বুটেক্স প্রতিনিধি
দেশে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে আধুনিকায়নের দিকে হাটছে সেখানে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) অনেকাংশে পিছিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ অনেক প্রক্রিয়া আধুনিকায়নে নতুন প্রযুক্তি সেবা গ্রহণ ও উন্নয়নের আশ্বাস দিলেও এখনও কোনো উদ্দ্যোগ দেখা যায় নি। তথ্য প্রযুক্তি (আইটি) আওতাধীন আধুনিকায়ন করা যায় এমন অনেক বিষয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানার পরও তাতে পদক্ষেপ গৃহীত না হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ কাজ করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের উন্নয়ন, ফলাফলের গোপনীয়তা রক্ষা, বিষয়ভিত্তিক মার্কসহ প্রতি সেমিস্টারের ফলাফল ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে জানানো, দ্রুত সময়ে মার্কশীট প্রাপ্তি, ফরম ফিলাপের জটিলতা দূরীকরণ, অফিসের হিসাব নিকাশে অটোমেশন, নোটিশ কপির ভালো কোয়ালিটি ওয়েবসাইটে আপলোড, ভর্তি পরীক্ষায় টেলিটক সেবার উপর নির্ভরশীলতা কাটিয়ে নিজস্ব অনলাইন প্রক্রিয়া চালু, ভর্তি পরীক্ষায় সাবজেক্ট চয়েজ অনলাইনে নেওয়া, প্রাতিষ্ঠানিক মেইলের স্টোরেজ বাড়ানোসহ আরও অনেক আইটি সংক্রান্ত উন্নতি চায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের পক্ষ হতে গুরুতর অভিযোগ আসে প্রতি সেমিস্টারে ফলাফল প্রকাশ নিয়ে। জানা যায়, সেমিস্টারের ফলাফল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয় পিডিএফ আকারে। যেখানে একটি ফাইলে মোট দশটি বিভাগের প্রায় ৬০০ জন শিক্ষার্থীর ফলাফল থাকে। এতে ফলাফলের গোপনীয়তা বজায় থাকে না। ফলাফল যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট উন্নয়ন করে শিক্ষার্থী তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে লগইন করে নিজের ফলাফল জানতে পারে তেমন প্রক্রিয়া চান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এক শিক্ষার্থী জানান, সেমিস্টার ফলাফলের পিডিএফ ওয়েবসাইটে আপলোডের পর কারো জানার বাকী থাকে না যে আমার ফলাফল কী হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফল একজন শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত বিষয়, এটার গোপনীয়তা রক্ষা না করে পিডিএফ আকারে উম্মোক্ত করায় বেশ বিব্রত হতে হচ্ছে। ওয়েবসাইটের কাঠামো নিয়ে অন্য এক শিক্ষার্থী জানান, ওয়েবসাইটের ইউজার এক্সপেরিয়েন্স এবং ইন্টারফেস দুটোই অনেক পুরোনো। এটি আরও ডায়নামিক করা দরকার। আর ওয়েবসাইটের সিকিউরিটিও তেমন ভালো মনে হচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে পোহাতে হচ্ছে সেমিস্টারে ফরম ফিলাপের প্রক্রিয়া নিয়ে। প্রতি সেমিস্টার পরীক্ষার সময় আবেদন পত্র হাতে লিখে জমা দিতে হয়, সাথে যুক্ত করতে হয় হল ও লাইব্রেরি ক্লিয়ারেন্স। যেসব শিক্ষার্থী হলে থাকে না তাদেরকে তিনটি হল ঘুরে হল ক্লিয়ারেন্স নিতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এক শিক্ষার্থী জানান, প্রতি সেমিস্টার পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের লাইব্রেরি ক্লিয়ারেন্স, হল ক্লিয়ারেন্স এবং রেজিস্ট্রেশন ফরম সংগ্রহ করে তা স্ব-স্ব ডিপার্টমেন্টে জমা দিতে হয়। অথচ একটি মানসম্মত ও ডিজিটাল ওয়েবসাইটের সার্ভারে শিক্ষার্থীদের তথ্য সংরক্ষিত থাকলে এসব নিয়ে ঝামেলা পোহাতে হত না।
প্রতি বছরে অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষার প্রক্রিয়া নিয়েও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা যায়। দেশে প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য নিজস্ব অনলাইন সিস্টেম থাকলেও বুটেক্সের নেই। এতে প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে টেলিটক সেবার উপর নির্ভর করে। ভর্তিচ্ছুদের আবেদন, কতজন আবেদন করলো, কতজন প্রবেশপত্র সংগ্রহ করলো সবকিছুর জন্য টেলিটকের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এক শিক্ষার্থী জানান, একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার নিজস্ব অনলাইন সিস্টেম নেই এটা কোনোভাবে মানা যায় না, এটা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তির সাথে যায় না।
তাছাড়া ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে অভিযোগ পাওয়া যায় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের বিভাগ নির্বাচন নিয়ে। এখনও অনলাইনে সাবজেক্ট চয়েজ প্রক্রিয়া নেই বুটেক্সে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কেবল বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি প্রদান করলেও আছে দশটি বিভাগ, যেখানে প্রতিটি বিভাগের প্রায় পড়াশোনা একই থাকলেও ভিন্ন ভিন্ন বিভাগের জন্য কারিকুলাম ভিন্নতায় শিক্ষার্থীদের স্পেশালাইড ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এতে শিক্ষার্থীরা অনেকাংশে কোন বিভাগে ভর্তি হবে সে ব্যাপার দ্বিধায় থাকলে ভর্তির দিন সিনিয়র ব্যাচের শিক্ষার্থীদের শরণাপণ্ণ হলে তারা অনেকক্ষেত্রে নিজের বিভাগে ভর্তি করানোর অভিযোগ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে এক শিক্ষার্থী জানান, যদি অনলাইন সিস্টেমে ভর্তিচ্ছুর সাবজেক্ট চয়েজ চালু করা যেত তাহলে সমস্যাটা হতো না। এতে অনলাইনে ভর্তিচ্ছুরা বাসায় বসে বিভাগ বিশ্লেষণ করে পছন
উদ্ভোত অভিযোগগুলোর প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের প্রোগ্রামার মোঃ আসিফুর রহমান বলেন, প্রক্রিয়া অটোমেশনের প্রক্রিয়া এ বছরে শুরু করার পরিকল্পনা আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের। এতে শিক্ষার্থীরা অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন, ফলাফল দেখা, হল ও লাইব্রেরি ক্লিয়ারেন্সসহ আরও অনেক সুবিধা পাবে। যদিও পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে এক বছর সময় লাগতে পারে।
প্রাতিষ্ঠানিক মেইল স্টোরেজ সংক্রান্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ফ্রি সার্ভিস ব্যবহার করা এবং অধিক শিক্ষার্থী থাকার কারণে এমনটা হচ্ছে। যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ গুগল স্টোরেজ কিনতে চায় তাহলে শিক্ষার্থীরা এর পাশাপাশি অন্যান্য সুবিধাগুলোও পাবে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কাবেরী মজুমদার বলেন, রেজাল্ট পাবলিকেশন খুব শীঘ্রই অটোমেশনে চলে যাচ্ছে। আর ওয়েবসাইট আপডেটে সময় লাগবে। কারণ এখানে জনবল বাড়াতে হবে। জনবলের স্বল্পতার কারণে সম্পুর্ণ অটোমেশনে যেতে সময় লাগবে।
এর আগে অনেক অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুই বছর আগে সোনালী ব্যাংক সেবা গ্রহণের মাধ্যমে সেমিস্টার ও ফরম ফিলাপের ফি মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে ফি প্রদান প্রক্রিয়া চালু করা হয়। এক শিক্ষার্থী জানান, ফি প্রদানের প্রক্রিয়ার ভোগান্তি দূর হলেও বাকিগুলোর কোনোটির জন্য প্রদক্ষেপ দেখা যায় নি। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠানটি কলেজ হতে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয়ে বর্তমানে এক যুগ পার করলেও এখনও যেন চলছে কলেজের মতো।
মন্তব্য