শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪
 

রাঙ্গুনিয়ায় চাঞ্চল্যকর এনজিও কর্মী হত্যার আসামি এনামুল র‍্যাব-৭ হাতে আটক

মাহবুবুর রহমান জিসান
প্রকাশ: ৪ এপ্রিল ২০২৩

---

মুবিন বিন সোলাইমান, রাঙ্গুনিয়া চট্টগ্রাম:

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চাঞ্চল্যকর এনজিও কর্মী চম্পা চাকমা (২৮) হত্যার প্রধান আসামি মোঃ এনামুল হককে র‍্যাব-৭ এর অভিযানে সিলেট হতে গ্রেফতার করেছে।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৭ জানতে পারে চম্পা হত্যা মামলার প্রধান আসামি এনামুল গ্রেফতার এড়াতে সিলেট জেলার জৈন্তাপুর থানার আসামপুর এলাকায় আত্মগোপন করে আছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম ও র‌্যাব-৯, সিলেট এর একটি যৌথ টিম গত ৩ মার্চ ২০২৩ইং তারিখ দুপুরে অভিযান পরিচালনা করে আসামি মোঃ এনামুল হককে আটক করতে সক্ষম হয়।

র‌্যাব-৭ রিগাল মিডিয়া কর্নার হতে আজ গণমাধ্যমকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এডিশনাল এসপি মাহফুজ ও রিগাল মিডিয়া অফিসার আবু আবছার জানান, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চাঞ্চল্যকর এনজিও কর্মী চম্পা চাকমা (২৮) হত্যার প্রধান আসামি উপজেলার পারুয়া ইউনিয়ন মোঃ নুরুজ্জামানের ছেলে মোঃ এনামুল হককে আটক করতে সক্ষম হই। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী স্বীকার করে, সে উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত এবং এজাহারনামীয় একমাত্র আসামী।

তিনি আরো বলেন, নিহত চম্পা চাকমা বেসরকারি মানবিক উন্নয়ন সংস্থা ‘পদক্ষেপ’ এর রাঙ্গুনিয়া ব্রাঞ্চের সহকারী ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আসামি মোঃ এনামুল হক গত ২০ এপ্রিল ২০২২ইং তারিখে এনজিও সংস্থা পদক্ষেপ হতে তার মায়ের নামে ২ লক্ষ টাকা এবং তার বোনের নামে ১ লক্ষ টাকা লোন গ্রহণ করে। পরবর্তীতে এনামুল তার মায়ের লোনের ৪০ কিস্তি যথাসময়ে পরিশোধ করলেও তার বোনের নামে লোনের ০৬টি কিস্তির টাকা যথাসময়ে ১০ হাজার টাকা কিস্তিতে পরিশোধ করার কথা থাকলেও পরিশোধ করতে পারেনি। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত তারিখে কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় চম্পা এনামুলকে বারংবার তাগিদ দিতে থাকে এবং এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়ে উক্ত হত্যাকান্ড সংগঠিত হয় এক পর্যায়ে হত্যা মামলার প্রধান আসামি এনামুল পালিয়ে যায়।

নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনাটি রাঙ্গুনিয়াসহ সারাদেশে আলোড়ন ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। নিরীহ এনজিও কর্মী চম্পা চাকমাকে প্রকাশ্যে দিবালোকে ছুরিকাঘাতে নৃশংস হত্যাকান্ডে রাঙ্গুনিয়ার সাধারণ মানুষের পাশাপাশি তিন পার্বত্য জেলার পাহাড়ি আধিবাসী জনগোষ্ঠী হত্যা মামলার প্রধান আসামীকে গ্রেফতারের মানববন্ধন করে। র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম উক্ত নৃশংস হত্যাকান্ডের এজাহারনামীয় একমাত্র আসামী এনামুলকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারী ও ছায়া তদন্ত অব্যাহত রাখে।

র‍্যাবের সূত্রে আরো জানা যায়, আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এনামুল খুন করার কথা অকপটে স্বীকার করে, কারন তার মা ও বোন বেসরকারি মানবিক উন্নয়ন সংস্থা ‘পদক্ষেপ’ নামক মহিলা এনজিও হতে ৩ লাখ টাকা ঋণ নেয় যার ৩০ হাজার টাকার মত বাকি ছিল, কিস্তির টাকা আদায় করতে এনজিও হতে ৮ জন লোক তার বোনের বাসায় যেতে চেয়েছিল, পুরো টাকা তারা নিয়েই আসবে ও তার ভগ্নিপতি যেহেতু বিদেশে থাকে, তাই তার মান সম্মান যাবে এই ভেবে, সে হাতে চাকু নিয়ে সন্ধ্যায় প্রথমে চম্পাকে চাকু দেখিয়ে হুমকি দেয় এবং একপর্যায়ে রাগান্বিত হয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে গলায় ছুরিকাঘাত করে। সে এ কাজের পরিকল্পনায় আগেই চাকু সংগ্রহ করে রাখে। হত্যার পর পাহাড়ি বনে একরাত, রাঙামাটি, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা, চকবাজার এলাকা, ঢাকার পোস্তাগালা এবং সর্বশেষ সিলেটের জৈন্তাপুরে দৈনিক ২শ টাকা বেতনে হোটেলে কাজ নেয় যেখান হতে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

উল্লেখ্য, গত ৫ মার্চ (রোববার) ২০২৩ইং তারিখ রাত সাড়ে ৮ টার দিকে উপজেলার লালানগর ইউনিয়নের ধামাইরহাটস্থ এইচ এ প্লাজার ওয়ান ব্যাংকের সামনে পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রে (হোছনাবাদ শাখা) অফিসের নিচে এনজিও কর্মী চম্পা চাকমাকে ঋণ গ্রহীতা মো. এনামুল হক গলার পাশে শ্বাসনালীতে ছুরিকাঘাত করে। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। পরে ঐদিন নিহত চম্পা চাকমার বোন জামাই সোহেল চাকমা বাদী হয়ে মো. এনামুল হককে প্রধান আসামি করে রাঙ্গুনিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে।

মন্তব্য

সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon