মোঃ মিনহাজ আলম, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ আষাঢ় ও শ্রাবণ মাস বর্ষাকাল। ঠাকুরগাঁওয়ে এ সময় ফসলি জমিতে পানি্তে টইটম্বুর হয়ে থাকে। কিন্তু এবারের তীব্র রোদ ও খরায় জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। যার কারণে আমন চারা রোপণে বিপাকে ঠাকুরগাঁওয়ে কৃষকেরা। পানির অভাবে রোপণ করতে পারছেন না আমনের চারা।
আমরা জানি বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টি হয়। পানিতে ডুবে থাকে আমন রোপনের জমি। শুধু হাল চাষ দিলেই প্রস্তুত হয়ে যায় ফসলি জমি। তবে এবারে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। প্রখর রোদ ও তাপদাহ যেন গ্রীষ্মের মত। বোঝার উপায় নেই এখন বর্ষাকাল না গ্রীষ্মকাল।
রোপন করা আমন চারা পানির অভাবে শুকিয়ে মারা যাচ্ছে। তাই শ্যালো মেশিন ও ডিপ টিউবয়েল দিয়ে সেচ দিতে হচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকদের। যা সামর্থ্যহীন কৃষকের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না । বেরেছে ডিজেল ও পেট্রলের দাম। তাই সেচ দিয়ে অনেকের পক্ষে চারা রোপন করা অসম্ভব হয়ে পরেছে।
কৃষকরা জানান, অনাবৃষ্টির ফলে জমিতে পানি নেই । পানির অভাবে শুকিয়ে গেছে জমি। তার ওপর ডিজেল,পেট্রোলের যে দাম আমাদের পক্ষে শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দেওয়া সম্ভব না।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমন ফসল শুরু থেকেই বৃষ্টি নির্ভর। যা আমরা অনেক আগে থেকেই দেখে আসছি। মাঝে মাঝে বৃষ্টি হয় এবং কখনো কখনো খরা অবস্থা দেখা দিলে আমরা সম্পূরক সেচ প্রদান করি। এটি নতুন বিষয় নয়। বোরো ফসল আমরা শতভাগ সেচ দিয়েই রোপন করি সেক্ষেত্রে বোরো ফসল যদি আমাদের জন্য লাভজনক হয়, তাহলে আমন ফসল কেন লাভজনক হবে না। অবশ্যই আমাদের আমন ফসলও লাভজনক। আমরা এখন অল্টারনেটিপ ওয়েটিং এন্ড ড্রাইং পদ্ধতি ব্যবহার করছি ।
গত দশদিন আগেও ঠাকুরগাঁওয়ে বৃষ্টিপাত ছিলো । কিন্তু এখন এই খরায় আমাদের যেই জমিতে রসের ঘাটতি হয়েছে একটু বৃষ্টি পাত হলেই কিন্তু আমাদের সেই অল্টারনেটিপ ওয়েটিং এন্ড ড্রাইং পদ্ধতি অটোমেটিক হয়ে যাবে তাহলে আর ফসল নষ্ট হবে না। বোরো ধানের সেই প্রেক্ষিতে চিন্তা করলে অবশ্যই আমন ফসল লাভজনক।
তিনি আরোও জানান , এখনো আগষ্ট মাসের পুরো সময়টি রয়েছে আমন চারা রোপনের ।তাই কৃষকের চিন্তার কোনো কারন নেই । আমরা আশা করছি কয়েক দিনের মধ্যেই বৃষ্টি হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য বলছে, চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৩৭ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ থেকে ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৩৩০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের আশা করছে কৃষি বিভাগ। এখন পর্যন্ত চারা রোপণ হয়েছে ৭০ ভাগ জমিতে।
তবে আমনের সাথে সাথে পাট নিয়েও বিপাকে কৃষক। পানির অভাবে কৃষকরা এখনও কাটতে পারছেন না ক্ষেতের পাট। এরই মধ্যে যেসব কৃষক পাট কেটেছেন, তারা পাট যাগ দেওয়া নিয়ে পড়েছেন বিপাকে । নেই পানি তাই পচাতে পারছেনা পাট।
সামর্থ্যবান কৃষকরা শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে পুকুরে পানি সেচ দিয়ে পাট যাগ দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন। অথচ সামর্থ্যহীন কৃষকরা পানির অভাবে জমি থেকে পাট কাটতে পারছেন না এখনোও পর্যন্ত। এর ফলে জমিতে পাটগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
পাট যাগ দেওয়ার বিষয়ে রিভোম রেডিং পদ্ধতিতে পাট জাক দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে কৃ্ষি বিভাগ ।
এবং এখন পর্যন্ত ১৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে পাট কর্তন সম্পুর্ণ হয়েছে ।পাটের অর্জিত জমি ৭ হাজার ৯০০ হেক্টর । এবং এখনোও পর্যন্ত ফলন পাওয়া গেছে প্রায় ১.৮ টন ।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, যেখানে পানি সংকট দেখা দিতে পারে সেই আশঙ্কার উপর ভিত্তি করে কৃষকদের সাথে নিয়মিত উঠান বৈঠক করা হচ্ছে। তাদেরকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কিভাবে নতুন পদ্ধতিতে পাট যাগ দেয়া যায়।
রিভোম রিডিং পদ্ধতিতে আগে পাটের আস ছিলে নিতে হবে, তারপর সেগুলো কুন্ডলী করে চারি এবং ছোট গর্তে পলিথিনে পানি ধারণ করে সেগুলোকে সেখানে যাগ দিতে হবে ।
মন্তব্য