মোঃ মিনহাজ আলম
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী৭ জানুয়ারী। নৌকার টিকিট পেতে অনেকেই দৌড়ঝাঁপ করেছেন। তবে শেষ মুহূর্তে নমিনেশন না পেয়ে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের অনেকে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের নিশ্চিত মনোনয়ন পেতে প্রতারণার শিকার হয়েছেন ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায় (৬৩)। চক্রের খপ্পরে পড়ে ৫০ লাখ টাকা খুইয়েছেন তিনি। অভিযোগ পেয়ে চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশের একটি দল।
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মো: হারুন অর রশিদ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- নুরুল হাকিম (৩১), হাসানুল ইসলাম জিসান (২২) ও মো. হারুন অর রশিদ (২৯)।
জানা গেছে, মনোনয়নপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগ প্রার্থী দীপক কুমারকে একটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা (এনএসআই) পরিচয়ে ফোন করে ওই প্রতারক চক্রের এক সদস্য। সে ফোনে জানান,আমি সংস্থার ডিডি (ডেপুটি ডিরেক্টর) হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আছি। জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন সংক্রান্ত ইস্যুতে কাজ করছি। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আমি কয়েকজনকে বিভিন্ন আসনে মনোনয়ন পাইয়ে দিয়েছি। আসন্ন ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ইতিমধ্যে কয়েকজনের মনোনয়নের বিষয়টি আমি নিশ্চিত করছি। মোবাইল ফোনে এমন পরিচয়ে কথা। পরে আস্থা অর্জনের পর ভুক্তভোগী আওয়ামী লীগ নেতাকে ওই প্রতারক আরও বলে, আপনার মনোনয়নের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। এজন্য ৫০ লাখ টাকা নগদ দিতে হবে। এরপর দলের শীর্ষস্থানীয় এক নেতার কন্যা পরিচয়ে এক নারী কণ্ঠের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয় চক্রের সদস্যরা। এভাবে মনোনয়ন পেতে প্রতারণার ফাঁদে পড়েন দীপক কুমার রায়।
পরে গত ২৬ নভেম্বর আওয়ামী লীগের মনোনয়নের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হলে সেখানে নাম ছিল না ওই দীপক কুমারের। এতে বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এরপর তিনি বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার অভিযোগের ভিত্তিতে তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও ঠাকুরগাঁও জেলার রুহিয়া থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ।
সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের টার্গেট করে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র দেশব্যাপী সক্রিয় হয়। এরই ধারাবাহিকতায় চক্রটি দেশের বিভিন্ন স্থানে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের টার্গেট করে। ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের অভিযানে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আসামিরা মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাথে প্রতারণার কথা স্বীকার করেছে।
তিনি আরো জানান, নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর গ্রেপ্তার আসামি নুরুল হাকিম নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর এক সচিব ও অপর আসামি হাসানুল ইসলাম জিসান নিজেকে অপর এক সচিবের পরিচয় ব্যবহার করে দিয়ে তিনটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মনোনয়ন পাইয়ে দিবে বলে ফোন করে। এজন্য তাদের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা দিতেও বলা হয়। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অনেকেই প্রতারকদের ফাঁদে পা দিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তবে যারা আমাদের কাছে অভিযোগের মাধ্যমে জানিয়েছেন, আমরা গুরুত্বের সঙ্গে প্রতারকদের আইনের আওতায় নিয়ে আসছি।
মন্তব্য