রুমান শাহরিয়ার, জামালপুর জেলা প্রতিনিধিঃ-
প্রতি বছরের মতো জামালপুরের মেলান্দহে এবারও চলছে মাসব্যাপী বৈশাখী মেলা। দীর্ঘদিন থেকেই উপজেলার দুরমুঠ এলাকায় শাহ কামালের মাজারকে কেন্দ্র করে চলে আসছে এ বৈশাখী মেলা।
মেলায় সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উচ্চস্বরে মাইক ও সাউন্ড বক্স বাজানোয় শব্দ দূষণের শিকার হচ্ছে এসএসসি পরীক্ষার্থী ও অসুস্থ ব্যক্তিসহ শিশুরা। এছাড়াও মেলার মাঠে বিভিন্ন ডেরা বানিয়ে সেখানে চলছে মাদক সেবন ও বিক্রি। এ নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয়দের মাঝে।
জানা গেছে, গত ১৪ এপ্রিল (পহেলা বৈশাখ) থেকে শুরু হয়েছে এ মেলা। চলবে পুরো বৈশাখ মাস জুড়ে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মেলায় নানা ধরনের আয়োজনের পাশাপাশি চলছে নেশার আড্ডা, এটি কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। এছাড়া ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মেলার মাইক ও সাউন্ড বক্সে উচ্চশব্দে বাজানো হচ্ছে গান। এর ফলে এলাকার শিক্ষার্থী, শিশু, রোগীসহ স্থানীয়দের মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। জানা গেছে, মেলায় বিভিন্ন পণ্যের শতাধিক স্টল রয়েছে। প্রতিট স্টলের জন্য মেলা কমিটিকে দিতে হচ্ছে ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এতে মেলায় বাণিজ্য হচ্ছে কয়েক কোটি কাটার। প্রতিদিন মেলা প্রাঙ্গণে চলছে সার্কাস, চরকি ও নানা গানের আসর।
স্থানীয়রা জানান, এসএসসি পরীক্ষার মধ্যে মেলা চালানো কোনোভাবেই ঠিক হচ্ছে না। মেলার মাইক ও সাউন্ড বক্সের উচ্চশব্দে পরীক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে। মাদকের ভয়াবহতা তো আছেই। মেলার আয়োজক কমিটি পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা না করে মেলা চালু রেখেছেন, যা নিন্দনীয়। দ্রুত মেলা বন্ধ করলে পরিক্ষার্থীসহ স্থানীয়দের উপকার হবে।
স্থানীয় এসএসসি পরিক্ষার্থীরা জানান, মেলায় দিনে-রাতে প্রায় সময়ই উচ্চ শব্দে মাইকে গান বাজানো হচ্ছে।
পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বলেন, যেভাবে উচ্চ শব্দে মাইক বাজানো হচ্ছে এতে করে আমাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার বিঘ্ন ঘটছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেন দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয় এ দাবি জানিয়েছে তারা। এ বিষয়ে মেলার সার্বিক বিষয় দেখভাল করা দুরমুঠ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ খালেকুজ্জামান জুবেরী মুঠোফোনে দৈনিক যুগের কণ্ঠস্বরকে বলেন, ‘মাজার মেলায় আসা পাগলেরা মাদক খায় এটা দীর্ঘদিন থেকেই চলছে। পাগলেরা মাদক খায় সারা বাংলাদেশ জানে, এটা সর্বজনীন স্বীকৃত, ওপেন সিক্রেট বিষয়। এটা প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে থাকে, আমরাও থাকি।’
তিনি বলেন, ‘তবে যুব সমাজ যেন এতে জড়িত না হতে পারে এজন্য আমরা চেস্টা করছি। আর উচ্চ শব্দে গান বাজানোয় চলমান এসএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে বিঘ্ন ঘটায় প্রশাসনের নির্দেশে শনিবার মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’
মেলান্দহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন দৈনিক যুগের কণ্ঠস্বরকে বলেন, ‘আমারা সাধ্যমতো মাদক নির্মূলের চেস্টা চালাচ্ছি। কয়েকবার মেলায় অভিযান চালিয়েছি। এ সময় আমাদের চোখে এমন কিছু পড়েনি। আবার গিয়ে যদি দেখতে পাই তাহলে ব্যবস্থা নেব।’
জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান যুগের কণ্ঠস্বরকে বলেন, ‘বিষয়টি এই প্রথম জানলাম। মেলার অনুমতি কে দিয়েছে জানি না। তবে আমি বিষয়টি জানলাম, এবার দেখবো।’
মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সেলিম মিঞা যুগের কণ্ঠস্বরকে বলেন, ‘ইতোমধ্যেই মেলায় যেন উচ্চ শব্দে গান না বাজে সে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে দ্রুত সময়ে সরেজমিনে গিয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’