বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪
 

কলাপাড়া পৌরসভার বহু রাস্তা খানাখন্দে ভরা, মানুষের ভোগান্তি এখন চরমে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২৪

---
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

কলাপাড়া পৌরসভায় এক পশলা বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় নাচনাপাড়া, চিংগুরিয়া, রহমতপুর, সবুজবাগসহ কলাপাড়া পৌরসভার বহু আবাসিক এলাকা। খানা-খন্দে একাকার উপজেলা সড়ক, মাদরাসা সড়ক, কাজী নজরুল ইসলাম সড়ক, চিংগুরিয়া, নতুন হাসপাতাল সড়ক, ভুমি অফিসসহ কয়েকটি সড়ক। রাতে জ্বলছেনা অধিকাংশ সড়কবাতি। ড্রেনে ময়লা আবর্জনায় একাকার থাকছে। মাছ বাজার, মুরগি বাজার, সোসাইটি সিনেমা হলের এলাকায় বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে থাকে। মানুষের বাজার করতে দুর্ভোগের শেষ নেই। বৃষ্টিরপানিতে বাজার ময়লা আবর্জনায় একাকার হয়ে আছে। শহরের প্রাণখ্যাত প্রবাহিত একমাত্র স্লুইসখালটি পৌরবাসীর সকল বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। মুরগির বাজার ব্যবসায়ীরা নিজের অর্থায়নে বালুর বস্তা দিয়ে ত্রেুতার সুবিদার্থে বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে থাকে এজন্য ব্যবস্থা করা হয়। পানি সরবরাহে বিঘœ ঘটছে। পৌরসভার পানি সরবরাহের পাইপে থাকছে ময়লা-আবর্জনা। এক কথায় এখানকার নাগরিক সেবার এখন বেহাল দশা। পৌরবাসীর কাছে অসহনীয় হয়ে পড়ছে এ ভোগান্তি। তাই সচেতন পৌরবাসীর দাবি পৌরকর, পানির বিল যথাযথভাবে পরিশোধ করার পরও কাঙ্খিত সেবা মিলছেনা। এমনকি পৌরসভার স্টাফরা নিয়মিত নাগরিক সেবা দিচ্ছেন না বলেও ক্ষুব্ধ রয়েছেন পৌরবাসী। অতি সম্প্রতি পটপরিবর্তনের পরপরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা শহরটিতে সড়কের শৃৃঙ্খলা ফেরাতে কয়দিন কাজ করলে নাগরিক ভোগান্তি কিছুটা হলেও লাঘব হয়েছে। এখন আবার পুরনো চেহারায় ফিরেছে।

পৌরসভা ও তথ্য সুত্রে জানা যায়, কলাপাড়া পৌরসভার যাত্রা শুরু ১ লা মার্চ ১৯৯৭ সালে। ৯টি ওর্য়াড নিয়ে গঠিত পৌরসভার আয়তন ৩.৭৫ বর্গ কিলোমিটার। বর্তমান জনসংখ্যা ১৯৭৮২.০০জন (২০১১সালের আদম শুমারী অনুযায়ী পুরুষ-৯৯৪৪.০০জন ও মহিলা ৯৮৩৮.০০জন। ভোটার ১২ হাজার আটশত একানব্বই জন। ২০১৫ সালে পৌরসভাটি প্রথম শ্রেনির মর্যদা লাভ করে।

বুধবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মহাসড়ক থেকে কলাপাড়া পৌরসভার প্রবশদ্বার শেখ কামাল সেতুর সংযোগ সড়ক থেকে হাসপাতাল গেট পর্যন্ত মাত্র দুইশো মিটার সড়কের এখন চরম বেহাল দশা। খানা-খন্দে একাকার হয়ে গেছে। অটোবাইক-ইজিবাইক, প্রাইভেটকার, মাইক্রো, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। মানুষ হেঁটে চলাচল করাও কষ্টকর হয়ে গেছে। বারবার এই পথটুকু নামকাওয়াস্তের মেরামত করায় আবার গর্ত হয়ে পানি জমে যাওয়ায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। সর্বশেষ রিমাল পরবর্তী সময় জরুরি মেরামত করা হয়। তা এখন বোঝার উপায় নেই। এ সড়কটি যদিও সড়ক ও জনপথ বিভাগের। কিন্তু সেতু হওয়ার পরে এটি আর বাসসহ পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হয়না। পৌরসভামুখী মানুষের ব্যবহার করতে হচ্ছে। ওই পথে রোগীরা হাসপাতালে চলাচল করেন।

ইটালী প্রবাসী নেছার উদ্দিন পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরেছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে রিকশায় চড়ে শৈশবের স্মৃতি ঘেরা শহরের অলিগলি ঘুরে আধুনিক বহুতল ভবন দেখে যতটা না বিস্মিত হয়েছেন, শহরের ক্ষতবিক্ষত, ভাঙা চোরা ও বিপর্যস্ত রাস্তা ঘাট দেখে তার চেয়ে বেশি হতাশ হয়েছেন। তিনি আরো বলেন, ১০ বছর আগে কলাপাড়া শহরের রাস্তা ঘাটের এমন বেহাল দশা ছিল না, ছিল চকচকে। তখন বেহাল ছিল শহরের দালানকোঠা। এখন চিত্রটা উল্টো। দালানকোঠা চকচকে। কিন্তু বেহাল শহরের অধিকাংশ রাস্তাঘাট।

পৌর শহরের অটোচালক জালাল জানান, গাতায় গাড়ি পড়ে যন্ত্রপাতি ভেঙে যায়। ক্ষতি হয় আমাদের। শহরের বিভিন্ন রাস্তার খারাপ অবস্থা। গাড়ি চালাতে খুব কষ্ট হয়। প্রতিদিন গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যায়। তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন সড়কে মাসের পর মাস পড়ে থাকে ড্রেজারের পাইপ। এতে প্রায়ই ঘটে ছোট বড় দুর্ঘটনা।

চিংগুরিয়ার বাসিন্দা কালা জানায়, সামান্য বৃষ্টিতেই আমাদের এলাকা তলিয়ে যায়। শহরের খালটি দখল দূষণ থেকে রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি। এছাড়া শহরে প্রায়ই চুরির ঘটনা ঘটছে। এছাড়াও শহরটিতে ধারণ ক্ষমতার প্রায় দ্বিগুন অটো ও ইজিবাইক চলাচল করায় দিনের বেলা অধিকাংশ সময় সড়কে যানজট লেগে থাকছে। সড়কের নতুন বাজার এলাকায় দুই পাশে মোটর সাইকেল পার্কিং করে রাখায় মানুষের চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। দুটি বাহন ক্রস করতে পারে না। কাঁচা বাজারের প্রবেশ পথে সড়কের ওপর বসে দোকানপাট। ফলে নিত্য ভোগান্তির কবলে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। এসব সমস্যা সমাধানে পৌরসভা কর্তৃপক্ষের তেমন কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। তারাও ভোগান্তির কথা জানালেন।

মুরগি বাজার ব্যবসায়ী দুলাল বলেন, আমাদের নিজেরদের টাকা দিয়ে মুরগির বাজারে সিমেন্টের বস্তা বালু ভর্তি বস্তা দিয়ে ক্রেতাদের সুবিদার্থে এ ব্যবস্তা করা হয়েছে। বৃষ্টি হলে মাছ বাজার, মুরগি বাজার রোড পানিতে তলিয়ে থাকে। পানি জমে দুর্গন্ধ ছড়ায়। এজন্য সিমেন্টের বস্তা বালু ভর্তি বস্তা দেওয়া হয়েছে।

কলাপাড়া পৌরসভা উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, কোভিট নাইনটিন নামে একটি প্রকল্প আমরা একটি স্কিম তৈরি করেছি। ওই প্রস্তাবনা অনুমোদন হলে কিছু শুরু করা হবে বলে তিনি জানান।

কলাপাড়া পৌরসভার প্রশাসক ও নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, পৌরসভার যেসব পয়েন্টের রাস্তাগুলো খারাপ সেগুলো মার্ক করে সংস্কারের কাজ শুরু করে দিয়েছি বলে তিনি জানান।

মন্তব্য

সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon