এ জেড সুজন মাহমুদ, লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি:
নাটোরের লালপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষায় সিলেবাস বহির্ভূত প্রশ্ন, ৬ এর জায়গায় ১৩ টাকায় প্রতিটি প্রশ্নপত্র বিক্রি, বিভিন্ন স্টেশনারী পণ্য বিক্রি, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে দাপট দেখানো, অফিসে অনুপস্থিত থেকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে এক সহকারী শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে । শাহিনুর ইসলাম নামে এই সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ক্ষমতা অপব্যবহার আর স্বেচ্ছাচারিতায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন ভূক্তভোগীরা। নিয়ম শৃঙ্খলা উপেক্ষা করায় এখন তার চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় ১ বছর যবত এখানকার উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদ শুন্য থাকায় ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে দপ্তরের প্রশাসনিক কার্যক্রম। সাবেক শিক্ষা অফিসার আলেয়া ফেরদৌসীর বদলীর পর জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে উপজেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পান উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার ফাইজুল ইসলাম। সহকর্মী বিবেচনায় তাকেও অবজ্ঞা করে চলছেন শাহিনুর ইসলাম। উপজেলার ১১২ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫টি ক্লাস্টারে বিভক্ত রয়েছে। এর মধ্যে ওয়ালিয়ায় ভারপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা অফিসার ফাইজুল ইসলাম, গোপালপুর সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ঝর্ণা মন্ডল, বেরিলাবাড়ি সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার গোলাম রাব্বানী এবং লালপুর ও আব্দুলপুর ক্লাস্টারের দায়িত্বে রয়েছেন সহকারী শিক্ষা অফিসার শাহিনুর ইসলাম। চলতি বছর প্রাথমিকের দ্বিতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন পরীক্ষায় উপজেলা ভিত্তিক অভিন্ন প্রশ্ন তৈরির নির্দেশনা থাকায় ওয়ালিয়া, গোপালপুর ও বেরিলাবাড়ি ক্লাস্টার তা অনুসরণ করে। কিন্তু লালপুর ও করিমপুর ক্লাস্টারে ভিন্ন ভিন্ন প্রশ্ন প্রণয়ন করে। অন্যদিকে শিক্ষার্থী প্রতি প্রশ্নপত্র মূল্য ১০ টাকা ও বিদ্যালয় প্রতি প্যাকেটিং ব্যয় ৫০ টাকা নিলেও লালপুর ও করিমপুর ক্লাস্টারে নেয়া হয়েছে তার দ্বিগুণ। এখানে সিলেবাস বহির্ভূত প্রশ্ন প্রণয়নের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে প্রেসে প্রতি প্রশ্নপত্র ছাপাতে খরচ হতো মাত্র ৬ টাকা। এতে এই দপ্তরে ৪০ হাজার টাকা গচ্চা গেছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। এর আগেও লালপুর ও করিমপুর ক্লাস্টারে প্রথম প্রান্তিক মূল্যায়ন পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বিদ্যালয়ের বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি নিজেই তৈরি করে শিক্ষকদের নিকট সরবরাহ করার মাধ্যমে ২০০ টাকা করে আদায় করেছেন। অথচ অন্য ক্লাস্টারে বিদ্যালয়ের এর দাম ১০০ টাকা নেয়া হয়েছে। তিনি নিজ দপ্তর, বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক দলের নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তাকে আত্মীয় বলে পরিচয় দিয়ে আসছিলেন। তিনি নিয়মিত অফিসে না এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। অফিশিয়াল কাজ না করে ইচ্ছামতের সব কিছু করে চলেছেন। এমনকি উর্ধতন কতৃপক্ষের নির্দেশনা উপেক্ষা করে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দিনের পর দিন তিনি এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার সাহিনুর ইসলাম এব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ভারপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা অফিসার ফাইজুল ইসলাম এব্যাপারে জানান, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন সহ বিভিন্ন কাজে আমি তাকে বিভিন্ন সময় সতর্ক করেও কোনো লাভ হয়নি। তিনি নিজের স্বার্থে সব সিদ্ধান্ত নেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেহেদী হাসান বলেন, এবিষয়ে অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার গোলাম নবী বলেন,তদন্ত করে দেখা হবে ।কোনো রকম অনিয়ম ধরা পড়লে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোনোরুপ ছাড় দেয়া হবে না।
মন্তব্য