বিশেষ প্রতিবেদক,
ঢাকা রোড ট্রাফিক সেফটি প্রজেক্ট এর “রোড সেফটি পোস্টার ও স্লোগান কনটেস্ট-২০২৪” এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) বলেছেন, ট্রাফিক আইন মানার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। তারা নিজেরা ট্রাফিক আইন মানবে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহপাঠীদের বলবে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন ) রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। রাজধানীর ১৬টি স্কুল ও ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়কের নিরাপত্তা নিয়ে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। পোস্টার প্রতিযোগিতায় মোট ২৩৮ টি পোস্টার ও স্লোগান প্রতিযোগিতায় মোট ৮৪ টি স্লোগানের মধ্য হতে বিজয়ীদের নির্বাচন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন জাইকা-বাংলাদেশের মুখ্য প্রতিনিধি তোমোহিদে ইচিগুচি ও ডিআরএসপি প্রকল্পের প্রজেক্ট লিডার ইয়োশিহিসা আসাদা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ও ডিআরএসপি প্রকল্প প্রধান মোঃ মুনিবুর রহমান বিপিএম-সেবা।
জাইকার কারিগরি সহায়তায় ডিএমপি ঢাকা সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্পটি (ডিআরএসপি) হাতে নেয়। অনুষ্ঠানে ডিআরএসপি’র প্রজেক্ট ম্যানেজার ও ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-অ্যাডমিন এন্ড রিসার্চ) মো: জাহাঙ্গীর আলম প্রকল্পের সার্বিক বিষয় এবং সড়ক নিরাপত্তা পোস্টার ও স্লোগান প্রতিযোগিতার কর্মকান্ড নিয়ে সাবলীলভাবে উপস্থাপন করেন। ঢাকায় সড়ক নিরাপত্তা বাড়ানো এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। এর অংশ হিসেবে ডিএমপি ও জাইকা জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও নগরবাসীকে সম্পৃক্ত করতে পোস্টার ও স্লোগান প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। সড়ক নিরাপত্তা এবং দায়িত্বশীল আচরণের গুরুত্ব তুলে ধরে পোস্টার ও স্লোগান তৈরিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয় যা সড়ক নিরাপত্তায় সচেতনতার তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এই প্রতিযোগিতায় ছাত্র-ছাত্রীদের পোস্টার ও স্লোগান তৈরিতে সৃজনশীলতা এবং সড়ক নিরাপত্তার প্রতি তাদের অঙ্গীকার প্রকাশ পায়। তাদের প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি দিতে ১০টি স্লোগান ও ১০টি পোস্টারকে ডিএমপি কমিশনার অ্যাওয়ার্ড, ডিএমপি অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) অ্যাওয়ার্ড, জাইকা অ্যাওয়ার্ড, জেট্রো অ্যাওয়ার্ড, জেসিআইএডি-নিপ্পন সিগন্যাল অ্যাওয়ার্ড, জেসিআইএডি-টেককেন কর্পোরেশন অ্যাওয়ার্ড এবং ডিএসআরপি অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।
পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) সভাপতির বক্তব্যে বলেন, এই প্রকল্পটি সবার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকা শহরে প্রধান সমস্যা হলো ট্রাফিক। সড়কের নিরাপত্তা না থাকায় অনেক মানুষ পঙ্গুত্ব ও মৃত্যুবরণ করছে। তাই আমাদের সচেতন হতে হবে।
হাবিবুর রহমান বলেন, শুধুমাত্র পোস্টার-স্লোগানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না শিক্ষার্থীরা। তারা নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবাইকে ট্রাফিক আইন মানার বিষয়ে সচেতন করে তুলবে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে সচেতন হতে হবে, শিক্ষার্থীদের কথা বলতে হবে। কয়েকজন কিশোর একসঙ্গে মিলে সঙ্ঘবদ্ধভাবে খারাপ কাজ করলে তখন তাকে ‘গ্যাং’ বলা হয়। আজকের কিশোররাই আগামীদিনের বাংলাদেশ। এ কিশোররা খারাপ কাজ করতে পারে না। কিশোররা আইন অমান্য করতে পারে না। কিশোররাই হবে কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে আরেকটি বড় শক্তি। তাহলে সমাজে কিশোর গ্যাং কমে যাবে।
ডিআরএসপি প্রকল্প প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মনিবুর রহমান বিপিএম-সেবা বলেন, জাইকার কারিগরি সহযোগিতায় আমাদের প্রকল্পটি পরিচালিত হচ্ছে। প্রতি বছর মে-জুন মাসে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করা এ প্রকল্পের অন্যতম কাজ। তারই অংশ হিসেবে রোড সেফটি পোস্টার অ্যান্ড স্লোগান কনটেস্ট-২০২৪’ এর আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে জাইকা বাংলাদেশের চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ইচিগুচি বলেন, ডিএমপি ও জাইকার সহযোগিতায় ঢাকা শহরের সড়ক নিরাপত্তা বাড়াতে ডিআরএসপি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অনন্য এই উদ্যোগটি জাইকা এবং বাংলাদেশের মধ্যে ৫১ বছরের অংশীদারিত্বের আরেকটি মাইলফলক। নিরাপদ সড়কের জন্য সচেতনতা জরুরি। তাই শিক্ষার্থীদের তৈরি করা পোস্টার ও স্লোগান সড়ক নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ট্রাফিক নিয়ম সম্পর্কে মানুষের মধ্যে দায়িত্ববোধ সৃষ্টি করবে যা সকলের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করবে। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সকল পোস্টার ও স্লোগানগুলোকে সড়ক নিরাপত্তার কাজে ব্যবহার করা হবে।
এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ীরা হলো ভিকারুন্নেসা নুন স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী হালিমাতুস সাদিয়া, কৃত্বিকা দাস, মুনিম সাফা ও ইনাইয়া মাজিফা, মাস্টারমাইন্ড স্কুল এন্ড কলেজের আদিয়ান আরাফ, গ্রাউন্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজের এজহার এবতেসাম এনান, শহীদ পুলিশ স্মৃতি স্কুল এন্ড কলেজের শার্লিন সাফা, ইসরাত জাহান ইতি এবং শামসুল হক খান স্কুল এন্ড কলেজের আদনিন তাজরি আলম ও আশফিয়া কিবরিয়া।
আর স্লোগান প্রতিযোগিতায় বিজয়ীরা হলো- আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটির মাহমুদুল হাসান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির এহসানুল হক ও ওয়াসিকুর রহমান, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালের মোঃ আবদুল্লাহ আল নাইম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশিক মাহমুদ, মুস্তারিন আক্তার মনীষা, মো. মানিক, মোঃ আল আমিন, সুমাইয়া জান্নাত ও আনিসা আহামেদ শোভা।
অনুষ্ঠানে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ১৬টি স্কুল ও ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃ্ন্দ, ছাত্র-ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকগণ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য