বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
 

ভূতের দল থানায় আত্মসমর্পণ করে ক্ষমাপ্রার্থনা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

 ---

মোঃ জিয়াউল ইসলাম,

বরগুনার পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের হাড়িটানা গ্রামে ভূত আতঙ্কে গ্রাম ছাড়া হয়েছিল এলাকাবাসী এমন একটি খবর একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর আতঙ্ক ছড়িয়ে এলাকায় ও আলোচনা -সমালোচনার জন্ম হয়েছিল।

হাড়িটানা এলাকার ভূতের বিষয়ে যারা ভূতের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছিলেন তারা গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে পাথরঘাটা থানায় হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ পাথরঘাটা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত ) মোঃ সাইফুর রহমান এর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে।

তখন হাড়িটানা গ্রামে ভূতের দেখা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি আলোচনা সমালোচনার জন্ম দেয়। প্রশ্ন উঠে আসলেই কি মানব সমাজে ভূত আছে? আতঙ্কের পাশাপাশি মানসিক বিপর্যস্তের মধ্যে পড়েছেন শিশু, বৃদ্ধ ও মহিলাদের মধ্য আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

এতে ভূতের আতঙ্ক স্থানীয়দের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। কিছু মানুষ বলছে, জ্বীন, শয়তানের আখরা রয়েছে এলাকায় ও কিছু মানুষ বলছে এলাকায় কোনো ভূত নেই, স্থানীয় মাদক ও চুরির চক্রের সদস্যরা কৌশল করতেই এই অপপ্রচার।

অপরদিকে ভূতকে কেন্দ্র করে এলাকায় চাঞ্চল্য তৈরি হলেও এখন স্থানীয়রা পড়েছে বিপাকে কতিপয় সাংবাদিক ও পুলিশের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

বিষয়টিকে জ্বিন-শয়তানের কর্ম বলে দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে ভূতের ভয়ে এলাকাবাসী পালিয়ে যাওয়ার তথ্য সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে যে লোক মিডিয়ায় আগের দিন বলছে ভূত দেখেছি সেই একই ব্যক্তি পরের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অস্বীকার করছে। প্রশ্ন ওঠে আগে তারা ভূতের পক্ষে বয়ান দিয়েছিল তারা আবার বয়ান ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে দেয়।

এলাকার এক মুরুব্বী জানান, কদভানু নামে একজন নারী শয়তানের আছরে প্রায় ৭ বছর আগে মারা যান। রাতে স্বামীর সঙ্গে এক বিছানায় ঘুমিয়ে ছিল, সকালে বাড়ির পাশে পুকুরে তার লাশ পাওয়া যায়। এভাবে আমাদের বাড়ির মধ্যে একাধিক ব্যক্তিকে রাতের আঁধারে মারধর করেছে এমনকি গভীর রাতে নাম বলেও ডাকে।

তিনি আরও বলেন, একটি বেসরকারি টেলিভিশনে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে এলাকায় ভূতের ভয়ে গ্রামছাড়া তা সঠিক নয়। ঐ সংবাদের কারণে দূর-দূরান্তের আত্মীয় স্বজন এবং পরিচিতরা আমাদের গ্রামের প্রতি ভিন্ন মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছে। ওই বাড়ির আরেক বাসিন্দা বাদল মুন্সি বলেন, ২৫ বছর আগের কথা। আমাদের বাড়ির সবাই বেড়াতে গিয়েছিল। আমি ও বাবা বাড়িতে ছিলাম। রাত তখন প্রায় ২টা হঠাৎ আমার বাবার দুইটা চিৎকার দেওয়ার শব্দ পাই। এ সময় কয়েকটি আছারের শব্দ পাই। কিছুক্ষণ পর বাবার রুমে এসে দেখি তিনি আর জীবিত নেই। এই থেকে আমি মনে করছি হয়তো এটা বদজ্জিনের কাজ হতে পারে। বাবা মারা যাওয়ার পর আমাকে কয়েকবার ভয়ভীতি দেখিয়েছে।এ বিষয় নিয়ে এলাকায় চঞ্চল্যকর সৃষ্টি হয়।

এদিকে গ্রামে ভূতে আক্রমণ বিষয়টি লোকমুখে প্রচারিত গুজব ছড়িয়ে পরলে পাথরঘাটা উপজেলার প্রশাসন নড়বড়ে বসে। শুরু করেন তদন্ত শেষ পর্যন্ত আসল রহস্য বেরিয়ে আসে। প্রশাসন বলেন এ বিষয়ে যদি কেউ গুজব ছড়ায় তার বিরুদ্ধে আইনানুক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে

এ আতঙ্ক ও গুজব সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে বুয়েটের একদল শিক্ষার্থীর নজরে আসে। এবং তারা এলাকায় পরিদর্শনে আসেন, যারা ভূত দেখেছে এমন তথ্য দিয়েছে তাদের সঙ্গে কথা বলেন। বুয়েট ভূত বিশেষজ্ঞ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলে এখানে ভূতের কোন অস্তিত্ব নাই এবং ভূত সম্পর্কে বিজ্ঞানী একটি সমর্থন করে ন। এদিকে ওই এলাকার যারা ভূতের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছিলেন তারা এলাকার জনসাধারণের তোপের মুখে পড়েন শেষ পর্যন্ত গত ১০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৮টার দিকে তারা পাঁচ জন থানায় এসে আত্মসমর্পণ করে ক্ষমাপ্রার্থনা করে। তারা সবাই জানান যে আমাদের ভুল হয়ে গেছে আমরা শখের ফানি ভিডিও মনে করে বক্তব্য দিয়েছিলাম। তাদের মধ্যে যারা রয়েছেন তারা হলেন। ১।মো: সোহাগ (২৭),২। সাগর (২৩) ৩।ইব্রাহিম (২০) ৪।আক্তার হোসেন(৪০)এবং মানিক (৩৫) চট্টগ্রাম থাকায় উপস্থিত হতে পারেনি।সবার বাড়ি পাথরঘাটা উপজেলা সদর ইউনিয়নের হাড়িটানা গ্রামে।

পাথরঘাটা থানায় যোগাযোগ করা হলে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মোঃ সাইফুর রহমান জানান, যারা হাড়িটানা গ্রামে ভূতের আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছিল তারা পাথরঘাটা থানা এসে আত্মসমর্পণ করে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছে। আমি বিষয়টি উপমহলে জানিয়েছি এ বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নিবেন।

মন্তব্য

পঠিতসর্বশেষ

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon