রুমান শাহরিয়ার, জামালপুর জেলা প্রতিনিধিঃ- জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে বিদ্যালয়ের বকেয়া পরিশোধ করতে না পেরে শিক্ষকের লজ্জার হাত থেকে বাঁচতে লাভনী আক্তার নামে অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।
সোমবার সকালে উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের তারাকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের তারাকান্দি গ্রামের মুদি দোকানদার লাল মিয়ার তিন মেয়ে। তাদের মধ্যে লাভনী আক্তার দ্বিতীয়। সে রুদ্র বয়ড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। চলতি মাসের ৭ তারিখে তার অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হলে লাভনীকে দুই হাজার ২শত টাকা পরিশোধ করতে হবে বলে জানিয়ে দেয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এর আগে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি করা টাকা নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ করতে না পেরে অনেক শিক্ষার্থীকে অপমান-অপদস্থ হতে হয় বলেও জানা যায়। এ কারণে সোমবার সকালে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি করা টাকা না নিয়ে বিদ্যালয়ে যাবে না বলে বাড়িতে বায়না ধরে লাভনী। পরে তার বাবা-মা অর্ধেক টাকা জোগাড় করে দিলেও কর্তৃপক্ষের কাছে লজ্জা পাওয়ার ভয়ে বিদ্যালয়ে যেতে রাজি হয়নি সে। সকাল সাড়ে ১০টায় পরিবারের লোকজন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লে বসতঘরের ধরনার সাথে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে লাভনী। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সুরতহাল রিপোর্ট করে লাশ দাফনের অনুমতি দেয়।
এবিষয়ে স্থানীয় হাবু মিয়া বলেন, রুদ্র বয়ড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কোনো বিষয়ে এক টাকাও কম নেন না। তার কাছে কোনো অনুরোধই কাজে আসে না। ওই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণি পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক উজ্জল মিয়া বলেন, তার মেয়ের বেতন দিতে এক দিন দেরি হয়েছিল। এ কারণে মেয়েকে রোদে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল। লাভনীর বাবা লাল মিয়া ও মা ফাহিমা বেগম বলেন, অর্ধেক টাকা জোগাড় করে দিয়েছিলাম। কিন্তু মেয়ে লজ্জা পাওয়ার ভয়ে টাকা নিয়ে স্কুলে যায়নি। পরে পরিবারের লোকজনের অজান্তে ঘরের ধরনার সাথে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
এবিষয়ে পোগলদিঘা ইউপি সদস্য আফজাল হোসেন বলেন, বেতন দিতে না পারায় লাভনী আত্মহত্যা করেছে। রুদ্র বয়ড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুর রহমান বাছেদ বলেন, বিদ্যালয়ের পাওনা আদায়ের জন্য কোনো শিক্ষার্থীকে চাপ দেওয়া হয় না। কোনো শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে থাকলে সেটা হয়তো অন্য কোনো বিষয়ে করেছে। এবিষয়ে তারাকান্দি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই আমজাদ হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে অভিমানে অষ্টম শ্রেণিতে পড়া ছাত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়।
মন্তব্য