শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
 

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর দপ্তর তথ‌্যবিবরণী বাংলার সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে হবে : মোস্তাফা জব্বার

শফিকুল ইসলাম খোকন
প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২৩

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, বাংলার সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা বাংলার জন্য রক্ত দিয়েছি, বাংলা আমাদের রাষ্ট্রভাষা, ৩৫ কোটি মানুষের এই ভাষার সব কিছু আমাদেরকেই করতে হবে। ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার উন্নয়নের দায়িত্ব্ আমাদের। পৃথিবীতে বাংলা ভাষা ভিত্তিক একমাত্র রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকেই তা করতে হবে। আমাদের দুর্ভাগ‌্য যে ইউনিকোডে বাংলা এনকোডিং করার সময় আমরা তার সদস্য ছিলাম না।

প্রতিবেশী দেশের বাংলাভাষাভাষীরা বাংলাকে দেবনাগরীর মতো করে এনকোডিং করে আমাদের ভাষার স্বাতন্ত্রকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছে। আমরা দীর্ঘদিন যুদ্ধ করেও এর সমাধান করতে পারছিনা। ইতোমধ‌্যে বাংলার প্রমিত মান তৈরি করা হয়েছে। বাংলার জাতীয় মান ইউনিকোডের মান হিসেবে নিশ্চিত করতে ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামে তা পেশ করতে হবে। মন্ত্রী এ বিষয়ক গঠিত কারিগরি কমিটিতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চত করার নির্দেশনা প্রদান করেন। মন্ত্রী আজ ঢাকায় বিটিআরসি মিলনায়তনে বিটিআরসি ও বিআইজিএফ এর যৌথ উদ‌্যোগে আয়োজিত ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার সার্বজনীন গ্রহণযোগ‌্যতা এবং বাংলাদেশের পর্যবেক্ষণ বিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।

সাইবার জগতে বাংলা ভাষার সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে ই-মেইল এর ক্ষেত্রেও বাংলা ভাষা ও স্ক্রিপ্ট ব্যবহারের সুযোগ চেয়েছে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে ইন্টারনেট দুনিয়ায় অ্যাপ্লিকেশন, ডিভাইস এবং সিস্টেমগুলো যেনো স্থানীয় ভাষাবন্ধব হয় এবং এর ব্যবহার বারে সে দিকেও আলোকপাত করেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

ইউনির্ভার্সেল একসেপ্টেন্স ডে ২০২৩ উপলক্ষে সোমবার রাজধানীর রমনার বিটিআরসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত দুই দিনের সম্মেলনের প্রথম দিন এমন দাবি তোলেন বক্তারা।

ইন্টারনেট কর্পোরেশন ফর অ্যাসাইনড নেমস অ্যান্ড নাম্বারস (ICANN) এর সহযোগিতায় যৌথভাবে দেশে প্রথমবার এই অংশীজন সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (BTRC) এবং বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম (BIGF)।

দুপুরে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলা ভাষার সমস্যা সমাধানে প্রধনমন্ত্রী চাঁদে যেতেও বাধা দেবেন না। তাই বিসিসি যেনো পরবর্তী কনসোর্টিয়ামের বৈঠকে যোগ দিতে তৎপর হয়।

টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, বিশ্বের ৩৫ কোটি বাংলাভাষাভাষীর জন্য বাংলাদেশই হচ্ছে বাংলা ভাষার রাজধানী। বাংলাদেশই ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বাংলার এনকোডিং ও কিবোর্ডের মান প্রমিত করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই বাংলার ১৬টি টুলস উন্নয়নে ১৫৯ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছেন যার কাজ চলমান। বাংলাদেশে প্রকাশনার জন্য বস্তুত একটিই কিবোর্ড ও সফটওয়্যার ব্যবহৃত হয়। এখানে আসকি ও ইউনকোডের মধ্যে যে দেওয়াল আছে তা ভেঙে ফেলা হয়েছে। তারপরও ইউনিকোড কনভার্সনে যে জটিলতা হয় তার অপরাধ বাংলা ভাষাভাষীদের নয়। ভাষা ও সাহিত্যের প্রাযুক্তিক সমস্যাটার পেছনে ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামের দায় রয়েছে উল্লেখ করে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার উদ্ভাবক জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেন আমাদের ভাষাকে একটি স্বতন্ত্র্য ভাষা হিসেবে গণ্য না করে আমাদেরকে ‘দেবনাগরীর’ অনুসারী করে প্রচণ্ড রকম ক্ষতি করা হয়েছে। এজন্যই এখনো আমাদেরকে নোক্তা নিয়ে যুদ্ধ করে বেড়াতে হচ্ছে। অথচ বংলা বর্ণে কোনে নোক্তা নেই। ইউনিকোড যদি বাংলাকে বাংলার মতো দেখে এই সমস্যাগুলো সমাধান করে ফেলতো তাহলে যে সমস্যাগুলো এখন মোকাবেলা করতে হচ্ছে তা আমরা করতাম না।

মন্ত্রী বলেন, ভাষা ভিত্তিক দেশ হিসেবে ভাষা নিয়ে বিভাজনের কোনো সুযোগ নেই। আমরা এক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করবো।

বিটিআরসি চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) শ্যাম সুন্দর সিকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এহসানুল কবির আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ভবিষ্যতে কোনো ডিভাইস চালু করার সময় বাংলাভাষায় স্বাগত জানাবে। এজন্য বিটিআরসি আইকানের সঙ্গে নিবিঢ়ভাবে কাজ করছে বলে জানান তিনি।

সম্মিানিত অতিথির বক্তব্যে বিআইজিএফ চেয়ারম্যান এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ না হলে বিশ্বের অগ্রযাত্রা থেকে ছিটকে পড়তো। ইন্টারনেট সংযুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে রাষ্ট্র, সমাজ ও ব্যক্তিকে খাপ খাইয়ে নিতে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করতে হবে। স্মার্ট জনগণই এই শিল্পবিপ্লবকে সফল করবে। এক্ষেত্রে মাতৃভাষায় ইন্টারনেট ব্যবহার বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে  ভাষার প্রতিবন্ধকতা দূর করতে মন্ত্রণালয় পর্যায়ে দূরত্বের বিষয় টেনে আনেন তিনি।

এর আগে সকালের নেটওয়ার্কিং অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ পেশ করেন বিএনএনআরসি সিইও এএইচএম বজলুর রহমান। সিটি ইউনির্ভার্সিটির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের প্রধান অধ্যাপক সাফায়েত হোসেনের সঞ্চালনায় সচেতনতামূলক উপস্থাপনা দেন আইকান আইডিএন প্রোগ্রাম সিনিয়র ম্যানেজার পিতিনান কোরমোরপান্তা।  অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সংসদ সদস্য আফরোজা হক রিনা, বিটিআরসির মহাপরিচালক নাসিম পারভেজ, প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ প্রকল্প পরিচালক মাহবুব করিম প্রমুখ। 

এই দিনটি উদযাপনের মাধ্যমে, স্থানীয় পর্যায়ের অংশগ্রহণকারীরা সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে আরও সচেতন এবং উদ্যোগী করে তোলা, সেইসাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আঞ্চলিক এবং বিশ্ব সম্প্রদায় এবং সংস্থাগুলির সাথে আরও নিবিড়ভাবে এবং সমন্বিতভাবে কাজ করার ক্ষেত্রকে প্রশস্ত করবে। অনুষ্ঠানটি ইউনিভার্সাল অ্যাকসেপ্টেন্স স্টিয়ারিং গ্রুপ (UASG), ICANN, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের দ্বারা এবং ইউনিভার্সাল অ্যাকসেপ্টেন্স ট্রেনিং, সচেতনতা এবং কৌশলগুলির উপর বিভিন্ন সেশন দ্বারা আয়োজন করা হয়।

মন্তব্য

পঠিতসর্বশেষ

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon