মোঃ মিনহাজ আলম
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ
জেলার হরিপুর উপজেলার প্রত্যন্ত সীমান্তবর্তী অঞ্চলের ছেলে সিরাজ। যেখান থেকে এক কিলোমিটার এর মধ্যে ভারত। সেই জায়গা থেকে পড়াশোনা চলাকালীন সময় থেকে শুরু করে সে বর্তমানে একজন স্বাবলম্বী ফ্রিল্যান্সার উদ্যোক্তা।
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার ভাতুরিয়া ইউনিয়নের ভাতুরিয়া গ্রামের আলহাজ্ব খলিলুর রহমানের ছেলে উদ্যোক্তা সিরাজুল ইসলাম সিরাজ। সে ২০০৪ সালে ভাতুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে। এরপর রংপুর লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২০০৭ সালে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে এইচএসসি পাস করে।
সেখান থেকে বিদায় নিয়ে সে রাজশাহী কলেজ থেকে সমাজবিজ্ঞানে অনার্স এবং ঢাকার তিতুমীর কলেজ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করে। পড়াশোনায় ছিলনা কোন কমতি। তবে পড়াশোনার পাশাপাশি অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং শিখে সাফল্য অর্জন করার গভীর ইচ্ছা ছিল তার।
তার জীবনের সফলতার পিছনে সংগ্রামের কথা জানতে চাইলে বলেন,
আমার শুরুটা ২০১৪ সালের দিকে। তখন আমি পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু একটা ইনকামের উপায় খুঁজছিলাম। এ সময় আমি টিউশনের চেষ্টা করছিলাম কিন্তু টিউশন পায়নি। তারপরে আমি ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে জানতে পারি। এ পেশায় প্রথমত আমার শুরু হয় ব্লগিং দিয়ে। আমার একটা সফটওয়্যার রিলেটেড ব্লগ ছিল। এডসেন্স থেকে আমার প্রথম আয় ৮১ ডলার। এরপরে আমি স্বতন্ত্রভাবে বায়ার খুঁজতে শুরু করি। ২০১৫ সালে আমি লিংকদিন থেকে একটা বায়ার খুঁজে পায়। এরপর ২০১৯ সালের দিকে আমি কানাডিয়ান একটি কোম্পানির সাথে আমি চুক্তিবদ্ধ হই। এ দুটো কোম্পানির সাথে আমি কাজ করছি। বর্তমানে আমার ছোট্ট একটা টিম আছে এই টিম নিয়ে আমি কাজ করি। আমার টিমের মাসিক এভারেজ ইনকাম চার থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা।
আমার টিমে এখন পর্যন্ত ১৮-২০ জন কাজ করছে। এখান থেকে কাজ শিখেই অনেকেই আবার নিজেরা নিজেদের মত টিম গঠন করে কাজ করছে। তারা ইনকাম করে বেশ ভালোভাবেই চলাফেরা করছে। শুধু ফ্রিল্যান্সিং নয় এর পাশাপাশি আমরা আমাদের নিজেদের অর্থায়নে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ করে থাকি। শীতকালে শীতবস্ত্র বিতরণ, ঈদ, পহেলা বৈশাখ সহ বিভিন্ন উৎসবে পথশিশু ও গরিব অসহায়দের সহায়তা করে থাকি। আমাদের মত অন্যান্যরাও এই কাজে এগিয়ে আসুক। এই আধুনিকতার যুগে কেউ ঘরে বেকার বসে থাকুক এটা আমি চাই না। পড়াশোনার পাশাপাশি সবাই যেন দেশের রেমিটেন্স বাড়ানোর ভূমিকা রাখতে পারে এটিই আমার স্বপ্ন। আমি যদি সরকারের সুযোগ-সুবিধা পাই তাহলে আমার এই টিমটিকে অনেক বড় পরিসরে করার আশা রয়েছে। যেখানে কাজ করবে ঠাকুরগাঁওয়ের শত শত বেকার যুবক-যুবতী।
সদর উপজেলার আখানগর এলাকার আরেক প্রতিষ্ঠিত ফ্রিল্যান্সার রঘুনাথ সিংহ রায় বলেন, এটা একটা মুক্ত আর স্বাধীন পেশা এখানে পরিশ্রম করলে অবশ্যই সফলতা আসবে। সিরাজ ভাই অনেক পরিশ্রম করতে পারেন, অনেক দক্ষ, একটা সময় আমি ওনার সাথে ছিলাম। এখন আমি আলাদা হয়ে আলাদা বড় কোম্পানিতে কাজ করছি। তবে বেসিক অনেক কাজ ওনার কাছেই শিখেছি
রহিমানপুর এলাকার সিরাজের টিমের আরেক সদস্য মিজান প্রধান বলেন, কোন এক মাধ্যমে সিরাজ ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় হয়। উনার সাথে কথাবার্তা বলে উনি আমাকে ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ শেখায়। এক পর্যায়ে আমি পূর্বে যে চাকরি করতাম সে চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়ে সিরাজের টিমে আমি যুক্ত হয়। বর্তমানে মোটামুটি ভাবে আমি এই অনলাইন জগত থেকে ভালো উপার্জন করি।
জেলার হরিপুর উপজেলার ভাতুরিয়া গ্রামের আরো এক সদস্য পলাশ রানা বলেন, আমি বিগত তিন-চার বছর থেকে এই পেশায় নিয়োজিত আছি।
এই পেশায় থেকে বর্তমানে আমি স্বাবলম্বী। ফ্রিল্যান্সিং এর ভালো দিক হচ্ছে যে এখানে সৎ ভাবে উপার্জন করা যায়। আমি এখানে উপার্জন করে সেই টাকা দিয়ে আমার পরিবারের খরচের পাশাপাশি ব্যবসা ও কৃষি কাজে ব্যয় করতে পারি।
এই কাজে থেমে নেই নারীরাও, তেমনি হরিপুর উপজেলার আরেক দক্ষ নারী ফ্রিল্যান্সার আসফিয়া সিদ্দিকী বলেন তার গল্পটা কেন আউটসোর্সিংয়ে আগ্রহি্ তিনি,
আমি পড়াশোনার পাশাপাশি বর্তমানে অনলাইনে ল্যাপটপের মাধ্যমে আউটসোর্সিং এর কাজ করছি এবং আমি নিজের পড়াশোনার খরচ নিজেই বহন করতে পারি এই পেশার মাধ্যমে। আমি চাই আমার মত হরিপুর উপজেলাসহ গ্রামের অন্যান্য মেয়েরা আউটসোর্সিংয়ের কাজ করুক। কোন মেয়েরাই যেন পিছিয়ে না থাকে এই আধুনিক যুগে।
হরিপুর উপজেলার ভাতুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহজাহান সরকার বলেন, আমার ইউনিয়নের ভাতুড়িয়া গ্রামের আলহাজ্ব মোঃ খলিলুর রহমানের ছেলে সিরাজুল ইসলাম সিরাজ সে দীর্ঘদিন যাবত আউটসোর্সিং এর সাথে কাজ করছে এবং তার সাথে আমার ইউনিয়নের অন্যান্য ছেলে মেয়েরাও একসাথে যুক্ত হয়ে এ কাজ করছে। যেহেতু এ পেশায় পড়াশোনার পাশাপাশি সৎভাবে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা যায়। সেহেতু আমি তাদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।
সিরাজের এই উদ্যোগের প্রশংসার কথা জানালেন ঠাকুরগাঁও বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক “নুরেল হক ” তিনি বলেন জেলার প্রত্যন্ত একটি গ্রাম ভাতুরিয়া সেই গ্রামের একজন উদ্যোক্তা সিরাজুল ইসলাম সিরাজ তিনি ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করছেন। প্রতিনিয়ত সে তার কর্মীর সংখ্যা বাড়াচ্ছের এবং তার মাধ্যমে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। তাকে আমরা অবশ্যই সাধুবাদ জানাই।
তার এই ফ্রিল্যান্সিং’র কাজকে আরো সম্প্রসারিত করতে তাকে আমরা যে কোন প্রকারের সহযোগিতা করব।
শুধু এরাই নয়! এদের মতো পড়াশোনা সহ বিভিন্ন কাজের পাশাপাশি সমাজের প্রতিকূলতা পেরিয়ে আউটসোর্সিং এর কাজ করে। জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে যেমন ইমন রেজা, আব্দুল্লাহ আল-আমিন, শেখ ফরিদ সুজন, রিয়াজুল ইসলাম রুবেল, নাঈম সিদ্দিকী সহ অনেকেই আজ পড়াশোনার পাশাপাশি উদ্যোক্তা সিরাজের টিমে থেকে কাজ করে তারাও আজ স্বাবলম্বী ।
মন্তব্য