বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪
 

নারীর গর্ভে ‘গায়েবি সন্তান,প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ

JK0007
প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৩

---

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:, ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার ফড়িংগা দীঘি এলাকার কামাল হোসেনের স্ত্রী নূরবানু গর্ভবতী ছিলেন বলে দাবি করেন তিনি। আর জমি নিয়ে বিরোধের জেরে তার গর্ভপাত হয়েছে বলে অভিযোগ নুরবানুর। তবে সদর হাসপাতাল ও উপজেলা পরিবার পরিকল্পনার তথ্যমতে, নূরবানুর গর্ভে সন্তানের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। কিন্তু ঠাকুরগাঁও জেলা শহরের নিউ রহমান ডায়াগনস্টিক সেন্টাররে এক প্রতিবেদনে দেখা যায় নূরবানু গর্ভবতী ছিলেন।

জানা যায়, প্রতিবেশীর সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিবাদ রয়েছে কামাল-নূরবানু দম্পতির। বিবাদের জেরে উভয় পক্ষের সংঘাতকে কেন্দ্র করে ১ জুন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা করেন নূরবানুর ভাই আবুল কালাম আজাদ। মামলার অভিযোগপত্রে চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে নূরবানুর গর্ভবতী থাকা ও প্রতিপক্ষের সঙ্গে মারামারির সময় আঘাতপ্রাপ্ত হলে রক্তক্ষরণ হয়ে গর্ভপাতের দাবি করা হয়। এবং প্রমাণস্বরূপ ‘নিউ রহমান হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ল্যাব’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন দেখান এই দম্পতি।
তবে নূরবানুর গর্ভপাতের প্রতিবেদনে উল্লেখিত ঠিকানায় বা আশপাশে ‘নিউ রহমান হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়গনস্টিক ল্যাব নামক কোনো প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে যে নিউজ প্রকাশ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে অভিযোগ করেন মামলার বাদী আবুল কালাম আজাদ।

তিনি বলেন, ২০১৬ সালে নিউ রহমান হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়গনস্টিক ল্যাব নামে প্রতিষ্ঠানটি চালু হলে পরবর্তীতে ২০২০ সালে নিবন্ধনের জন্য নিউ রহমান হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়গনস্টিক সেন্টার নাম করণ করা হয়। সংবাদে ওই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার রেজিস্ট্রি খাতায় ৩১ মে বা আগে পরে নূরবানুর কোনো আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করার তথ্য পাওয়া যায়নি বলে যে উল্লেখ্য করা হয়েছে তাও মিথ্যা। কারণ ওই দিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে নুরবানুকে রেজিস্টার খাতায় লিপিবদ্ধ করেই নিউ রহমান ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করানো হয়।

অন্যদিকে ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন ডাঃ মো:নূর নেওয়াজ আহমেদ সাক্ষরিত একটি প্রত্যয়ন পত্র দেখা যায়, গোয়ালপাড়ায় নিউ রহমান হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়গনস্টিক সেন্টার রয়েছে। যার পূর্বে নাম ছিলো নিউ রহমান হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়গনস্টিক ল্যাব।
২০১৬,২০১৭,২০১৮ সালে উক্ত প্রতিষ্ঠানটি নিউ রহমান হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়গনস্টিক ল্যাব নামে রেজিষ্ট্রেশন থাকলেও বর্তমানে তা সংশোধন করে নিউ রহমান হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়গনস্টিক সেন্টার করা হয়। নিউ রহমান হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়গনস্টিক ল্যাব ও নিউ রহমান হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়গনস্টিক সেন্টার এক প্রতিষ্ঠান।

মামলার বাদী আবুল কালাম আজাদ অভিযোগ করে আরো বলেন, নূরবানুর ও তার স্বামী কামাল হোসেনের সাথে বিবাদী পক্ষের সাথে জমি-জায়গা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ ছিলো বলে সংবাদে যে প্রকাশ করা হয়েছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট। প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে ধান-মাড়া মেশিনকে কেন্দ্র করে আমার সাথে প্রতিবেশী কামরুজ্জামানের সাথে বাক-বিতণ্ড সৃষ্টি হয়। তার জের ধরে বিবাদী পক্ষ আমাদের চলাচলের রাস্তা বাঁশের বেড়া দিয়ে বিঘ্ন ঘটনায়। এসময় কামাল ও নূরবানু রাস্তায় চলাচলের বাঁধা প্রদানের কারণ বিবাদীদের জিজ্ঞাস করা মাত্রই তারা তাদের উপর চড়াও হয়ে লাঠিসোটা দিয়ে মারপিট শুরু করে। এসময় জবায়দুর রহমান, আব্দুল জব্বার, হায়দার আলীসহ অন্যান্যরা নুরবানুকেএলোপাতাড়ি মারধর করে মাটিতে ফেলে পেটে লাথি মারেন। এতে তার প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ শুরু হলে পরিবারের লোকজন নূরবানু ও কামালকে আহত অবস্থায় ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে রাত প্রায় সাড়ে ৯টায় ভর্তি করান।

রাত ১১টার সময় সার্জারি বিভাগের ডাঃ নূরবানুকে রক্তক্ষরণ অবস্থায় দেখতে পেয়ে জরুরী ভিত্তিতে আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে বলেন। ৩১ মে রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে জেলা পৌর শহরের গোয়ালপাড়ায় অবস্থিত নিউ রহমান ডায়গনস্টিক সেন্টার (ল্যাব) এ আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়। উক্ত আল্ট্রাসনোগ্রামে প্রতিবেদনে Incomplete Abortion পাওয়া যায়।

এবং গত ১১ এপ্রিল মাসেও শহরের নিরাপদ ডায়গনস্টিক সেন্টারে Pregnancy Test করালে সেখানেও Pregnancy Test Positive আসে।

প্রকাশিত সংবাদে আরো বলা হয় যে,নূরবানুর গর্ভে কোন সন্তান ছিলো না। অথচ জেনারেল হাসপাতালের গাইনি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিম নুরবানুর চিকিৎসা করেন এবং ভিকটিম নুরবানু সুস্থ হলে তার ছাড়পত্রে Incomplete Abortion with History of physical Assult অর্থাৎ আঘাতজনিত কারণে ভিকটিমের ভ্রুণ নষ্ট হয়েছে বলে উল্লেখ্য করেন।

এদিকে রাণীশংকৈল উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নরেশ চন্দ্র রায়ের দেওয়া তথ্যমতে, সেখানকার রেজিস্ট্রি খাতা অনুযায়ী নূরবানু নিয়মিত জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ি সেবন করলেও সন্তান নেওয়ার জন্য তিনি বর্তমানে কোন জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন করেন না বলে জানান মামলার বাদী।

এ বিষয়ে জানতে রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গুলফামুল ইসলাম মন্ডলের মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।

মন্তব্য

সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon