রুমান শাহরিয়ার: গ্রাম বাংলার চির ঐতিহ্যের নিদর্শন সবুজ শ্যামল ছায়ায় ঘেরা শান্তির নীড় মাটির ঘর। যা এক সময় গ্রামীণ জনপদে ‘গরীবের এসি বাড়ি’ নামে পরিচিত ছিলো। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যের এই মাটির ঘর। গ্রামেও লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। মাটির ঘরের জায়গায় তৈরি হচ্ছে প্রাসাদসম অট্টালিকা। মাটির ঘরের স্থান দখল করে নিচ্ছে ইট-পাথরের দালান। একটু সুখের আশায় মানুষ কত কিছুই না করছে। তবুও মাটির ঘরের শান্তি ইট পাথরের দালান কোঠায় খুঁজে পাওয়া ভার।
মানুষের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা, প্রযুক্তির উন্নয়ন, রুচিবোধের পরিবর্তন, পারিবারিক নিরাপত্তা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে নিজেদের সুরক্ষার কারণে এখন আর কেউ মাটির ঘরে থাকতে চান না। সচ্ছল মানুষেরা এখন ঝুঁকে পড়েছেন পাকা দালানের দিকে। তারপরও মানুষ যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নগরায়ণের সাথে সাথে পাকা দালান কোঠা তৈরি করছেন। তাই আধুনিকতার ছোঁয়ায় আর সময়ের পরিবর্তনে গ্রাম বাংলা থেকে ঐতিহ্যবাহী মাটির তৈরি ঘর আজ প্রায় বিলুপ্তের পথে।
বেশিদিন আগের কথা নয়, প্রতিটি গ্রামে একসময় মানুষের নজর কাড়তো সুন্দর এ মাটির ঘর। ঝড়, বৃষ্টি থেকে বাঁচার পাশাপাশি প্রচুর গরম ও খুবই শীতে বসবাস উপযোগী শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মাটির তৈরি এসব ঘর এখন আর তেমন চোখে পড়ে না।
আধুনিকতার ছোঁয়া আর কালের বিবর্তনে বিভিন্ন গ্রামে এ চিরচেনা মাটির ঘর বিলুপ্তির পথে বললেই চলে। অতীতে মাটির ঘর গরীবের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর বলে পরিচিত ছিল। এ ঘর শীত ও গরম মৌসুম সময়েই আরামদায়ক। তাই আরামের জন্য গ্রামের দরিদ্র মানুষের পাশাপাশি অনেক বিত্তবানও মাটির ঘর তৈরি করে থাকতেন।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, প্রাচীনকাল থেকেই মাটির ঘরের প্রচলন ছিল। এঁটেল বা আঠালো মাটি কাঁদায় পরিণত করে দুই-তিন ফুট চওড়া করে দেয়াল তৈরি করা হত। ১০-১৫ ফুট উঁচু দেয়ালে কাঠ বা বাঁশের সিলিং তৈরি করে তার ওপর খড়, টালি বা টিনের ছাউনি দেয়া হত। মাটির ঘর অনেক সময় দোতলা পর্যন্ত করা হতো। এসব মাটির ঘর তৈরি করতে কারিগরদের তিন-চার মাসের অধিক সময় লাগতো। গৃহিনীরা মাটির দেয়ালে বিভিন্ন রকমের আল্পনা একে তাদের নিজ বসত ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে তুলতেন।
মাটির ঘতের বাসিন্দা জনৈক প্রবীন ব্যাক্তি বলেন, আমার বাপ,দাদার আমলে মাটির ঘরের সমারোহ ছিল অফুরন্ত। কিন্তু আজ যুগের সাথে তাল মিলিয়ে তার স্হান দখল করে নিয়েছে ইট কিংবা কংক্রিটের বড়বড় অট্টালিকা। যার ফলে মাটির তৈরি ঘর আজ গ্রাম থেকে বিলুপ্ত প্রায়। বর্তমান প্রজন্ম এই মাটির ঘরের সাথে অপরিচিত।
মন্তব্য