শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
 

পাকতে শুরু করেছে সোনারগাঁয়ের রসালো লিচু, ভালো দাম পাওয়া নিয়ে শংকা।

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশ: ১১ মে ২০২৩

---

ইমরান হোসেন তালহা,

বাংলার ঐতিহ্যবাহী মসলিন খ্যাত ঈশাখার রাজধানী নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ লিচুর জন্য বিখ্যাত। এখানকার লিচু সুস্বাদু, সুমিষ্ট ও রসালো হওয়ায় লিচু সবার পছন্দের শীর্ষে থাকে। এছাড়াও সোনারগাঁয়ের আবহাওয়া লিচুর অনুকুলে থাকায় আগাম বাজারে আসে বলে দেশের বিভিন্ন স্থানের লিচুর তুলনায় এ লিচুর চাহিদা থাকে অনেক বেশী।

এদিকে প্রচণ্ড তাপদাহে পাকতে শুরু করেছে লিচু। ইতোমধ্যে বাজারে বিক্রিও শুরু হয়েছে। অনেকে সরাসরি বাগান থেকে লিচু কিনছেন। পাইকার ও মহাজনদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে বাগানগুলো।

লিচু বাগানের চাষি ও ব্যবসায়ীরা আশা করছেন আগামী সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে বাজারেও বিক্রি শুরু হবে। তবে এবার বৃষ্টি একেবারেই কম হওয়ায় আকৃতিতে লিচু তেমন বড় হয় নি, ফলনও কিছুটা কম হয়েছে। এর ফলে বাজারে লিচুর ভালো দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন লিচু চাষীরা। তারপরও সময় মত বাজারে লিচু বিক্রি করতে পারলেই পরিবারে আর্থিক সংকট অভাব-অনটন থাকবেনা বলে আশাবাদী তারা।

বর্তমানে শেষ সময়ে লিচু চাষীরা তাদের লিচু বাগানে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। তারা তাদের লিচু বাগান পাহারা দিচ্ছেন। অনেকেই আবার বাজারে লিচু বিক্রি করার জন্য টুকরি, বাঁশ, রশিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম সংগ্রহ করছেন।

বর্তমানে বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা লিচু কেনার জন্য লিচু বাগানগুলোতে আসছেন। অনেক পাইকাররা লিচু বাগানের মালিকদের কাছে গাছ কেনার জন্য দরদাম করছেন। দেখতে আসা পর্যটকরাও অনেকে বাগান থেকে টাটকা লিচু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সোনারগাঁ উপজেলার ৬৭২টি বাগানে ১৫০ একর জায়গা জুড়ে লিচুর আবাদ করা হয়েছে। সোনারগাঁ পৌরসভা, বৈদ্যেরবাজার, মোগরাপাড়া, বারদী, সনমান্দি, সাদিপুর ইউনিয়নের খাসনগর, চিলারবাগ, দৈলরবাগ, পানাম, নোয়াইল, দত্তপাড়া, বাগমুছা, অর্জুন্দী, হাতকোপা, দরপত, ছাপেরবন্ধ, গোয়ালদী, টিপরদী, হরিষপুর, ভট্টপুর, লোকশিল্প জাদুঘর, গোবিন্দপুর, গাবতলী, হারিয়া, বারদী, সেনপাড়া, বালুয়া দিঘীরপাড়সহ বেশির ভাগ গ্রামেই লিচুর বাগান আছে।

এরমধ্যে বৈদ্যেরবাজার, মোগরাপাড়া. বারদী, সাদিপুর ও জামপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে আবাদ করা লিচুর খ্যাতি আছে দেশজুড়ে। তবে বৃষ্টি না হওয়ার কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় বছর লিচুর ফলন কম হয়েছে।

সোনারগাঁয়ের লিচু চাষিরা জানান, বর্তমানে কদমী, মোজাফফরপুরী, চায়না-৩, এলাচি ও পাতি এ পাঁচ ধরনের লিচুর চাষ হয়ে থাকে। তবে অন্যান্য লিচু থেকে বর্তমানে কদমী লিচু চাষের প্রতি চাষীরা মনোযোগী হয়ে পড়েছেন বেশি। সোনারগাঁয়ে অন্যান্য ফসলের চাষ বাদ দিয়ে চাষিরা এখন লিচু চাষে আগ্রহী হয়েছেন।

প্রতি বছর এক একটি বাগান ৪/৫ লাখ টাকায় বিক্রি হয়। তাই চাষীরা কোথাও একটু খালি জায়গা পেলেই সেখানেই কদমী লিচুর বাগান তৈরি করছেন। এ বছর কদমী লিচু প্রতি শ বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকায়। পাতি ও বোম্বাই লিচু বিক্রি হচ্ছে প্রতি শ ৩৫০-৪৫০ টাকায়।

লিচু বাগান মালিক জামান জানান, জন্মের পর থেকেই তিনি লিচু চাষ করে আসছেন। তার ছয় ভাইয়ের ৬টি লিচু বাগান রয়েছে। তার দুই বিঘা জমিতে একটি লিচু বাগান রয়েছে। যেখানে ৬৫টি লিচু গাছ রয়েছে।

এ বছর বেশি গরম পড়ায় লিচু আগে পেকে গেলেও লিচু আকারে তেমন বড় হয়নি। এবার লিচু আকারে ছোট হলেও তিনি আশা করছেন গত দুই বছরের তুলনায় লিচুর ভালো দাম পাবেন।

হাসান মিয়া নামের আরেক লিচু বাগান মালিক জানিয়েছেন, আশা ছিল গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার লিচুতে বেশি লাভবান হবো। তবে লিচু আকারে ছোট হওয়ার ভালো দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। সার থেকে শুরু করে সব কিছুর দাম বেশি, তাই ভালো দাম না পেলে আমাদের বিকল্প কিছু দেখতে হবে।

আকবর আলি নামের আরেক লিচু বাগান মালিক জানান, আশা ছিল গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার লিচুতে বেশি লাভবান হবো। তবে লিচু আকারে ছোট হওয়ার ভালো দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। সার থেকে শুরু করে সব কিছুর দাম বেশি তাই ভালো দাম না পেলে আমাদের বিকল্প কিছু দেখতে হবে।

শ্যামবাজার থেকে সোনারগাঁয়ে লিচু কিনতে আসা এক পাইকারী ব্যবসায়ী জানান, সবসময় এখান থেকে লিচু কিনতে আসা হয়। এবার এখনো কোনো বাগান থেকে লিচু কেনা হয় নি। বিভিন্ন বাগান ঘুরে দেখছি যে বাগানের লিচু ভালো মনে হবে সেখান থেকেই লিচু কিনে নিয়ে যাবো।

সোনারগাঁয় বেড়াতে আসা ফেরদৌসি আক্তার রেহেনা জানান, প্রতিবছরই লিচু পাকার মৌসুমে পরিবার পরিজন নিয়ে সোনারগাঁয় বেড়াতে আসেন। বাগান থেকে লিচু কিনে নিয়ে যান। আত্মীয় স্বজন, পরিচিত ও শুভাকাঙ্খিদের মাঝে বাগান থেকে কেনা লিচু বিতরণ করে থাকেন।

বাগানে ঘুরতে আসা একদল কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, সোনারগাঁয়ে রয়েছে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। পাশাপাশি সোনারগাঁর লিচুর ঐতিহ্য পুরনো। আনুমানিক ৩০০ বছর আগে পর্তুগিজরা এ এলাকায় প্রথম লিচু চাষ করে। ইতিহাস ঐতিহ্যকে স্মৃতির ডায়েরিভুক্ত করতেই এখানে আসেন তারা।

তারা বলেন, গাছে গাছে থোকা ধরে পাকা ও আধাপাকা লিচু ঝুলছে দেখতেই মন জুড়িয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন লিচু গাছে রঙ ধরেছে। যেনো তুলির আচড়ে সাজানো বাগান। এই পরিবেশে বেশ ভালো সময় কাটছে তাদের। এছাড়া গ্রীষ্মের প্রখর রোদে সোনারগাঁয়ের লাল টসটসে লিচু তাদের রসনা তৃপ্ত করছে।

্এদিকে স্থানীয়রা জানান, অসাধু লিুচ বাগান চাষিরা অতিরিক্ত খরার মধ্যে লিচুতে রঙ ধরার জন্য এক প্রকার ওষুধ ব্যবহার করেছেন। ফলে লিচু পরিপক্ক না হওয়ার পরও দ্রুত লিচুতে পাকা রঙ ধরে আছে। এ ছাড়াও লিচু অল্পসময়ের মধ্যে বড় আকার ধারণ করতে হরমুন ওষুধ ব্যবহার করে, যা মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর।

সোনারগাঁও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আফরোজা সুলতানা জানান, বৃষ্টিপাত তেমন না হওয়ায় গত বছরের তুলনায় লিচু আকৃতিতে তেমন বড় হয়নি। প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে লিচুর অনেক গুটি গাছ থেকে ঝড়ে পড়েছে।

লিচুর মুকুল আসা থেকে শুরু করে এখনো পর্যন্ত আমাদের পক্ষ থেকে লিচু চাষিদের সব ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। লিচুর বাগান মালিক ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা লিচুর ভালো দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করলেও আশাবাদি লিচু বিক্রি করে তারা লাভবান হবেন।

মন্তব্য

পঠিতসর্বশেষ

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon