আল্লাহ তাআ’লা আমাদের মাবুদ। আমরা তাঁর বান্দা। মাবুদ এবং বান্দার মধ্যে আনুগত্যের ঘোষণা হচ্ছে ইবাদত। বান্দাকে আল্লাহ তাআ’লা সৃষ্টি করেছেন মাবুদের বন্দেগী করার জন্য। আল্লাহ তাআ’লা বলেছেন- “জিন ও মানুষকে আমি শুধু এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার দাসত্ব করবে।” (সুরা আয-যারিয়াত, আয়াত: ৫৬) বান্দা যখন মাবুদের শেখানো পদ্ধতিতে বন্দেগী করে তখন আল্লাহ খুশি হন। রাসূলে করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হচ্ছেন আমাদের সকলের শিক্ষক। আল্লাহর প্রেরিত পথ প্রদর্শক। রাসূলের শেখানো পদ্ধতিতে আল্লাহর হুকুম পালন করা, জীবন যাপন করা এবং তাঁর নিকট প্রার্থনা করাই হলো ইবাদত। ইবাদতের জন্যই আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। এই ইবাদতকে নান্দনিক করার জন্য, সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য আল্লাহ তাআ’লা কিছু নিয়ম পদ্ধতি বাতলে দিয়েছেন।
ইবাদত শুধুমাত্র মহান রবকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে করা। ইখলাস ও নিষ্ঠার সাথে। নিয়্যতের পরিশুদ্ধির মাধ্যমে ইবাদত করা। অর্থাৎ কেবল মহান রব্বে করীমকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে ইবাদত করতে হবে। ইবাদতে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা যাবেনা। মহান আল্লাহর ছাড়া কারো ইবাদত করা যাবেনা। একমাত্র আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ইবাদত করতে হবে। বান্দা যখন আন্তরিকতার সাথে আল্লাহকে ডাকে তখন আল্লাহ নিজেই বান্দার ডাকে সাড়া দেন। আন্তরিকতার সঙ্গে আল্লাহকে ভয় করে ইবাদত করলে সেটা আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে। আল্লাহ সেই ইবাদতকে মকবুল করেন। ইবাদত আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হলে, তবেই ইবাদতের সৌন্দর্যতা বৃদ্ধি পায়।
কোন বান্দা যখন মাবুদের ইবাদতে লিপ্ত হয়, তখন সেটা শুধু আল্লাহর জন্যই করা। ইবাদতের ক্ষেত্রে কাউকেও শরীক না করা। সবসময় আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ইবাদত করা। আল্লাহ তাআ’লা কাউকে শরীক করাকে প্রচন্ডভাবে অপছন্দ করেন এবং কড়া হুশিয়ার বার্তাও দিয়েছেন। আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করাকে গুনাহে কবিরা সাব্যস্ত করেছেন। অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে কেউ যদি শরীক করেন তাহলে মুশরিক হয়ে যায়। আর যখন কেউ মুশরিকদের কাতারে যায়। তার জন্য জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি অবধারিত। তাই ইবাদত হতে হবে স্বচ্ছ ও ইখলাসপূর্ণ। একেবারে নিরেট আল্লাহর জন্য হতে হবে।
আল্লাহ তাআলার নৈকট্যলাভের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে আল্লাহকে ভয় করা। ইবাদত করার ক্ষেত্রে বিনয়ের সাথে করতে হবে। আল্লাহ তাআ’লা সুরা মুৃমিনুন এর প্রথম ১০ আয়াতে মুমিনদের কিছু গুণাবলী বর্ণনা করেছেন - এরমধ্যে প্রথম যে গুণটা বর্ণনা করেছেন সেটা হলো - ” তারা বিনয়ের সাথে আল্লাহর ইবাদত করে”। এর আগের আয়াতে বলা হ’য়েছে - ‘নিশ্চয়ই মুমিনগণ সফলকাম হয়েছে ‘ যারা বিনয়ের সাথে আল্লাহর ইবাদত করেছে ‘। এই আয়াতে আল্লাহ তাআ’লা বিনয়ী ইবাদতকারীকে সফলকাম হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। এমনভাবে ইবাদত করতে হবে যেন আল্লাহ তাআ’লা বান্দার সামনে আছেন। আল্লাহকে হাযির নাযির মনে করে ইবাদত করতে হবে। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহর ইবাদত করো এমনভাবে যেন তাঁকে তুমি দেখতে পাচ্ছ। আর যদি দেখতে না পাও, তবে তিনি তোমাকে দেখছেন।’ (বুখারি, মুসলিম)
ইবাদতের যাবতীয় শর্ত এবং আরকান আহকাম যথানিয়মে পালন করতে হবে। নামাজ, রোযা,হজ্জ, জাকাত সবকিছুর হুকুম কিছু আহকাম রয়েছে। যেমন- নামাজের মধ্যে আরকান এবং আহকাম আছে যেগুলো যথাযথ আদায় না করলে নামাজ শুদ্ধ হবে না। নামাজের শুরুতে শরীর পাক থাকতে হবে, কাপড় পবিত্র থাকতে হবে, নামাজের জায়গা পবিত্র থাকতে হবে, সতর ঢাকতে হবে, ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়াতে হবে, নামাজের সময় হলে নামাজের নিয়্যত করতে হবে। আবার নামাজে তাকবিরের তাহরিমা করতে হবে, কেরাত পড়তে হবে, রুকু করতে হবে, সেজদা করতে হবে, শেষ বৈঠকে বসতে হবে। এগুলো হচ্ছে নামাজের হুকুম আহকাম। এগুলো অবশ্যই করতে হবে। তখন নামাজ সহীহ শুদ্ধ হবে। নামাজ সহীহ হলে আল্লাহর কাছে গ্রহণ যোগ্য হবে। নামাজ যখন কবুল হবে। সেই ইবাদতের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। নামাজ নির্দিষ্ট সময়ে পড়তে হবে, না পড়লে সেটা কাযা হয়ে যাবে। তেমনিভাবে রোজার-ও নিয়মকানুন রয়েছে সূর্য উঠা থেকে অস্ত যাওয়া পর্যন্ত পানাহার, স্ত্রী সহবাস সহ যেকোনো খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে৷ নইলে রোযা শুদ্ধ হবেনা। এরকম শর্ত জাকাত এবং হজ্জের ক্ষেত্রে ও আছে। তাই ইবাদতের সৌন্দর্যের জন্য রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে শিখিয়েছেন সেভাবে করাই উত্তম।
ইবাদত মকবুল ও নান্দনিক করার জন্যে প্রদর্শনীর উদ্দেশ্যে ইবাদত করা যাবে না। রিয়া বা প্রদর্শনেচ্ছা একটি মারাত্মক ব্যাধি। লৌকিকতাপূর্ণ ইবাদত আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়না। প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে যারা ইবাদত করে তাদেরকে মুনাফেক হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ, রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যারা লৌকিকতা বা মানুষকে দেখানোর জন্য ইবাদত করে তাদের ইবাদত কবুল হয়না। যারা কোন ওজর ছাড়া ফজর নামাজ এবং এশার নামাজ বাদ দিয়ে শুধু বাকি ৩ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। তাদেরকে লোক দেখানো বান্দা বলা হয়েছে। বর্তমানে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এই লৌকিকতা প্রকটভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রোফাইলে প্রশংসা পাওয়ার জন্য অনেক লোক দেখানো ইবাদতের ভান ধরা হয়। অথবা মানুষ ভালো বলবে এইজন্য আলহামদুলিল্লাহ এটা করেছি ওটা করেছি বলে স্ট্যাটাস দেওয়া হয়। যা চোখ দেখানোর কাতারে পরে যায়। ইবাদতের সৌন্দর্যের জন্য এমন কাজ পরিহার করা দরকার।
আল্লাহ তাআ’লা বান্দার জন্য কিছু ইবাদতকে আবশ্যক করেছেন। অধিক গুরুত্বপূর্ণ করে দিয়েছেন। একে দুইভাগে ভাগ করা যায়- ফরজ এবং ওয়াজিব। এই দুইপ্রকার ইবাদতকে অকাট্য করে দিয়েছেন। যা অবশ্যই পালনীয়। যদি পালন না করে তাহলে গোনাহগার হবে। যেমন- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, রোজা, টাকা থাকলে হজ্জ, নেসাব পরিমাণ সম্পদ হলে জাকাত দেওয়া ফরজ। এগুলো সময়মতো আদায় করতে হবে নয়তো গোনাহগার হবে। ফরজ ইবাদতে কোনো প্রকার গাফিলতি প্রদর্শন করা যাবে না । ফরজ ইবাদত ছাড়াও বান্দা এবং আল্লাহর সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করতে হবে। কেননা, নফল ইবাদতগুলো ছোট ছোট গুনাহকে মিটিয়ে দেয়। আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়া সহজ হয়। তাই নফল ইবাদতগুলো বেশি বেশি করে আদায় করতে হবে।
ইবাদতের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ইবাদত করতে হবে মনের সন্তুষ্টি সহকারে। আল্লাহকে খুশি করার জন্য। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য। তাহলেই ইবাদতের সৌন্দর্য ও নান্দনিকতা আসবে। মহান রবের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।
নাম: ইমরান উদ্দিন
বিভাগ: আরবি বিভাগ
প্রতিষ্ঠান: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ইমেইল : emranuddin491@gmail.com
নাম্বার : 01818575676
মন্তব্য