বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪
 

রাচির লাশ নিয়ে ক্যাম্পাসে কোন রাজনীতি করা চলবে না: শিক্ষার্থীবৃন্দ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২৪

---
জাবি প্রতিনিধি
ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী আফসানা করিম (রাচি) নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে কোন ধরণের রাজনীতি ও কোন সংগঠনের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
গতকাল মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা অনুষদের সামনে এই দুর্ঘটনা ঘটার পর থেকেই ক্যম্পাসে তার লাশকে নিয়ে রাজনীতি শুরু হয়েছে বলে মনে করছেন তারা। এই বিষয়ে তারা ১১ দফা দাবি নিয়ে উপাচার্যের কাছে যান।
তারা উল্লেখ করেন, গতকালের আকস্মিক ঘটনায় আমাদের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী রাচির মৃত্যুতে আমরা মার্কেটিং পরিবার ১১ দফা দাবি নিয়ে উপাচার্য স্যারের কাছে যাই এবং উনার কাছে দাবিগুলো উত্থাপন করি। উক্ত স্থানে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের সম্মতির মাধ্যমে দাবিগুলো উত্থাপিত হয়।

দাবিগুলো হলো:-

১। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রিক্সাওয়ালাকে দ্রুত সনাক্তকরনের মাধ্যমে আইনী ব্যবস্থা নিতে হবে।

২। নিহত ব্যক্তির পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ কমপক্ষে ৫০ লক্ষ টাকা দিতে হবে। (২দিনের মধ্যে)

৩। ৭ দিনের মধ্যে সিন্ডিকেট মিটিং ডেকে, জাবি মেডিকেল সেন্টারে মূমুর্ষ ব্যক্তির পর্যাপ্ত চিকিৎসার সুব্যবস্থার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। (ভ্যাক্সিনেশন, আইসিইউ সহ সকল আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম নিয়ে)

৪। সম্পূর্ণ ক্যাম্পাস সিসিটিভির ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসতে হবে এবং তা নিয়মিত মনিটরিং এর আওতায় রাখতে হবে। (২৪ ঘন্টার মধ্যে)

৫) ক্যাম্পাসে শাটল বাস চালু করতে হবে, যা ৩০ মিনিট পরপর সমগ্র ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করবে। (আগামীকাল থেকে)

৬) ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা পুরোপুরি নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তার পরিবর্তে প্যাডেল রিকশা ও ভ্যানের ব্যবস্থা করতে হবে।

৭) রাস্তার দুইপাশে সুপরিকল্পিত ভাবে ওয়াকওয়ে বানাতে হবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ মোড়গুলোতে আয়না স্থাপন করতে হবে যাতে মানুষ পেছনের যানবাহন দেখে সতর্ক হতে পারে।

৮। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরালো করতে হবে।

৯। রাচির স্মরণে ক্যাম্পাসে স্থায়ী স্মৃতিফলক নির্মাণ করতে হবে।

১০। এসকল কার্যক্রমে সচ্ছতা রাখতে হবে। এবং জবাবদিহিতার সাথে দৃশ্যমান তৎপরতা দেখাতে হবে।

১১। মার্কেটিং বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি তদন্ত কমিটিতে রাখতে হবে এবং সকল দাবি মানা হচ্ছে কিনা সেই বিষয়ে অবগত করতে হবে।

দাবি জানানোর পরে তারা উল্লেখ করেন, বর্তমানে অনেক ব্যক্তি কিংবা সংগঠন আমাদের বিভাগের শিক্ষার্থীদের কেন্দ্র করে এবং আমাদের বোন রাচিকে ইস্যু করে নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাইছে। আমরা মার্কেটিং পরিবার তাদের এই কর্মকাণ্ডকে প্রত্যাখ্যান করছি। আমাদের বোনের লাশ নিয়ে রাজনীতি হউক, আমরা চাই না। আমরা ক্যাম্পাসের সকল সাধারন শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানাচ্ছি উপরোক্ত দাবিসমূহ বাস্তবায়নে মার্কেটিং পরিবারের পাশে থেকে আমাদের সহযোগিতা করার জন্য।

এ বিষয়ে মার্কেটিং ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী রেদোয়ান বলেন, গতকাল আমাদের বিভাগের ছোটবোনের রিকশার আঘাতে মৃত্যুবরণ করা কে আমরা কোন ম্ভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না। আমরা এই ঘটনায় পুরোপুরি শকড হয়ে পড়েছিলাম। এরকম ন্যক্কারজনক ঘটনায় তার পরিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে যে তাদের মেয়েকে এই ক্যাম্পাসে রিকশার আঘাতে মরতে হলো। যা মেনে নেয়া যেকোনো পরিবারের জন্যই কষ্টকর। আমরা এই পরিস্থিতি সামাল দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের পর দেখি আমাদের বোনের লাশ নিয়ে বিভিন্ন গ্রুপ আন্দোলন শুরু করেছে। তবে আমরা স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, আমরা আমাদের বোনের লাশকে নিয়ে রাজনীতি করতে দিবো না।

আফসানা করিম (রাচির) সহপাঠী ও মার্কেটিং বিভাগের ৫৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী নিরব বলেন, আমরা আমাদের বন্ধুর আকস্মিক মৃত্যুতে এখনো শোকাবহ হয়ে আছি। আমাদের বিভাগের পক্ষ থেকে কোন কর্মসূচি ঘোষনা করি নি। দুপুরে ধানমণ্ডিতে তারা জানাযা শেষে আমরা কর্মসূচি ঘোষনা করবো।

উল্লেখ্য, ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার আঘাতে মার্কেটিং বিভাগের ৫৩ ব্যাচের শিক্ষার্থীর নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দল, গ্রুপ, সংঘঠন নান কর্মসূচি দেয়ার প্রেক্ষিতে এই স্পষ্ট বিবৃতি জানায় বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

মন্তব্য

সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon