসার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. জাফর আহমেদ বলেন,আমার দেখা শ্রেষ্ট মেধাবী একজন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। আমি পাশে থেকে দেখেছি তিনি প্রান্তিক পর্যায়ে মানুষের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। দশমিনাবসী তার অবদানের কথা কখনোই ভুলতে পারবে না৷ তার প্রত্যেকটা কাজ দশমিনার মানুষকে জাগ্রত হওয়ার অনুপ্রেরণা দিয়েছে। এক বছরে পদর্পণ করায় তাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।
মন্তব্য