বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
 

জয়িতা সম্মাননা পেলেন জাবি অধ্যাপক সুলতানা আক্তারের মা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ৯ ডিসেম্বর ২০২৪

---
জাবি প্রতিনিধি
আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ এবং বেগম রোকেয়া দিবস (৯ ডিসেম্বর- ২০২৪) উপলক্ষ্যে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী পরিচালিত “জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ” শীর্ষক কার্যক্রমের আওতায় সফল জননী ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী ক্যাটাগরীতে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শ্রেষ্ঠ জয়িতা সম্মাননা পান রোকেয়া রহমান। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক সুলতানা আক্তারের মা।

সোমবার (৯ ডিসেম্বর ) উপজেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আয়োজনে উপজেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে তার হাতে সম্মাননা স্মারক ও সনদ তুলে দেন মানিকগঞ্জ জেলার  শিবালয় উপজেলার উপজেলা প্রশাসক  মোঃ বেলাল হোসেন।

সন্তানকে সফল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার অন্যতম কারিগর হলেন মা। যে মায়ের সন্তানরা আজ প্রতিষ্ঠিত সেই মাকেই সমাজ সফল মা হিসেবে চিহ্নিত করেন। সমাজে সন্তানদের সুশিক্ষিত এবং আগামী দিনের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ভোলার নিপুণ স্থপতি, সন্তানকে সত্যিকারের ও সফল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালনকারী সফল একজন মা হলেন মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের ছোট শাকরাইল গ্রামের আব্দুর রহমানের স্ত্রী রোকেয়া রহমান (৫৯)।

রোকেয়া রহমান ১৯৬৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ জেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের ধলাই গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ার কারনে তিনি বেশিদূর পড়ালেখা করতে পারেন নি। মাত্র ১৬ বছর বয়সে নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ১৯৮১ সালের ১১ জুন মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার ছোট শাকরাইল গ্রামের আব্দুর রহমানের সাথে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। রোকেয়া রহমানের পড়ালেখার প্রতি ছিল প্রবল অনুরাগ। তিনি যেহেতু পড়ালেখা করার সুযোগ পাননি, তাই সন্তানদের পড়ালেখা করানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন। সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করে নিজের স্বপ্নপূরণ করার চেষ্টা করেছেন। নানা প্রতিকূলতার কারণে নিজের স্বপ্ন ভঙ্গ হলেও থেমে থাকেননি তিনি। নিজের লুক্কায়িত স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে নিজের সন্তানদের নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। সন্তানদের পড়ালেখায় উৎসাহ প্রদানের পাশাপাশি লেখাপড়ার খরচ যুগিয়েছেন।

ব্যক্তি জীবনে রোকেয়া রহমান দুই কন্যা এবং দুই পুত্র সন্তানের জননী। দুই মেয়ে বড় এবং দুই ছেলে ছোট। বড় মেয়ে রোজিনা মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বি.বি.এস (হিসাববিজ্ঞান) এবং এম.বি.এস সম্পন্ন করে ৪০ নং দৌলতপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত আছেন। ছোট মেয়ে ড. সুলতানা আক্তার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতক (সম্মান), স্নাতকোত্তর এবং পিএইচ.ডি ডিগ্রী লাভ করেন। বর্তমানে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। রোকেয়া রহমানের বড় ছেলে সেলিম মোল্লা কৃতিত্বের সাথে মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বি.বি.এস (হিসাববিজ্ঞান) এবং এম.বি.এস (প্রথম শ্রেণি) সম্পন্ন করে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার চরকাটারি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব হিসেবে কর্মরত আছেন। ছোট ছেলে ইসতিয়াক মাহমুদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে কৃত্বিত্বের সাথে স্নাতক (সম্মান) (প্রথম শ্রেণি) ও স্নাতকোত্তর (প্রথম শ্রেণি) সম্পন্ন করে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি নুরুন্নাহার ট্রেডার্সে বিজনেস কোঅর্ডিনেটর হিসেবে কর্মরত আছেন।

সংসারে টানাপোড়েন, অর্থাভাবসহ নানা প্রতিকূলতার মাঝে কিভাবে ৪ সন্তানকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন জানতে চাইলে। রোকেয়া রহমান জানান, “খুব অল্প বয়সে আমার বিয়ে হয়ে যায়। স্বামীর সংসারে এসে নানা প্রতিকূলতা ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে খুবই চিন্তিত হতাম। কিন্তু কোনদিন হতাশ হইনি। স্বামী নিজেদের জমিতে কৃষি কাজের আয় দিয়ে অনেক কষ্টে সংসার পরিচালনা করেছি। সন্তানদের সব সময় বুঝিয়েছি শুধুমাত্র অর্থ উপার্জন করে প্রকৃত মানুষ হওয়া যায় না। লেখাপড়া হচ্ছে স্থায়ী সম্পদ। লেখাপড়া শিখে নিজে আলোকিত হয়ে সমাজকে আলোকিত করা যায়।” সন্তানদের কাছে আপনার কী চাওয়া পাওয়া জানতে চাইলে রোকেয়া রহমান জানান, আমি চাই সন্তানরা সমাজ ও দেশের কাজে এসে মানুষের কল্যাণে নিবেদিত থাকুক। নিজের আলোয় সমাজকে আলোকিত করুক। এছাড়া আমার সন্তানরা ও পুত্রবধূরা নিয়মিত আমাদের খোঁজখবর নেন। তারা সবসময় ভাল থাকুক এই কামনা করি।” রোকেয়া রহমানের মতো এমন মহীয়সী নারী জন্মালে জন্ম নেবে এমন আলোকিত সন্তানরা। আর এই আলোকিত সন্তানরা সমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে। তাঁর এই দৃষ্টান্ত অন্য মায়েদের অনুপ্রাণিত করবে যুগে যুগে।

মন্তব্য

সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon