রাস্তার পাশে জীর্ণ একটি বিল্ডিং। বোঝার উপায় নেই এটি একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র। কোনো নাম ফলক টাঙানো হয়নি। এর সংযোগ রাস্তাটি ভাঙা। বলছিলাম পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চর কাজল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কথা।
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চর কাজল ও চর বিশ্বাস ইউনিয়ন ইউনিয়ন দুটি দূর্গম চরে অবস্থিত। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর চেয়ে এই দুই ইউনিয়নের মানুষের জন্য ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের খুব বেশি প্রয়োজন এই অঞ্চলের মানুষের।
আজ মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) দুপুর ১২ টার দিকে ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন উপজেলা নির্বাহি অফিসার মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল। ভবনটি দেখে হঠাৎ থমকে গেলেন তিনি। যখনই জানতে পারলেন এটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র। তখনই কৌতুহল বসত ঢুকলেন এর ভেতরে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো ভেতরে কাউকেই পাওয়া গেল না। খোঁজাখুঁজির পরে একজন লোকের দেখা মিলে। তবে তার পরিধানে ছিল শুধু লুঙ্গি এবং সে ছিল খালি গায়ে। পরিচয় দিলেন তিনি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের এমএলএসএস । স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি ঘুরে দেখলেন ইউএনও। কিন্তু কোন সেবা গ্রহীতা নেই ।
কাগজপত্র ঘাটাঘাটির পর আসলো আরো ভয়াবহ চিত্র। জানা গেল, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সর্বশেষ পরিদর্শন করেছেন ০২ বছর আগে ২০২১ সালে। রেজিস্টারসমূহ সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি।
গত ৭ দিন ধরে আসছেন না স্যাকমো এবং সর্বশেষ রোগীর রেজিস্টার ২৩ তারিখ। ঔষধ ও কাগজপত্র ছড়ানো ছিটানো । ময়লা আবর্জনার ছড়াছড়ি। স্বাস্থ্যসেবার মান এবং অবকাঠামো যা পাওয়া গেল তাতে কোন সরকারি অফিস হতে পারে তিনি মনে করেননি।
পরে স্থানীয় লোকদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেশিরভাগ সময় স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি থাকে বন্ধ । ওষুধ এবং ডাক্তারের দেখাতে গেলে পাওয়া যায় না। একাধিক বার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে বলল এমনি কোন পদক্ষেপ নেন নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ চাচ্ছেন স্থানীয় জনগণ যাতে ঠিকভাবে সেবা পেতে পারেন তারা ।
এ বিষয়ে বক্তব্য নেয়ার জন্য চর কাজল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান মোল্লাকে একাধিক মুঠোফোনে কল করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার আতিকুর রহমান বলেন, ‘ বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছি৷ তবে এমএলএসএস এর লুঙ্গি পড়ে ও খালি গায়ে থাকার ব্যপারটি জিজ্ঞেসাবাদ করা হবে। আমাদের ভিজিটর ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ায় আমার কাছ থেকে ছুটি নিয়েছে। তবে স্যাকমো যিনি রয়েছেন তার বাউফলে পোস্টিং হয়েছে । তাই এখানে পাওয়া যাচ্ছে না। কিছুদিনের মধ্যে এটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’
ব্যপারটি দুঃখজনক বলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল জানান, ‘হঠাৎ ভবনটি দেখতে পেয়ে আমি পরিদর্শনে করি। আসলে এইরকম একটা দূর্গম চর এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করার কথা। কিন্তু যা দেখা গেল তাতে এর সার্বিক কার্যক্রম একেবারে অগ্রহণযোগ্য। আমি ইউপি চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করেছি নামফলক, সংযোগ সড়ক ইত্যাদি বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে। সার্বিক অবস্থা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পত্র প্রেরণ করা হবে।
মন্তব্য