বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
 

আজও নিস্পত্তি হয়নি ঈশ্বরদী গার্লস স্কুলে যৌন হয়রানির অভিযোগ ছাত্রীদের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ৯ ডিসেম্বর ২০২৪

---
স্টাফ রিপোরটার

অধ্যক্ষ আসলাম হোসেনের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের অসংখ্য যৌনহয়রানির অভিযোগ থাকা স্বত্তেও আজও সুবিচার পাচ্ছেন না পাবনা জেলার ঈশ্বরদী গার্লস স্কুলের ভুক্তভোগী ছাত্রীরা। বিভিন্ন সময় নানা অজুহাতে উক্ত প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ আসলাম হোসেন ছাত্রীদের সাথে যৌন হয়রানি ও অনৈতিক আচরণ করে আসছিলেন। এর প্রতিবাদে গত ২৫ আগস্ট শত শত ছাত্রী এক বিক্ষোভ মিছিল সহকারে ঈশ্বরদী উপজেলা চত্তরে জড়ো হয়। বাধ্য হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করেন এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি)কে আহবায়ক করে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। ঘটনার সত্যতা পেয়ে এক মাসের মধ্যে তদন্ত কমিটি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান বরাবর একটি প্রতিবেদন পাঠান। সাথে পাঠান অফিসে আসলামের অনৈতিক কর্মে লিপ্ত অবস্থার একটি ভিডিও। কিন্তু দুই মাসাধিককাল অতিক্রান্ত হলেও শিক্ষা বোর্ড কতৃর্পক্ষ অদৃশ্য কারণে এর সুরাহা না করে বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখেছেন বলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা হতাশা ব্যক্ত করেন। বর্তমানে উক্ত অভিযোগগুলো বিচারাধীন রয়েছে। এদিকে আসলাম ভুক্তভোগী ছাত্রীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিযোগ তুলে নিতে অর্থনৈতিক লোভ দেখিয়ে কাজ না হলে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। এমনকি পরীক্ষার হলে নানা ঝামেলা করে ফেল করিয়ে দেয়া, রাস্তাঘাটে বখাটে ছেলেপেলে লেলিয়ে দিয়ে মানহানি করার ভয় দেখাচ্ছেন। তিনি প্রতারণা ও ছল চাতুরীর মাধ্যমে অনেক ছাত্রী ও অভিভাবকদের ফাঁকা খাতায় স্বাক্ষর করিয়ে নিচ্ছেন তদন্তকারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাঁড় করাতে। আর তার সাথে এ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন একই স্কুলের শিক্ষক এবং অধ্যক্ষ আসলামের নিকট আত্মীয় ফজলুল হক ও রাকিবুল হাসান। এ ব্যাপারেও ছাত্রীরা আসলামের বিরুদ্ধে শিক্ষা বোর্ডে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও এ ব্যাপারে আসলামের বিরুদ্ধে একজন ছাত্রী ঈশ্বরদী থানায় জিডি পর্যন্ত করেছেন। আসলামের অবর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি সুন্দরভাবে পরিচালিত হলেও আসলাম বিভিন্ন লোক পাঠিয়ে স্কুলে একটি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পায়তারা করছেন বলে অনেক অভিভাবক অভিযোগ করেন। যৌনহয়রানির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিতে থাকা শিক্ষক সদস্যরা তার পক্ষে কাজ না করায় আসলাম তাদের বিরুদ্ধেও গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এ ব্যাপারে শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক এনামুল হক ফোন না ধরায় তাঁর কোনো বক্তব্য পাওয়া যাযনি।
উল্লেখ্য, স্কুলের দশজন ছাত্রী তদন্ত কমিটির আহবায়ক সহকারী কমিশনার (ভূমি) সম্মুখে সরাসরি উপস্থিত হয়ে আসলামের বিরুদ্ধে যৌনহয়রানির অভিযোগ করেন এবং সাক্ষ্য দেন যে, অধ্যক্ষ মোঃ আসলাম হোসেনের অফিস কক্ষে কোনো ছাত্রী ছুটি নিতে একা গেলে, কোনো সমস্যার কারণে কিংবা দাবী দাওয়ার বিষয়ে গেলে তিনি মেয়েদের উপর নানা ছলে যৌন হয়রানি করেন। যেমন, কোনো ছাত্রীর শারীরিক সমস্যা হয়েছে কিনা, শারীরিক কি সমস্যা জানতে চাওয়া, ইচ্ছাকৃতভাবে নোংরা আলাপ জুড়ে দেওয়া, মেয়েদের ’ন্যাপকিন প্যাড’সংক্রান্ত কথাবার্তা উঠানো, অন্তর্বাস পরেছে কিনা, কোনো অনুষ্ঠানে শাড়ি উপরে পরার পরামর্শ, শাড়ি উপরে না পরলে খুলে যেতে পারে বলে সাবধান করা, ইচ্ছাকৃতভাবে পীঠে হাত দেয়া, শরীর স্পর্শ করা বা স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়া, বুকে জগিয়ে ধরা, পিকনিকে ছেলে বন্ধু সাথে নিলে ফুর্তির সুযোগ করে দেয়া ইত্যাদি নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তার যৌনস্পৃহার বহি:প্রকাশ ঘটান বলে কোমলমতি ছাত্রীদের জবানবন্দীতে উঠে এসেছে। এমনকি আসলাম ’নারীদের সন্তান প্রসব হওয়ার দৃশ্য’ দেখার গল্প পর্যন্ত মেয়েদের কাছে আসলাম করেন বলে একজন ছাত্রীর সাক্ষে পাওয়া যায়। ইতিপূর্বে আসলাম অনেক ছাত্রীর সাথে যৌনহয়রানি করেছেন বলে স্কুলের প্রাক্তন দুই প্রধান শিক্ষকদ্বয়ও তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। একটি বালিকা বিদ্যালয়ের সন্তানসম কোমলমতি ছাত্রীদের সাথে একজন শিক্ষকের এধরণের নোংরা ও কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা এবং তাদের গায়ে হাত দেওয়ার মাধ্যমে যৌন হয়রানি করায় ঈশ্বরদীর বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতা কর্মীসহ সচেতন মহল আসলামের অপসারণ দাবী করে আসছেন। বিএনপির মধ্য সারির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আসলামকে কে চেনে না? তাঁর ইতিহাস সবারই জানা। বিগত সরকারের আমলে আসলাম স্কুলটিকে তার কুকর্মের স্বর্গরাজ্য বানিয়ে ফেলেছিলেন। কোনো বিচার ছিল না তার কুকর্মের। তার নামে অভিযোগ করার সাহস কারও ছিল না। ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত এই স্কুলের ছাত্রীদের সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে। কোমলমতি ছাত্রীদের উপর যার কুনজর পড়ে, সেই শিক্ষকের জন্য ঈশ্বরদীর কোনো নেতাকর্মী এগিয়ে যাবে না এটা নিশ্চিত থাকেন। যারা যাবে তাদের পরিবারে কোনো মা—বোন—মেয়ে নেই বলে ধরে নিবে মানুষ।

মন্তব্য

সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon