মুনতাসির তাসরিপ, পটুয়াখালীঃ
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এ দেশের প্রান্তে প্রান্তে বয়ে গেছে অসংখ্য নদী ও খাল। তবে এক সময় মানুষ সাঁতার শেখার প্রতি যেমনটা আগ্রহ প্রকাশ করত তা এখন নদীর মতই বিলুপ্তপ্রায়। আর এখন শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত সাঁতার শেখার তেমন সুযোগ হয়ে ওঠে না শিশুদের। ফলে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে।
সরকারি হিসেব অনুযায়ী, শিশুদের মৃত্যুর ২য় প্রধান কারণ এখন পানিতে ডুবে মৃত্যু। আর গত তিন বছরে এর হার দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে।
পানিতে ডুবে মৃত্যু ঠেকাতে এবার এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা প্রশাসন। শিশু মৃত্যুরোধে সাঁতার প্রশিক্ষণ বিষয়ক এই বিশেষ প্রকল্পের নাম দেয়া হয়েছে ‘মন্থন’। সোমবার ৩০ অক্টোবর দুপুরে উপজেলার সদর ইউনিয়নের বিপিসি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বিপিসি হাইস্কুল এ্যান্ড কলেজের প্রায় ৭০ জন শিক্ষার্থী এই প্রশিক্ষণে অংশ নেয়। এসময় ওই প্রতিষ্ঠানের সামনের পুকুরটিতে উৎসবমুখর পরিবেশে সাতার প্রশিক্ষণ দেয় উপজেলার সিপিপি এর সদস্যরা। পুকুরের চারপাশে আমেজের সৃষ্টি হয়।
ওই সময় উপস্থিত ছিলেন গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর গলাচিপা উপজেলায় ১০০ জন শিশুর মৃত্যু হয় পানিতে ডুবে।
প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে অত্র বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণির শিক্ষার্থী হাফসা বলেন, ‘প্রথমে একটু ভয় পেয়েছি, তবে পরে অনেকটা ভালো লাগছে। আশা করি আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে সাঁতার শিখে যাব।’
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী (সিপিপি) এর ইউনিট লিডার দেলোয়ার হোসেন বলেন,‘ উপজেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়নের প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে সিপিপির একটি করে টিম রয়েছে। সেই টিমগুলো প্রত্যেকটি ইউনিয়ন থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ে মন্থন এর আয়োজন করা হবে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো স্কুল পড়ুয়া যেসকল শিক্ষার্থীরা রয়েছে তাদের সাতার শেখানো।’
বিপিসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব অপর্ণা রায় বলেন “আমার স্কুলের প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থী সাতাঁর পারেনা। এমন উদ্যোগে তারা খুব খুশি।
বিপিসি হাইস্কুল এ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মোঃ নাসির উদ্দিন বলেন,‘এরকম উদ্যোগে শিশুরা খুশি। তবে, প্রথমে তারা একটু অস্বস্তি বোধ করলেও পরবর্তীতে তারা স্বতস্ফুর্তভাবে অংশ নিয়েছে। ’
‘শিশুদের জীবন রক্ষায় উপজেলা নির্বাহি অফিসার মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল এর উদ্যোগের সাথে সমাজসেবা অধিদপ্তর সহয়তা করতে প্রস্তুত।’ এমনটি জানিয়েছেন উপজেলা সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা।
উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, ‘পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা। অনেকসময় দেখা যায় একই পরিবারের দুজন বা তারও অধিক শিশু মারা যায়। তাই গলাচিপার মত উপকূলীয় এলাকার শিশুদের পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার আমরা শুন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে চাই। আমি মনে করি পটুয়াখালীর গলাচিপা, বাউফল, কলাপাড়া,দুমকি এসব উপজেলায় শিশু মৃত্যু প্রধান কারণ পানিতে ডুবে মৃত্যু। আমরা এই প্রশিক্ষণের নাম দিয়েছি মন্থন। এরকম ভিন্নধর্মী একটি নাম দেয়ার কারণ, মন্থন মানে নদী বা সমুদ্রের তলদেশ থেকে মনি মুক্তো বের করা। আমরা মনে করি আমাদের শিশুরা শুধু সাঁতার শিখবে না তারা সমুদ্রের তলদেশ থেকে মণিমুক্তা ও সম্পদ আহরণ করবে।
মন্তব্য