মোঃ শাকিল মোল্লা, রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি:
পদ্মা নদীর নাব্য সঙ্কটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে নৌযান চলাচল। নদীতে পানি কম থাকায় ফেরিগুলো সোজাসুজি চলতে পারছে না। সাবধানতা অবলম্বন করে অনেক পথ ঘুরে ভিড়তে হচ্ছে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ার উভয় ঘাটে। যে কারণে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ১৫-২০ মিনিট সময় বেশি লাগছে ঘাটে পৌঁছাতে।
প্রতিবছর শুকনা মৌসুমের শুরুর দিকে এ রুটে দেখা দেয় নাব্য সংকট। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) নাব্য সংকট সমাধানে দৌলতদিয়া প্রান্তের ৭ নম্বর ঘাট এলাকায় দীর্ঘ প্রায় এক মাস ধরে ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান রেখেছে। তারপরও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সমাধান।
স্থানীয়, যাত্রী, হকার ও যানবাহনের চালকরা বলছেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে তাদের ভোগান্তি শেষ হচ্ছে না। দৌলতদিয়া ঘাট আধুনিকায়ন অথবা এই রুটে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু হলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে। দৌলতদিয়া- পাটুরিয়া দেশের গুরুত্বপূর্ণ নৌরুট। পদ্মা সেতু চালুর আগে এ রুটে যাত্রী ভোগান্তি ছিল
নিত্যদিনের সঙ্গী। তবে পদ্মা সেতু চালুর পর এ রুটে যাত্রী ভোগান্তি যেমন কমেছে, তেমনি কমেছে অর্ধেকেরও বেশি যানবাহন পারাপারের সংখ্যা। বর্তমানে দৌলতদিয়া প্রান্তের সাতটি
ঘাটের মধ্যে মাত্র তিনটি দিয়ে পারাপার করা হচ্ছে যানবাহন। কিন্তু নাব্য সঙ্কটের কারণে প্রায় এক মাস ধরে ব্যাহত হচ্ছে এ রুটে ফেরি চলাচল। ড্রেজিং কার্যক্রমের ড্রেজিংয়েও মিলছে না
কারণে পুরোপুরিভাবে সচল হচ্ছে না দৌলতদিয়ার বৃহত্তম ও ব্যস্ততম ৭ নম্বর ঘাট। যে কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রী ও যানবাহনের চালকরা। ঘাটে দীর্ঘ অপেক্ষা করে অনেক সময় ফিরে যেতে হচ্ছে অন্য ঘাটে।
ফেরিঘাটের হকার জয়নাল বেপারী বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালুর আগে দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে অনেক গাড়ি ও যাত্রী যাতায়াত করতো। তাতে আমাদের বেচাকেনাও ভালো হতো। কিন্তু পদ্মা সেতু চালুর পর এখন বেচাকেনা নেই বললেই চলে। নাব্য সঙ্কটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় অনেকে গাড়ি নিয়ে এখানে আসতে চায় না।’
হামিদুল ইসলাম, নাসির হোসেন, রাজিব শেখসহ কয়েকজন চালক বলেন, ‘আগে এসময় ঘন কুয়াশা, নাব্য ও ফেরি সংকটসহ নানা কারণে দৌলতদিয়ায় ভোগান্তি হতো। পদ্মা সেতুর হওয়ার পর সেই দুর্ভোগ অনেকটা কমেছে। এখন নাব্য সঙ্কটে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঘাটে অনেক সময় অপেক্ষার কারণে সময়মতো মালামাল ডেলিভারি দিতে পারছি না।’
রো রো ফেরি এনায়েতপুরীর মাস্টার মাসুদ আজম। তিনি বলেন, ‘দুই মাস আগে আমরা সোজা চলতে পারলেও এখন অনেক নিচ দিয়ে ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে। তারপরও নিশ্চিন্তভাবে চলতে পারছি না। ৭ নম্বর ঘাট বরাবর একেবারে সরু চ্যানেল। ঘুরে যেতে ফেরি পারাপারে ১৫-২০ মিনিট সময় বেশি লাগছে। এতে আমাদের খরচও
বাড়ছে।’ পদ্মা নদীতে ড্রেজিংয়ের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ নৌবাহিনী ডকইয়ার্ড নারায়ণগঞ্জের প্রজেক্ট অফিসার আব্দুল মান্নান বলেন, ফেরিঘাট এলাকা খনন করতে আমরা বিআইডব্লিউটিএর অধীনে কাজ করছি। খননের আগে তারা জরিপ করেন এবং কোথায় কতটুকু খনন করতে হবে সে নির্দেশনা দেন। বিআইডব্লিউটিএর নির্দেশনা অনুযায়ী ড্রেজিং করা হচ্ছে। নির্দেশনার বাইরে আমরা কিছুই করতে পারি না। করার ক্ষমতাও নেই।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক আলিম দাইয়ান বলেন, নাব্য সঙ্কটে ফেরি চলাচল কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। তবে ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
মন্তব্য