মোঃ জিয়াউল ইসলাম
বরগুনা পাথরঘাটার বিষখালি নদীতে সদর মৎস্য বিভাগের অভিযানের সময় জেলেদের মারধরের সময় নদীতে পড়ে নিখোঁজ জেলের মোহাম্মদ রিপনের লাশ ২২ ঘন্টা পর ছোনবুনিয়া এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত রাত ১২ টার দিকে বিষখালী নদীর কালমেঘা টুলু পয়েন্টের কাছ থেকে রিপনের লাশ উদ্ধার করে জেলেরা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কালমেঘা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম নাসির।
এর আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে বিষখালীর নদীর দক্ষিণ কুপদোন এলাকায় বরগুনা জেলা মৎস্য অভিযানের এক পর্যায়ে জেলে রিপন বিষখালী নদীতে পরে নিখোঁজ হন। এঘটনায় আরো দুই জেলে আহত হয়।
নিহত জেলে মো. রিপন (৪১) উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের দক্ষিণ কূপদোন গ্রামের মো. আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। আহত জেলেরা হলেন–মো. রাসেল একই এলাকার নুরু মোল্লার ছেলে এবং সুলতান হাওলাদারের ছেলে দেলোয়ার হোসেন।
এদিকে রাত দেড়টার দিকে রিপনের মরদেহ কালমেঘা টুলু পয়েন্টে উদ্ধার করে নিয়ে এলে প্রায় পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ জড়ো হয়ে এ ঘটনায় জড়িত বরগুনা সদর মৎস বিভাগের কর্মকর্তাদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করে। এসময় উপস্থিত ছিলেন পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির, জেলা পরিষদের সদস্য এনামুল হোসাইন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম নাসির সহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
স্থানীয় সূত্র ও আহত দুই জেলে জানান, প্রতিদিনের মতো রিপন, রাসেল ও দেলোয়ার দুটি ট্রলার নিয়ে বিষখালী নদীতে মাছ ধরার জন্য যায়। রাত আড়াইটার দিকে স্পিডবোট নিয়ে বরগুনা সদর উপজেলার মৎস্য বিভাগ অবৈধ খুটি অপসারণের জন্য অভিযানে আসে। তখন ওই দুটি ট্রলারকে ধরে সেখানে থাকা জেলেদের মারধর করেন তাঁরা। মারধরের একপর্যায়ে রিপন নদীতে ঝাঁপ দিলে পরবর্তী সময়ে তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরপর রাসেল ও দেলোয়ারকে নিয়েই অভিযান চালায় মৎস্য বিভাগ। আজ শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে অভিযান শেষে রাসেল ও দেলোয়ারকে তীরে ছেড়ে দেয়।
স্থানীয় যুবলীগ নেতা তাওহীদ দীপু জানান, বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনা ফিরে আসা জেলেদের থেকে শুক্রবার সকাল নয়টার পর আমরা জানতে পারি। এরপর থেকেই আমরা নদীতে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে খোঁজ করি। এরপর জোয়ার শুরু হলে পুনরায় শুক্রবার রাত দশটায় একযোগে বিশটি ট্রলারে নিয়ে অনুসন্ধানে নামি। রাত বারোটার দিকে কালমেঘা টুলু পয়েন্টের কাছের একটি বনের ভেতর রিপনের লাশ ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায়।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম নাসির জানান, লাশের সন্ধান পাওয়ার পর পাথরঘাটা থানা পুলিশকে জানালে রাত দেড়টার দিকে পুলিশ বিষখালী নদী থেকে লাশ উদ্ধার করে।
পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি তদন্ত সাইফুজ্জামান জানান, লাশ উদ্ধার করে পাথরঘাটা থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। লাশের সুরতহাল শেষে ময়না তদন্তের জন্য সকালে মর্গে পাঠানো হবে।
এদিকে জেলা মৎস্য বিভাগের অভিযানে জেলে নিহত হওয়ার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে কালমেঘার জেলে পল্লী। সেখানে কয়েক শ’ জেলে জড়ো হয়ে মাইকে বিক্ষোভ করতে শোনা গেছে। এঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে বিক্ষুব্ধ জেলেদের সান্ত্বনা দিয়েছে পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির।
মন্তব্য