মো:শাকিল মোল্লা ,রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি:
রাজবাড়ীর পদ্মার পাড়ে রাতের আঁধারে ছয় কৃষকের ফসল নষ্ট করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। একমাত্র আয়ের উৎস নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। সোমবার (২৫ নভেম্বর) গভীর রাতে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের পদ্মার পাড়ে চরাঞ্চলে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, স্থানীয় ছয় কৃষকের ৫৯৪ শতাংশ জমিতে লাগানো পিয়াজ, রসুন ও মিষ্টি কুমড়া গাছ রাতের আঁধারে কেটে দেয় ও বিষাক্ত বিষ প্রয়োগ করে নষ্ট করেছে দুর্বৃত্তরা। ঋণ করে ফসলী খেতের পরিচর্যা করে পরিবারের ভরণপোষণ করার জন্য যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তারা, তা এখন নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো।
ভুক্তভোগী কৃষকরা হলো, স্থানীয় মুক্তার হোসেন, পরিমল ঘোষ, জয়নাল শেখ, ইমরান খান, সোহাগ গাজী ও হেলেম শেখ।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মার পাড়ে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের মহিদাপুর চরে লেবুর বাগান সংলগ্ন মাঠের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এবং পেয়াজ ও রসুনের ক্ষেত সাদা ও মিষ্টি কুমড়ার গাছ গুলো উপড়ে ফেলা হয়েছে। কিছু কিছু জমির পেয়াজ ও রসুন পা দিয়ে পিষে দেওয়া হয়েছে। এবং অন্যদের জমির ফসল ঠিক আছে।
আর এ ঘটনায় গোয়ালন্দ ঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন, ভুক্তভোগী কৃষক, পরিমল ঘোষ। স্থানীয় বাসিন্দা মাসুদ শেখ বলেন, দিনমজুর এরা ছয় কৃষক। ফসল উৎপাদন করে সংসারের ব্যয় বহন করেন। (২৬ নভেম্বর) সকালে তাদের চিৎকারে শুনে এসে দেখি তাদের ফসলি খেতের মিষ্টি কুমড়া গাছের গোঁড়া কাটা এবং পিয়াজ ও রসুনের খেত সাদা। ব্যক্তিগত শত্রæতা থাকতে পারে কিন্তু তাদের ফসলি খেত কেটে তাদের রোজগারের পথ বন্ধ করা, কোনো সুস্থ মানুষের কাজ হতে পারে না। তবে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ছয় কৃষক ও স্থানীয় একাধিক কৃষকরা জানায়, স্থানীয় বাচ্চু মন্ডল কে তারা দোষী করে অভিযোগ করছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ধারণা, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে বাচ্চু মন্ডল এ নেক্কারজনক কাজ করেছেন বলেও থানায় অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগী কৃষক, মুক্তার হোসেন বলেন, আমরা ছয়জনে এখানে ১৮ বিঘা জমিতে পেয়াজ, রসুন ও মিষ্টি কুমড়া আবাদ করেছিলাম। স্থানীয় এলাকার বাচ্চু মন্ডল দীর্ঘদিন আমাকে জালাতাম করছে। সে আমরা কাছ থেকে এর আগে ৫৫,০০০ টাকা চাদাও নিয়েছে। ২৫ নভেম্বর রাতের আধারে লোকজন এনে ফসল গুলো বিষ মেরে নষ্ট করে দেয় এবং মিষ্টি কুমড়া গাছ গুলো উপড়ে উঠিয়ে ফেলেছে। রসুন ও পিয়াজ বিষ দিয়ে নষ্ট করে দিয়েছে ও অনেক পেয়াজ ও রসুন তারা নিয়ে গিয়েছে। আমি এর বিচার চাই। আমরা থানা পুলিশ কে সাথে সাথে জানায়ছি। দোষীদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি। এঘটনার পর থেকে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমার আর উঠে দাড়ানোর মতো কোন পরিস্থিতি নাই। আমি ১০-১২ লাখ টাকা এখানে ব্যয় করেছি। আমার আশা ছিলো ২০-২২ লাখ টাকা বিক্রি করবো। পেয়াজ, রসুন গুলো বিষাক্ত ঔষধ দিয়ে মেরে ফেলেছে। আমি চাই এর যেনো বিচার হয়। আমি অসহায় লোক আমার কোন লোক নাই। এই বাচ্চু মন্ডল দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের ছত্র ছায়ায় এখানকার মানুষের জালাতন করেছে। এখন সে আবার নিজেকে বিএনপির নেতা দাবি করে। আমি চাই সে যে দলের হোক এর যেনো সত্য বিচার পাই।
ক্ষতিগ্রস্ত পেয়াজ চাষিদের একজন জয়নাল শেখ কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, তিনি ঋণ নিয়ে আবাদ করেছেন। পেয়াজ নষ্ট করে ফেলায় এখন ঋণ কীভাবে পরিশোধ করবেন তা নিয়ে চিন্তায় আছেন। আর এদিকে, অভিযুক্ত বাচ্চু মন্ডল বলেন, এ ঘটনায় আমি জড়িত নই। আমাকে এখানে চক্রান্ত করে ফাসানো হয়েছে। কে বা কারা করেছে আমার জানা নাই। তবে ঘটনাটি আমি শুনেছি খুবই কষ্টজনক ব্যাপার।
স্থানীয় ইউপি সদস্য, রাসেল শেখ বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। এটি খুবই দুঃখজনক বিষয়। আমি তাদের গোয়ালন্দ ঘাট থানায় অভিযোগ করার পরামর্শ দিয়েছি। এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, মোঃ খোকন উজ্জামান জানান, আমি এ বিষয়ে অবগত নই। তবে ভুক্তভোগী ওই কৃষকরা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করলে তাদের সরকারিভাবে যতটুকু সম্ভব সহায়তা করা হবে।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। পুলিশের তদন্ত চলছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেবো।
মন্তব্য