জাবি প্রতিনিধি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অটোরিকশার ধাক্কায় নবীন শিক্ষার্থী আফসানা করিম (রাচি) নিহতের ঘটনায় অভিযুক্ত রিকশা চালক আরজুকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন৷
২৪ নভেম্বর (রোববার) দুপুরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী গেরুয়া এলাকা থেকে আটক করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসেন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা৷ পরে দিবাগত রাত ২ টায় তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় আশুলিয়া থানা পুলিশ।
মঙ্গলবার দূর্ঘটনার সময় পথচারী নাঈম এবং রিকশায় যাত্রী হিসেবে থাকা আবু হায়াত ও নাহিদ তাকে শনাক্ত করেন। এদের মধ্যে নাঈম নির্মানাধীন লাইব্রেরী ভবনের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অনিক এন্টারপ্রাইজের অপারেটর। অপর দুইজন আবু হায়াত ও নাহিদ সমাজবিজ্ঞান এক্সটেনশন ভবনের নির্মাণ শ্রমিক।
অনিক এন্টারপ্রাইজের অপারেটর নাঈম বলেন, আমি তখন শহীদ মিনারের পাশ দিয়ে লাইব্রেরির দিকে যাচ্ছিলাম। দূর্ঘটনার সাথে সাথে চিৎকার শুনে আমি ছুটে আসি। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই ছাত্রীকে ৭.৫২ মিনিটে মেডিকেলে নিয়ে আসি।
আমি রিকশাওয়ালাকে অনেকটা শনাক্ত করতে পেরেছি।
মল্লিক ব্রাদার্সের নির্মাণ শ্রমিক নাহিদ ও হায়াত বলে, আমরা ওইসময় টারজান থেকে এই রিকশায় উঠি। আমরা নিশ্চিত রিকশা এটাই। সে রিকশায় সিট চেঞ্জ করেছে। এটার সামনের দিকে লাইট ভেঙে গিয়েছিল; সেগুলো এখনো আছে। গাড়ির নিচের দিকে নতুন রঙ করা হয়েছে। হাত দিয়ে দেখলাম, রিকশায় নতুন রঙ করেছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক রাশিদুল আলম বলেন, আমরা যখন বিভিন্ন সূত্র ধরে তাকে খুঁজে পাই, তখন তার বাম হাতে খুব ব্যাথা ছিল। তার গলার পাশেও আঘাতের চিহ্ন৷ সে বলেছে, এটা ১৫ দিন আগের ব্যাথা। আমরা জিজ্ঞেস করলাম কোন ডাক্তার দেখিয়েছেন। পরে মেডিকেলের ডাক্তারকে দেখানোর পর নিশ্চিত হয়েছি, সে খুব সম্প্রতি কোথাও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। সেদিনের দূর্ঘটনা থেকেই সে আঘাত পেয়েছ বলে আমাদের ধারণা।
এদিকে, ১৯ তারিখের দূর্ঘটনার পর রিকশা বিক্রির চেষ্টা করে রিকশাচালক আরজু। ক্ষতিগ্রস্ত সে রিকশার সামনের দিকে গ্লাস ছিল না, হেডলাইট ভেঙে গিয়েছিল। সেগুলো নতুন করে মেরামত করা হয়। লাল রঙের বসার সিট বদলে নীল রঙের সিট লাগানো হয়। রিকশার যাত্রী আবু হায়াত ও নাহিদের বক্তব্য শুনে এমনটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে৷ এছাড়া রিকশায় নতুন রঙের গন্ধ ও নতুন হুড লাগানোর আলামত পাওয়া যায়৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর অফিসে রিকশাটি নিয়ে আসা হলে সেটি পরীক্ষা করে দেখেন পুলিশ ও নিরাপত্তা রক্ষীরা৷
অভিযুক্ত আরজুর বক্তব্যের সূত্র ধরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোববার দুপুরের আগেই সে রিকশাটি সাভারের ছায়াবিথী এলাকার ‘মাসুদ অটো পার্টস’ এর মালিক মাসুদ নামের একজনের কাছে মাত্র ৭৫ হাজার টাকায় রিকশাটি বিক্রি করে দেয়। এমনকি সন্দেহ থেকে বাঁচতে বিক্রির দলিলে দূর্ঘটনার আগের দিন ১৮ নভেম্বরের তারিখ উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রিকশা চালক আরজু বলেন, আমি আসলে রিকশা চালাই না। ১৫ দিন আগে থেকেই আমার হাতে ব্যথা ছিল। রিকশার ব্যাটারি একটু খারাপ ছিলো দেখে কম দামে বেচে দিছি। আমি ওইদিন জাহাঙ্গীরনগরে ছিলাম না।
এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার এসআই অলক কুমার বলেন, তাকে সন্দেহের মূল কারণ- তার মোবাইল ট্র্যাক করে দেখা গেছে, সে ১৯ তারিখ সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীরনগরে ছিল৷ বাকি আগে পরের সময় সে ক্যাম্পাসের বাইরে ছিল। আবার ঘটনার পর সে রিকশা বিক্রির চেষ্টা করেছে। তার কথাবার্তা অসংলগ্ন। আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যাচ্ছি।
মন্তব্য