নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি।
গোটা শহর ছিল উৎসবমুখর। ঘড়ির কাঁটায় তখন বিকেল ৪টা। ততক্ষণে নারায়ণগঞ্জ নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়কের ২ নম্বর রেলগেট এলাকার আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে বাণিজ্যনগরী ডিআইটি হয়ে শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়ার গোল চত্বর, নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড, পশ্চিমে জামতলা, পূর্বে খানপুরসহ প্রায় ৩ কিলোমিটার অবধি শুধুই জনস্রোত। পুরো নারায়ণগঞ্জ যেন সমবেত হয়েছে এক মঞ্চে।
জনসভার সময় ৩টা হলেও নেতাকর্মীরা দুপুর ১২টা থেকেই আসতে শুরু করেন। স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত করতে থাকেন মূল বঙ্গবন্ধু সড়ক। তাদের হাতে ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধু আর শামীম ওসমানের রংবেরঙের ব্যানার-ফেস্টুন। অনেকেই আসেন বাদ্য-বাজনা নিয়ে।
আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ডাকে জনসভা মানেই লাখো লোকের সমাগম, এমনটাই ধারণা ছিল রাজনৈতিক অঙ্গনে। কিন্তু সেই ধারণাকেও পাল্টে দিয়েছে আজ শনিবারের জনসভা। পুরনো ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমান লোকসমাগমে পূর্বের নিজের রেকর্ড নিজেই ভেঙে এবারএক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। এ জনসভার কয়েক লাখ লোকের মিছিল হয়।
সমাবেশস্থলের জনস্রোত রূপ নেয় জনসমুদ্রে।
দেখা যায়, দুপুর ২টা থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর, বন্দর ফতুল্লা, সোনারগাঁও আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জ-সিদ্ধিরগঞ্জ , বিভিন্ন ইউনিয়ন ওয়ার্ড থেকে হাজার হাজার মিছিল ছুটে আসে মূল শহরের ২ নম্বর রেলগেট এলাকায়। শামীম ওসমানের আহ্বানে অনুষ্ঠিত জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের এই জনসভায় তিনি আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন লাখো লোক নিয়ে দেশি-বিদেশি সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঘণ্টা বাজাবেন। আর সেই ঘণ্টা বেজে উঠবে সারা দেশের সব জেলায়।
বিকেল ৪টায় সমাবেশের প্রধান অতিথি স্বররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে নিয়ে মঞ্চে ওঠেন শামীম ওসমান।
প্রধান অতিথিসহ এমপি শামীম ওসমান সমাবেশস্থলে সমবেত লোকসমাগমের উদ্দেশে স্লোগান দেন―‘বীর বাঙালি ঐক্য গড়ো, বাংলাদেশ রক্ষা করো; দেশ বাঁচাতে দরকার, শেখ হাসিনা সরকার; জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’ ১০-১৫ মিনিট ধরে চলা লাখো কণ্ঠের স্লোগানে প্রকম্পিত হয় গোটা নগরী।
সমাবেশের প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখনো জেলা বিভিন্ন এলাকা থেকে দলটির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা মিছিল নিয়ে আসছিলেন জনসভায় যোগ দিতে। এক পর্যায়ে ৪টায় মঞ্চ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, সামবেশস্থলে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। তাই যেখানে যে মিছিল নিয়ে আছেন সেখানেই অবস্থান করুন। সামবেশস্থলে বিকেল ৪টার পর মিছিলগুলোতে আসা হাজার হাজার নেতাকর্মী শেষে অবস্থান নেন চাষাঢ়ার শহীদ মিনার, সলিমুল্লাহ সড়কসহ আশপাশে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যের শুরুতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, ‘আজকে নারায়ণগঞ্জের এ জনসভায় সভাপতিত্ব করছেন আপনাদের শামীম ওসমান। আজ শামীমের ডাকে আপনারা যেভাবে এসেছেন, এখানে লাখো জনতার ঢল নেমেছে। এই লাখো মানুষের ঢল প্রমাণ করে নারায়ণগঞ্জের মানুষ বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনাকে কতটা ভালোবাসে।’
তিনি বলেন, ‘শামীম ওসমানের পিতা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। তার সন্তানরা আজ নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। শামীম ওসমানের নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ আজ আওয়ামী লীগের শক্তিশালী ঘাঁটি। ঢাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে শামীম ওসমান হাজারো নেতাকর্মী নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। আজকে আপনাদের এই উপস্থিতি এটা প্রমাণ করে, নারায়ণগঞ্জ তথা পুরো বাংলাদেশে শেখ হাসিনা একটি আস্থার নাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নাই। শেখ হাসিনার বিকল্প শুধুই শেখ হাসিনা।’
সভাপতির বক্তব্যে শামীম ওসমান বলেন, ‘আজকের সমাবেশে যে নারায়ণগঞ্জের লাখো জনতা উপস্থিত তারা দেশরক্ষায় প্রস্তুত রয়েছে। আমরা সব সময়ই প্রস্তুত থাকি। শুধু একবার ডাকবেন। গভীর রাত হলেও শুধু আধাঘণ্টা সময় দেবেন। লাখো লোক নিয়ে নারায়ণগঞ্জ ঠিক রেখে ঢাকায় লাখো লোক নিয়ে হাজির হব ইনশাআল্লাহ।’
তিনি আরো বলেন, “একাত্তরে স্লোগান ছিল, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর।’ আর আজকে আমাদের স্লোগান, ‘বীর বাঙালি ঐক্য গড়ো, বাংলাদেশ রক্ষা করো; দেশ রক্ষায় দরকার, শেখ হাসিনা সরকার।’ তাই পরিষ্কার করে বলতে চাই, দেশ রক্ষায় দেশি ও বিদেশি স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে যেকোনো সময় যেকোনো ডাকে নারায়ণগঞ্জে শেখ হাসিনার কর্মীরা সদা প্রস্তুত। শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও নারায়ণগঞ্জের কর্মীরা দেশরক্ষায় যেকোনো আত্মত্যাগে এগিয়ে আসবে।”
এ সময় সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই, সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহিদ মো. বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দন শীল, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, সোনারগাঁ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কায়সার হাসনাত, যুবলীগ নেতা কাউছার আহম্মেদ, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ভূইয়া সাজনু, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য