শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
 

(জবি) কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

ক্যাম্পাস
প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৩

---

জবি প্রতিবেদক: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক সহকারী রেজিস্ট্রার মো. আব্দুল কাদের (কাজী মনির)। এই পদের প্রভাব খাটিয়ে কর্মকর্তা হয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত তিনি। ক্ষমতা দেখিয়ে টেন্ডার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সবার অগোচরেই বসিয়েছেন পানির পাম্প। এছাড়া রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাছ চুরি, পুকুরে চুরি করে মাছ চাষ, সদরঘাটে বাস ব্যবসা নিয়ন্ত্রণসহ নানা বিতর্কিত কাজের অভিযোগ। এতে সমালোচনার মুখে পড়লেও কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ড. কামাল উদ্দিন আহমদের বিশেষ আশীর্বাদেই তিনি এমন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসে প্রায় ৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকার পানির পাম্প বসানোর প্রকল্পের কাজ পান অমিত কুমার নামে এক ঠিকাদার। সেই কাজের অনুমতি (ওয়ার্ক অর্ডার) দেয়া হয়নি বলে কাজ করেননি তিনি। তবে তার অগোচরেই পানির পাম্প বসান কর্মকর্তা কাজী মনির। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়ার পরও কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই কম গভীরতায় নিজ উদ্যোগে পানির পাম্প বসান মনির। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর আপত্তি জানায়। পাম্প তুলে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এমন কর্মকাণ্ডে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দপ্তরে নানা সমালোচনার সৃষ্টি হয়। সমালোচনার পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ড. কামালউদ্দিন আহমদের প্রশ্রয়ে কাজী মনিরের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

এবিষয়ে জানতে চাইলে কর্মকর্তা কাজী মনির বলেন, ‘আন্ত:বিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্টের খেলা শুরু হয়ে যাওয়ায় ট্রেজারার পাম্প বসানোর জন্য ইমার্জেন্সি অনুমোদন দিয়েছিল। সেজন্য পাম্প বসানো হয়েছে। আমি এখানে থাকি। তাই আমি শুধু কাজের তদারকি করেছি। কাজ ঠিকাদারের মাধ্যমে হয়েছে।’

তবে কাজের ঠিকাদার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী বলেন ভিন্ন কথা। কাজী মনিরের সাথে সমন্বয় করে পাম্প বসানোর কাজ করে নি বলে দাবি করেন ঠিকাদার অমিত কুমার। এবিষয়ে ঠিকাদার অমিত কুমার বলেন, ‘পাম্প বসানোর কাজ আমি পেয়েছি। আমাকে ক্রীড়া দপ্তর থেকে বলা হয়েছিল পাম্প বসাতে। কিন্তু ওয়ার্ক অর্ডার (কাজের অনুমতি) না পাওয়ায় কাজ করি নি। কারা পাম্প বসিয়েছে তা আমার জানা নেই।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ‘ওয়ার্ক অর্ডার হওয়ার আগেই কাজী মনির ওখানে পাম্প বসিয়েছিল। ওটার কোনো অনুমতি ছিল না। আর গভীরতাও খুব অল্প ছিল। সেজন্য আমরা তুলে ফেলার কথা বলেছিলাম।’

এদিকে অনুমতি ছাড়াই নতুন ক্যাম্পাসে চাষে নিয়োজিত রয়েছেন কাজী মনির। সরেজমিনে দেখা যায়, ক্যাস্পাসের খেলার মাঠে কয়েক বিঘা জমিতে কর্মকর্তা কাজী মনিরের কোনো জমিতে লাউ, টমেটো, বেগুন, পেঁয়াজ, রসুন, পালংশাক, লালশাক চাষ হচ্ছে। ক্ষেতে পানি দেওয়ার জন্য দেখা গেছে সেচের পাইপও। এসব জমিতে সেচের ব্যবস্থা করতেই কাজী মনিরের তড়িঘড়ি করে পাম্প বসানোর একটি কারণ বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে সম্প্রতি মুজাহিদনগর মাদরাসার সড়কের পাশে বিশ্ববিদ্যালয়ের জমিতে বেশ কয়েকটি মোটা আকাশমণি গাছ কাটা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। সেসময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ, শিক্ষক সমিতি ও প্রকৌশলী দপ্তরের কর্মকর্তারা নতুন ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেন। সেসময় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদকে বলা হয়, কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী মনির এসব গাছ কেটে রেখেছেন। তখন ট্রেজারার বলেন, ‘এখানে ক্যাম্পাসের বিল্ডিং করা লাগবে মনে হয়।’ তখন কর্মকর্তাদের মধ্যে উত্তর আসে, মনির গরুর খামার করবে, তাই গাছ কেটে রেখেছে। তখন ট্রেজারার চুপ হয়ে যান। সেই সময় উপস্থিত একাধিক সিনিয়র অধ্যাপক ও কর্মকর্তা এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে নতুন ক্যাম্পাসের পুকুরে চুরি করে মাছ চাষ করে সমালোচনার মুখে পড়েন কাজী মনির। নতুন ক্যাম্পাসে ২০-৩০ টি পুকুরে মাছের পোনা ছাড়েন তিনি। পানি কমে গেলে পাশের পুকুর ও খাল থেকে মাটি কেটে পানি ঢুকান তিনি। পরে বিশ্ববিদ্যালযের সবাই জানতে পারলে সমালোচনার মুখে মাছ চাষ থেকে সরে আসেন মনির।

অন্যদিকে সরকারী চাকুরীজীবিদের ব্যবসায় যুক্ত না হওয়ার নির্দেশনা থাকলেও সাভার পরিবহনে কয়েকটি গাড়ি রয়েছে কাজী মনিরের। সদরঘাটে একসময় বাহাদুর শাহ পরিবহণ নিয়ন্ত্রণ করতে তিনি। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আমি এই বিষয়ে কথা বলতে রাজি না।’

এবিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও প্রকল্প পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ইমার্জেন্সি পাম্প বসানোর কোনো অনুমোদন দেয়া হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। এটা প্রকৌশল দপ্তর ভালো বলতে পারবে। আর বিশ্ববিদ্যালয় কাউকে জমি চাষাবাদ করার জন্য কোনো অনুমতি বা ইজারা দেয়না।’ এবিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক, এসব বিষয়ে আমি অবগত নই।

মন্তব্য

সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon