মো. শামীম হোসাইন, ইন্দুরকানী, পিরোজপুর
পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলায় ২৪ বছর আগে ২০০০ সালে ফায়জুল হক এমপি একটি আয়রন ব্রিজের উদ্বোধন করেন। কিন্তু উদ্বোধনের ২৪ বছর পার হলেও কাজ শেষ হয়নি আয়রন ব্রিজটির। এ অবস্থায় স্থানীয় লোকজন রয়েছেন ব্যাপক ভোগান্তিতে। দুই যুগ পেরিয়ে গেলেও ব্রিজটি এখনও কাজ শেষ করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেতুটি পার হচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানান, নেছারাবাদ উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের কাটাখালি গ্রাম এবং কাটাখালি বাজারের তানভীর আহমেদের দোকান সংলগ্ন খালের ওপর ২৪ বছর আগে আয়রন ব্রিজটি উদ্বোধন করা হয়। এসময় রেজাউল করিম ঠিকাদার কাজ পান। তিনি লোহার পিলার বসিয়েছেন। রাজনৈতিক কারণে আর ব্রিজটির কাজ শেষ হয় না। ওই ঠিকাদার মারা গেছেন। এরপর থেকে এমনভাবে পড়ে আছে ব্রিজটি। কাঠের পাটাতন দিয়ে চলাচল করেন স্থানীয়রা। দূর থেকে দেখলে মনে হবে শুধু পিলারগুলো দাঁড়িয়ে আছে। ব্রিজটি মরণফাঁদ বলে বিবেচিত। ঘটেছে অনেক দুর্ঘটনা। এলাকাবাসীর আশঙ্কা, যেকোনো মুহূর্তে ব্রিজটি খালে পড়ে যেতে পারে।
এদিকে, বিকল্প কোনো যাতায়াত পথ না থাকায় বিপদ আরও বেশি স্থানীয়দের। বড় ঝুঁকি আছে জেনেও উপায় না পেয়ে স্থানীয় সব বয়সী লোকজন ব্রিজটি ব্যবহার করছেন। ব্রিজটির পাশে রয়েছে একটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এ ব্রিজ দিয়ে চলাচল করে আব্দুর হক কলেজের শিক্ষার্থীরা।
কাটাখালি গ্রামের বাসিন্দা আলামিন বলেন, ব্রিজটি নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তেমন কোনো তৎপরতা নেই। ২৪ বছর আগে উদ্বোধন করার পর যে ঠিকাদার কাজ পেয়েছে তিনি মারাও গেছেন। আবার ২৩ সালে শ ম রেজাউল করিম এমপি ব্রিজটির ভিত্তি স্থাপন করেন। এখন যে ঠিকাদার কাজ পেয়েছেন তিনি পলাতক রয়েছেন।
একই গ্রামের আলম শরীফ জানান, ব্রিজটিতে মানুষ উঠলে কখনও ডানে অথবা কখনও বামে কাত হয়ে যায়। ব্রিজটির কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরের কোনো মাথা ব্যথা নেই। কয়েক বছর ধরে শুনছি ব্রিজটির কাজ করা হবে। কিন্তু কবে তা শুরু হবে, কেউ বলতে পারে না।
২ নং বলদিয়া সরকারি প্রাথমিক ও সেন্টার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, ব্রিজটিতে উঠলে মনেহয় ভূমিকম্প শুরু হয়েছে। গাছের পাটাতনে হাতল ছাড়া এমন ব্রিজে জিবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা পারাপার হই। যাতায়াতে সমস্যা, ছোট বাচ্চা-বৃদ্ধদের সমস্যা আরও বেশি। কতৃপক্ষের কাছে দাবি যেন দ্রুত ব্রিজটির কাজ শেষ করা হয়।
বলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান বলেন, কাটাখালি গ্রামের পাশের খালে ব্রিজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অচিরেই এ সমস্যার সমাধান করা হবে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এক বছর আগে এখানে কাজের জন্য বালু রেখে চলে যায়। দ্রুত কাজ শেষ করতে ঠিকাদারকে চাপ প্রয়োগ করা হবে।
বর্তমান ঠিকাদার আমির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তার ফোন নাম্বারে কল দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে নেছারাবাদ উপজেলা প্রকৌশলী মো. রাইসুল ইসলাম বলেন, ব্রিজটির অবস্থা বেহাল, সেটা আমরা জানি। তবে ব্রিজটির ঢালের জন্য যতটুকু পরিমাণ জায়গা দরকার ততটা জায়গা নাই। স্থানীয়দের কাছে জমি চাইলে তারা সেটা দিতে রাজি নন।
মন্তব্য