রুমান শাহরিয়ার, জামালপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ এর শিক্ষার্থী করিম উদ্দিনের এক আত্মীয়ের অপারেশনের সময় ঠিক হওয়ার পর ডাক্তার জানালেন দ্রুত ২ ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করতে হবে। হঠাৎ করে রক্ত জোগাড়ের কথা শুনে চিন্তিত হয়ে পড়েন করিম। রক্ত সংগ্রহের জন্য পরিচিতদের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ শুরু করেন। অনেক চেষ্টার পরও রক্তদাতার সন্ধান না পেয়ে অবশেষে রক্ত যোদ্ধাদের সাথে যোগাযোগ করেন। এমন সময় সেলফোন অথবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে রক্তের প্রয়োজন জানতে পেরে সাথে সাথেই সাহায্যের জন্য এগিয়ে যায় রক্ত যোদ্ধারা। রক্ত দিয়ে তারা করিম এর আত্মীয়ের জীবন বাঁচায়। মানুষের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা করাই যেন ওদের নেশা। কারো রক্তের প্রয়োজন এমন সংবাদ পেলেই ছুটে যাচ্ছে সংগঠনের সদস্যরা। হাসি মুখে নিজের শরীরের রক্ত দিয়ে জীবন বাঁচাচ্ছেন তারা।
উল্লেখ করতে চাচ্ছি বর্তমান সময়ে একঝাঁক তরুণ-তরুণী নিয়ে জামালপুরে গড়ে ওঠা তুমুল জনপ্রিয় রক্তদাতা সংগঠন “ব্লাড ফাইটার ফর হিউম্যানিটি” এর কথা।”মানুষ মানুষের জন্য,জীবন জীবনের জন্য” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ২০২০ সালের ২রা জুলাই মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার জন্য যাত্রা শুরু করে ব্লাড ফাইটার ফর হিউম্যানিটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সংগঠনটি বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, মুমুর্ষ রোগীর প্রয়োজনে সেচ্ছায় রক্তদান এবং প্লাটিলেট দান করা, রক্তদানের সচেতনতার বার্তা মানুষের মাঝে পৌঁছে দেওয়া, থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে সচেতনতার বার্তা মানুষের মাঝে পৌঁছে দেওয়া। দেশের বিভিন্ন দুর্যোগের সময় আর্থিক সহায়তা এবং ত্রাণ সহায়তা করা। অসহায় ছিন্নমূল মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ, পরিবেশ রক্ষায় গাছ লাগানো, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অসহায় পরিবারের জন্য আর্থিক সহযোগিতা,শীতে কষ্ট করা অসহায় মানুষদের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণ সহ নানা মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
এসংগঠনের প্রতিটি সদস্য চায়, দেশের প্রতিটি মানুষের নিজের রক্তের গ্রুপ জানার অধিকার রয়েছে সেই সাথে রক্তদান সম্পর্কে সচেতন হতে হবে, থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে সচেতন হতে হবে এবং মুমুর্ষ রোগীর প্রয়োজনে সেচ্ছায় রক্তদানে এগিয়ে আসতে হবে।
পাশাপাশি তারা মানুষকে সচেতন করেন যেন রক্তের বিনিময়ে কোন প্রকার আর্থিক লেনদেন না করা হয় ও গর্ভবতী মায়ের জন্য সন্তান প্রসবের ৩/৪ মাস পূর্বেই দুইজন রক্তদাতা প্রস্তুত রাখার প্রয়োজন।
ধীরে ধীরে সংগঠনটি এখন গ্ৰামীণ জনপদের সাথে মিশে গেছে। সবার রক্তের প্রয়োজনের আশার জায়গা এটি। তাদের এ সেচ্ছাসেবী মনোভাব দেখে অনেকেই এগিয়ে আসছে।
সংগঠনের অন্যতম স্বেচ্ছাসেবক বোরহান উদ্দিন বলেন, ব্লাড ফাইটার ফর হিউম্যানিটি এটা শুধু একটা সংগঠন নয়। এটা আমাদের একটা ছোট্ট পরিবার। যেখানে মিশে আছে আমাদের মত স্বেচ্ছাসেবকদের অক্লান্ত পরিশ্রম,হাসি,কান্না,দুঃখ আর আনন্দের হাজারো গল্প। এই পরিবার আমাদের শিখিয়েছে মৃত্যু শয্যায় থাকা কোন বাবা মায়ের সন্তান রক্তের জন্য যখন হাহাকার করে, ঠিক সেই সময় একজন রক্তযোদ্ধা স্বেচ্ছাসেবীকে দেখে কতটা নিশ্চয়তার হাসি দেন তারা। শিখিয়েছে কীভাবে এক ব্যাগ রক্তদানের মাধ্যমে মায়ের বুকে শিশু আর মায়ের মুখের সেই তৃপ্তির হাসি ফিরিয়ে দেওয়া যায়। যে হাসি কোটি টাকার বিনিময়েও ক্রয় সম্ভব নয়।
এসময় তিনি আরও বলেন, ইনশাআল্লাহ সবার সহযোগিতায় আমরা আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা অব্যাহত রাখবো।
এবিষয়ে সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ বদরুল হাসান বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায়সময়ই অনেক মুমূর্ষু রোগী আসে যাদের জরুরী রক্তের প্রয়োজন হয়। তখন আমরা খেয়াল করি ব্লাড ফাইটার ফর হিউম্যানিটি নামক রক্তদাতা সংগঠনটি এগিয়ে আসে এবং স্বেচ্ছায় রক্তদান করে।
মন্তব্য