শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪
 

অধিক বৃষ্টিতে পানি জমে থাকা ও বাজারে দর না থাকায় তালতলীতে তরমুজ চাষি ও সার কীটনাশক ব্যবসায়ীরা নিঃস্ব হবার পথে

মাহবুবুর রহমান জিসান
প্রকাশ: ৫ এপ্রিল ২০২৩

---

হাফিজুর রহমান, তালতলী (বরগুনা) প্রতিনিধিঃ
বরগুনার তালতলীতে অধিক পরিমানে বৃষ্টি হওয়ায় তরমুজ ক্ষেতে পানি জমে থাকায় গাছের গোড়া পচে যাচ্ছে এবং হঠাৎ রোদ পেয়ে গাছের তরমুজগুলো ফেটে ও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে চাষি ও সার কীটনাশক ব্যবসায়ীরা স্বর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হবার পথে বসেছে।

বুধবার সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

উপজেলায় তরমুজ চাষে বেশি লাভজনক হওয়ায় এ বছর চাষিরা তরমুজ চাষের দিকেই ঝুকছে। তারা বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋন এনে লাভের আসায় তরমুজ চাষ করেন। সার ও কিটনাশক ব্যবসাইরা তাদের কিটনাশক বাকিতে বিক্রি করেন ফলন পেলেই টাকা পরিশোধ করবে এই আশায়।

সরেজমিনে ছোটবগী ইউনিয়নের বেতিপাড়া, ঠংপাড়া গাববাড়িয়া, বড়বগী ইউনিয়নের, মালিপাড়া, তালুকদার পাড়াসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, মাঠ ভরা তরমুজ গাছ। গাছে তরমুজ নেই। অধিকাংশ তরমুজ ক্ষেত পানিতে তলিয়ে রয়েছে। গাছে পচন ধরে গাছ মরে গেছে। বড়বগী ইউনিয়নে ব্যাপক আকারে তরমুজের চাষ হলেও টানা বৃষ্টিতে গাছ মরে যাওয়া ও বাজারে তরমুজের চাহিদা না থাকায় ব্যাপক লোকসানের মুখে প্রায় এক হাজারেরও অধিক চাষী। যার প্রভাব পড়েছে সার কিটনাশক ব্যাবসায়ীদের মাঝেও।
---

উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার কড়ইবাড়ীয়া, ছোটবগী, বড়বগী ও নিশানবাড়ীয়া ইউনিয়নে প্রায় ১১ শত হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়। সরকারি হিসাব মতে প্রতি হেক্টরে সার ও কিটনাশক মিলেখরচ হয়েছে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। বেসরকারি ভাবে কৃষকদের হিসাবে খরচ এর দেড় গুন।

সরেজমিনে গেলে চাষি ইউসুফ মিয়ার সাথে কথা বলতে গেলে তিনি হাউ মাউ করে কেঁদে উঠে বলেন, ভাই বড় আশা নিয়ে অনেক টাকা ঋণ করে তরমুজ চাষ করেছিলাম। বিক্রির জন্য বেপারি পাইনি। তাই ঢাকা কারওয়ান বাজারে নিয়া বিক্রি করছি। যে তরমুজ বিক্রি হবার কথা ৪ লাখ টাকা, তা বিক্রি করছি এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকায়। এখন কিটনাশক দোকানদার ৩ লক্ষ টাকা পাবে তা কেমনে দিব।

আর এক চাষি ফোরকান মিয়ার ক্ষেতে গিয়া দেখলাম, তার ২৫ বিগা জমিতে তরমুজের গাছ সব পানিতে তলিয়ে গেছে। আমাদের দেখেই হাউ মাউ করে কেঁদে দিয়ে বলেন, ভাই মোর যা আছেলো সব শ্যাষ। সার অষুধের দোকানদার টাহা পাবে তা ক্যামমে দিমু। সোংসারের হগোলে ২ মাস পর্যন্ত এই মাডে দিনরাত পরিশ্রম করতেছি। এ্যাহোন কোম্মে যামু। কিছুই কইতে পারিনা। মোর এ্যাহোন মরন ছাড়া উপায় নাই।

বেতিপাড়া গ্রামের কৃষক বাসার মৃধা বলেন, আমার সব শেষ কি যে করব ভেবে পাচ্ছি না। ২ লাখ টাকা ঋণ করে তরমুজ চাষ করেছিলাম। ক্ষেতে কোন তরমুজ হয়নি, খরচের সব টাকাই লোকসান হয়েছে ।

তরমুজ ক্রেতা এক পাইকারের সাথে কথা বলে জানা গেলো তিনি ৩ লাখ টাকার তরমুজ কিনে মাত্র ৯০ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। তাই লচ খেয়ে এলাকায় আসতে পারিনা। ঢাকায় তরমুজের প্রচুর চাপ থাকায় দাম নেই। গাড়ি ভাড়া লেবারি দিয়া নিজেরাই নিঃস্ব হবার পথে।
পাইকারি তরমুজ ব্যবসায়ী সোহেল রানা বলেন, এ বছরের মতো এমন অবস্থা তরমুজচাষিদের আর কখনো হয়নি। ঋণের বোঝা নিয়ে তাঁরা দিশাহারা।

স্থানীয় কীটনাশক ব্যবসায়ী শাহজাহান মাতুব্বরের সাথে কথা বলে জানতে পারি তারাও বিভিন্ন কোম্পানি থেকে বাকিতে কীটনাশক এনে চাষিদের কাছে বাকিতে বিক্রি করেছে। কিন্তু ফলন না হওয়ায় অনেক চাষি ক্ষেত ছেরে পালিয়েছে। যাদের গাছে ফল কিছু আছে কিন্তু বাজার ভাল না থাকায় বাকিতে দেওয়া ঔষধের টাকা মোটেও আসবেনা। ফলে ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ব্যাবসা ছেড়ে দেওয়ার উপক্রম হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ সুমন হাওলাদার বলেন, উপজেলায় ১১ শত হেক্টর জমিতে তরমুজ দেয়া হয়েছে। মোট কৃষকদের গড়ে প্রায় ৪০% তরমুজ ঘরে তোলা হয়েছে। এ উপজেলায় ৫ শত কোটি টাকা বিক্রি হবার কথা। বৃষ্টির কারণে ৬০% কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মন্তব্য

সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon