মুদ্রাস্ফীতির কারনে যদি মূল্যস্ফীতি হয় আর এই স্ফীত মুদ্রার যদি সমানুপাতিক সুষম বন্টন হয় তাহলে সমাজে এই মূল্যস্ফীতির প্রভাব কদাচিৎ লক্ষণীয়। দূর্নীতি আর অর্থ পাচারের প্রভাবে কাগজে কলমে থাকা অর্থের পরিমাণ আর প্রকৃতপক্ষে একটা দেশে যে পরিমাণ অর্থ আছে তাদের মধ্যে পার্থক্যে যে পরিমাণ অর্থের ঘাটতি আছে তা মেটাতে গেলে অর্থ ছাপানো বা বৈদেশিক ঋণ প্রয়োজন হয় যাহা বাস্তবিক অর্থে মুদ্রাস্ফীতি ঘটায়। অর্থনীতিতে মুদ্রার সরবরাহ বেড়ে গেলে এবং পন্য ও সেবা সামগ্রী উৎপাদন অপরিবর্তিত থাকলে মূল্যস্ফীতি ঘটে। উৎপাদিত পন্য ও সেবাসামগ্রীর চাহিদার তুলনায় যোগান কম থাকলে মূল্যস্ফীতি হয় যাকে আমরা ‘ডিমান্ড পুল ইনফ্লেশন’ বলি। এধরণের মূল্যস্ফীতি রোধে প্রয়োজন অধিকতর উৎপাদন এবং তার সুষম বন্টন। ‘কস্ট পুশ ইনফ্লেশন’ হলো উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত উপকরণের মূল্য বৃদ্ধির ফলে চুড়ান্ত ভোগ্যপন্যের মূল্য বৃদ্ধিকে বুঝায়। উৎপাদনের উপকরণ সহজলভ্য করা এবং এগুলোতে সরকারি ভর্তুকি ফলে এ ধরণের মূল্যস্ফীতি রোধে ভুমিকা রাখতে পারে। মূল্যস্ফীতি মানুষের প্রকৃত আয় কমিয়ে দেয়। দেশজ মোট সঞ্চয় কমিয়ে দেয়।মূল্যস্ফীতির সমানুপাতিক হারে আয় বৃদ্ধি না পেলে সে দেশের প্রত্যেক জনগণের উপর মূল্যস্ফীতির প্রভাব পরে। মূল্যস্ফীতি শিক্ষা ব্যবস্থায়ও প্রভাব ফেলে। শিক্ষার উপকরণের মুল্য, শিক্ষার্থীদের বাসা ভাড়া, তাদের যানবাহন ভাড়া এবং শিক্ষার্থীদের নিত্যনৈমিত্তিক খরচ এর ব্যয় বৃদ্ধি পাই।বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা নিজেদের ডিপার্টমেন্টের মৌলিক শিক্ষা গ্রহনে অনিচ্ছুক হয়ে চাকরি পাওয়ার উদ্দেশ্যে প্রতিযোগিতামুলক পড়াশুনায় আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। বই পুস্তক, খাতাপত্র, কলম পেন্সিল সহ শিক্ষা সামগ্রীর মুল্য ক্রমাগত বাড়তে থাকলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা গ্রহনে অনাগ্রহী হয়ে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়বে, অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়তে পারে। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীদের অর্থ আয় বৃদ্ধি বা পরিবার থেকে অতিরিক্ত অর্থ প্রাপ্তি না ঘটলে শিক্ষার্থীদের জীবন যাত্রা ও শিক্ষা গ্রহণ প্রক্রিয়া ব্যহত হবে। দীর্ঘমেয়াদি মূল্যস্ফীতির প্রভাবে সাক্ষরতার হার কমে যেতে পারে।মূল্যস্ফীতির প্রভাবে শিক্ষার্থীদের এমনকি সকল শ্রেণির মানুষের পারিবারিক এবং সাংসারিক জীবনে সুখ শান্তি ও ভালোবাসা বিনষ্ট হয়। শিক্ষাব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে এবং শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন সচল রাখতে এই সেক্টরে সরকারি ভর্তুকির পরিমান বাড়াতে হবে, বেসরকারি ভাবে ফান্ডিং এর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সরকারি ও বেসরকারি ভাবে শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করা যেতে পারে। কর্পোরেট সোশ্যাল রেস্পন্সিবিলিটির আওতায় শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার পাশাপাশি খন্ড কালীন কর্মসংস্থান এর ব্যবস্থা কর যেতে পারে। শিক্ষা উপকরণের উৎপাদনে ভর্তুকি প্রদান করে শিক্ষা সামগ্রীর মুল্য স্বাভাবিক রাখা এবং এগুলোর মুল্য যেনো বৃদ্ধি না হয় সেদিকে নজরদারি রাখা।একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের রেশন সুবিধা প্রদান করা যেতে পারে।সরকারি এবং বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি এবং অন্যান্য ফি কমানো যেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হলে শতভাগ আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যেতে পারে। আবাসিক শিক্ষার্থীদের খাদ্য সহায়তা এবং পরিবহন সুবিধা প্রদান করা যেতে পারে। সহজ শর্ত এবং সল্প সুদে শিক্ষা ঋণ ব্যবস্থা করা যেতে পারে।সর্বপরি একটি শ্রেনী বা গোষ্ঠীকে একটি সমাজে টিকিয়ে রাখতে হলে তাদের জন্য সতন্ত্র কল্যাণ তহবিলের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
লেখক
এস.এম.নাসির উদ্দিন
সহকারী অধ্যাপক,অর্থনীতি বিভাগ,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,গোপালগঞ্জ।
মন্তব্য