বুটেক্স প্রতিনিধি: বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুটেক্স) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ছয় হাজার শিক্ষার্থীকে অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদানের নিয়মে ক্ষোভ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু ও বুটেক্স শিক্ষার্থীদের।
একদিকে এইচএসসি ফলাফলের উপর ভিত্তি করে মোট ৬০১৩ শিক্ষার্থীকে লিখিত পরীক্ষার জন্য মনোনয়ন করা হয়। অন্যদিকে মনোনীত শিক্ষার্থীর মাঝে প্রবেশপত্র সংগ্রহ করে কেবল সাড়ে চার হাজার শিক্ষার্থী। এত কম সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে ভর্তি পরীক্ষার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশাসনের প্রতি ক্ষুব্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এইচএসসি ফলাফলের উপর ছাটাইকরণ, কম শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় সুযোগ প্রদান, ভর্তি পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণসহ আরও নানা অভিযোগ আসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
এর আগে বুটেক্সে ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় উচ্চমাধ্যমিকে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও উচ্চতর গণিতে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ নম্বরের ভিত্তিতে প্রথম ৬ হাজার জনকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের কথা বলা হয়, এতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কেন কেবল ৬ হাজার শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষায় সুযোগ দেওয়া হবে তা জানতে চাইলে গত ৫ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহ আলিমুজ্জামান বলেছিলেন, আমরা আগেরবারের মতো আমাদের ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাহিরে অধিক শিক্ষার্থী পরীক্ষা নিবো না, এবার কেবল বুটেক্স ক্যাম্পাসেই আসন সংখ্যার দশগুণ ছয় হাজার শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় সুযোগ দিবো।
গত ১৩ মে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হলে আবেদন জমা পড়ে ১৩৫৫৬টি। এরা সবাই ২০০টাকা নিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে আবেদন করে। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায় এবারের উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফলে লাখো শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পায়। যেহেতু ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে কেবল ছয় হাজার শিক্ষার্থীর কথা বলা হয়েছে তাতে অনেকে দ্বিধায় ছিল এত ভালো ফলাফলের ভিড়ে তাদের নাম আসবে কিনা, এতে অনেকে প্রাথমিক আবেদনটুকুও করে নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ গত ২৪ মে ৬০১৩ জন শিক্ষার্থীর নাম প্রকাশ করে যেখানে চূড়ান্ত লিখিত পরীক্ষায় সুযোগ পাওয়া ভর্তিচ্ছুর পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও উচ্চতর গণিতে প্রাপ্ত নাম্বার ছিলো ৬০০ নম্বরে ৫৬৯ ও তার বেশি। এতে গড়ে প্রতি বিষয়ের ৯৫ নম্বর পেতে হয়েছে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য। সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মাঝে বোর্ড ভিত্তিক হিসাবে ঢাকা বোর্ডের শিক্ষার্থী ৬২.৬ ভাগ। অন্যান্য বোর্ডের হিসেবে কুমিল্লা বোর্ড থেকে ৪.৩, সিলেট বোর্ড হতে ১.৫৬, চট্টগ্রাম বোর্ড হতে ৪.৪, যশোর থেকে ৯.১, ময়মনসিংহ বোর্ড হতে ৩.৩, দিনাজপুর বোর্ড হতে ৩.৭৭ ভাগ শিক্ষার্থী সুযোগ পায়।
এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানান, ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা বিভাগের শিক্ষার্থীরা বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে, এমন অবস্থায় ঢাকার বাহিরের শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে। কেবল এইচএসসি ফলাফলের উপর ছাটাইকরণে ভর্তিচ্ছুরা বঞ্চিত, এতে পরীক্ষা পদ্ধতির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।
আরেক শিক্ষার্থী জানান, শর্ট সিলেবাসে ও সহজ মানবন্টন কাঠামোতে এইচএসসি পরীক্ষা হওয়ায় সিংহভাগ শিক্ষার্থী উল্লেখযোগ্য নম্বর পায়, যা করোনাপূর্ববর্তী সময়ে হওয়া এইচএসসির সাথে সম্পূর্ণ আলাদা।
এরপর ২৬ মে যোগ্যপ্রার্থীরা ৮০০ টাকা প্রদান করে ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র সংগ্রহ করার কথা থাকলে প্রবেশপথ সংগ্রহ করার শেষ দিনে দেখা যায় মোট প্রবেশপত্র সংগ্রহ করে মাত্র ৪৫৬৩ জন। এই সাড়ে হাজার শিক্ষার্থী নিয়েই ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করতে যাচ্ছে দেশে একমাত্র টেক্সটাইল প্রকৌশলে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়টি।
ভর্তি পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে আরেকজন শিক্ষার্থী জানান, বুটেক্সে ভর্তি পরীক্ষার পরের দিন প্রকৌশল গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা। তাই ঢাকার বাহিরের শিক্ষার্থীদের জন্য কষ্ট হয়ে যায় পরপর দুইদিন ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে। তাছাড়া বুটেক্সে আসন ৬০০, আর প্রকৌশল গুচ্ছে আসন ৩২৩১টি। এতে প্রকৌশল গুচ্ছই শিক্ষার্থীরা বেছে নিয়েছে। প্রাথমিক আবেদন কম পরে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে কী করা যেত প্রশ্নে একাধিক শিক্ষার্থী সাথে কথা বলে একজন জানান, যদি প্রাথমিকভাবে নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষার মাধ্যমে আবেদনকারী সকলকে পরীক্ষায় সুযোগ দেওয়া হয় এবং প্রাথমিক পরীক্ষার পর উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে কমপক্ষে দশ হাজার ভর্তিচ্ছু চূড়ান্ত লিখিত পরীক্ষায় সুযোগ দেয় তাহলে ভালো হতো।
উদ্ভূত সমস্যার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকের সাথে কথা বললে অনেকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সংখ্যা ছয় হাজারের চেয়ে বাড়ানোর জন্য মত প্রকাশ করলেও অনেক শিক্ষক এতে কোনো মতামত দেন নি।
উল্লেখ্য, এবারের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ১৬ জুন (শুক্রবার)। দুই ঘন্টার পরীক্ষা সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হয়ে চলবে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত।
মন্তব্য