মো. নাজিমুল ইসলাম
বর্তমান বিশ্বের দিকে তাকালে দেখি যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ইসরাইলের সাথে হামাস ( গাজা ), লেবানন, সিরিয়ার যুদ্ধ। আবার যুদ্ধের আঁচও লেগেছে জর্ডান সীমান্ত ঘেঁষে। চারদিকে যেন শুধু যুদ্ধ আর যুদ্ধ। এই যুদ্ধের বিষাক্ত বাতাস যেন বয়ে এসেছে ভারত বাংলাদেশ এর মধ্যে। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসন আমলে বাংলাদেশকে পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করতো ভারত। বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক রদ বদলের ফলে ভারত যেন অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে বাংলাদেশের ওপর থেকে। বাংলাদেশ এখন কারো নিয়ন্ত্রণে নেই। রিপাবলিক মিডিয়া চট্টগ্রামকে ভারতের অধীনে করে নেওয়ার আহ্বান জানান। এদিকে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির এক নেতা বাংলাদেশে আলু-পেয়াজ রপ্তানি বন্ধের আহ্বান জানান এবং বাংলাদেশি মুসলমানদের নিজেদের শত্রু দাবি করেন।
আবার কলকাতা মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তার জন্য জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর জন্য দিল্লি সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানান। কলকাতাতে কিছু সংখ্যক মানুষ মিছিল নিয়ে বের হয়। তাদের দাবি বাংলাদেশের নোয়াখালী, কুমিল্লা, সিলেট, খুলনা অঞ্চলগুলোকে ভারতের অধীন করার জোর দাবি জানায়। সে সাথে বাংলাদেশের প্রধান চট্টগ্রাম বন্দরও তাদের করে নেওয়ার ইচ্ছা পোষন করেছেন। চট্টগ্রাম বন্দরকে ভারতের অধীন করা হলে ভারতের কি ধরনের সুযোগ-সুবিধা হতো তা ব্যাখ্যা করেছে রিপাবলিক মিডিয়ার সংবাদ উপস্থাপনকারী ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ।
এই বিষয়কে অনেকে রাজনৈতিক ইস্যু বলে আখ্যায়িত করেছে। তবে যদি ভারত বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে আক্রমণ করে বসে। তবে কি পারবে বাংলাদেশকে দখল করতে? জেনে নেওয়া যাক।
বর্তমান বিশ্বে সেনাবাহিনীর সংখ্যার দিক থেকে প্রথম স্থান দখল করে আছে চীন, দ্বিতীয় স্থানে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তৃতীয় স্থানে আছে ভারত। ভারতের বর্তমান সৈন্য সংখ্যা ১৩ লক্ষ ২৫ হাজার। তবে ভারতের ১৩ লক্ষ এই সৈন্যবাহিনীর একটা বড় অংশ নিজেদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছে। কাশ্মীর, মধ্যপ্রদেশ এবং পূর্বাঞ্চলে সাতটা রাজ্যের, যাদেরকে আমরা সেভেন সিস্টার হিসেবে জানি। সেখানকার বিদ্রোহীদের দমন করতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটা বিশাল অংশ সেখানে নিয়োজিত আছে। তাদেরকে সর্বদা সেখানে থাকতে হবে। অন্যথায় ভারত তাদের সেভেন সিস্টার্স সহ আরো কিছু রাজ্যে হারিয়ে ফেলার প্রবল সম্ভাবনা আছে। ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব না জানার কিছু নয়। জন্ম-লগ্ন সূত্র হতেই তাদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। একে অপরকে আক্রমণ করার জন্য মুখিয়ে থাকে। সৈন্যবাহিনীর সংখ্যা দিক থেকে পাকিস্তান বিশ্বের মধ্যে ছয় নাম্বারে অবস্থান করতেছে। পাকিস্তানের সৈন্য সংখ্যা ৬ লক্ষ ৩০ হাজার। পাকিস্তানের সৈন্যবাহিনীর একটা বড় অংশ ভারতকে আক্রমণ করার জন্য মুখিয়ে থাকে। এতে করে ভারতে প্রায় সাত থেকে আট লক্ষ সৈন্য প্রয়োজন পাকিস্তান ও অভ্যন্তরীণ সংকট মোকাবেলা করতে। এদিকে আবার ভারতের সঙ্গে চীনের দ্বন্দ্ব চলতেছে ভারতীয় প্রদেশ অরুণাচল নিয়ে। অলরেডি চীন কিন্তু এই অরুণাচল প্রদেশটি নিজেদের দখলের মধ্যে নিয়ে নিল। এতে করে দু’দেশের সীমান্তে বৈরি উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। চীন ভারত সীমান্ত সংকট মোকাবেলায় ভারতের প্রায় তিন লক্ষ সেনাবাহিনী মোতায়েন আছে ভারতীয় সীমান্তে। ভারতের প্রায় চারভাগের তিনভাগই নিয়োজিত থাকে এসব সংকট মোকাবেলায়। বাকি থাকে তাদের এক ভাগ সৈন্যবাহিনী অর্থাৎ প্রায়ই দুই থেকে আড়াই লক্ষ সেনাবাহিনী। এই অবশিষ্ট সৈন্যবাহিনী নিয়ে ভারত যদি বাংলাদেশে আক্রমণ করে তাহলে তা হবে একদম বোকামি। কারণ সাময়িক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, কোন দেশকে দখল করতে গেলে সে দেশের শক্তি তুলনায় তিন থেকে চারগুন সৈন্য থাকা প্রয়োজন। মজার ব্যাপার হলো আপনি যুদ্ধবিমান দিয়ে শত্রুর দেশকে শুধুই ধ্বংস করতে পারবেন কিন্তু দখল করতে গেলে আপনার প্রয়োজন পদাতিক বাহিনী। যেমনটা বর্তমানে আমরা দেখতেছি গাজা এবং ইসরাইল যুদ্ধে। ইসরাইল যুদ্ধবিমান দিয়ে পুরো গাজাকে একেবারে ধ্বংস-নিস্তেজ করে ফেলেছে। কিন্তু পদাতিক বাহিনী দিয়ে কোনোরকম সুবিধা করতে পারছে না ইসরায়েলী বাহিনী। তেমনি ভারত যুদ্ধবিমান দিয়ে বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে পারলেও পারবে না দখল করতে। মাত্র দুই থেকে আড়াই লক্ষ পদাতিক সৈন্য নিয়ে কোন দেশ দখল করা একেবারেই অসম্ভব। আর বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সংখ্যাও একেবারে কম না। তাই এমন পরিস্থিতিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য বাংলাদেশকে আক্রমণ করা অসম্ভব হয়ে দাড়াবে। অন্যদিকে ভারতের শত্রু চীন এবং পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের বড় সখ্যতা গড়ে উঠেছে। বলা যায় তাদেরকে এখন মিত্র রাষ্ট্র। কারণ তাদের এখন প্রধান শত্রু হচ্ছে ভারত। ভারত যদি বাংলাদেশে আক্রমণ করে তাহলে চীন এবং পাকিস্তান সীমান্তে ভারতের জন্য একটা কাল হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু বাংলাদেশের চাইতে সবদিক থেকে ভারতের সক্ষমতা অনেক বেশি।
ভারতে রয়েছে আধুনিক এবং বিশাল শক্তির বিমান বাহিনী। কিন্তু তাদের লজিস্টিক ( ত্রাণ এবং সৈন্য-সামরিক ) বিমান সহায়তা রয়েছে খুব কমই। ভারতীয় বিমান বাহিনীর কাছে আছে দশটি হেভি ওয়েট পরিবহন বিমান, বিশটি মিডিয়াম ক্যাটাগোরির লজিস্টিক বিমান রয়েছে। অথচ ভারতের মতো একটা শক্তিশালী রাষ্ট্র ও বিপুল সংখ্যক সৈন্যের জন্য রসদ ও সৈন্য-সামরিক শক্তি মোতায়নে এই কিছু ট্রান্সপোর্ট বিমান যথেষ্ট নয়। যেমনটা আমরা ২০২০ সালে চীন-ভারত সংঘর্ষে সময় দেখেছি। ভারতের ট্রান্সপোর্ট প্লাইটের অভাব। তখন ট্রাক ভর্তি করে দেয়া হয়েছে রসদ ও সৈন্য-সামরিক সহায়তা। এজন্য সময় লেগেছে বেশ কয়েক সপ্তাহ। তাতেই চীনের কাছে ভারত নিজেদের অরুণাচল প্রদেশটি হারিয়ে ফেলে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারত যদি বাংলাদেশে আক্রমণ করে থাকে তাহলে এখানে লজিস্টিক বিমান বাহিনী তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারবেনা। যদিও ভারতে রয়েছে প্রায় ৫০০টি যুদ্ধবিমান। এতে কোন সন্দেহ নেই যে এত সংখ্যক যুদ্ধবিমান দিয়ে ভারত অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে বাংলাদেশকে ধূলিসাৎ করে দিতে পারবে।কারণ বাংলাদেশের কাছে এমন কোন শক্তিশালী যুদ্ধবিমান নেই যা ভারতীয় জেড-ফাইটার গুলো মোকাবেলা করতে পারে। সেই সাথে নেই তেমন কোন আকাশ প্রতীক্ষা ব্যবস্থাও। ভারতের কাছে রয়েছে ACU-30 প্রায় ২৭০ টি, এছাড়াও MIG-21, JAGUA FIGHTER - Z কিন্তু এগুলো বর্তমানে আধুনিক যুগে বেশ পুরাতন মডেল। ভারতীয় বিমান বাহিনীর একমাত্র কার্যকরী অ্যাটাক মিশন বিমান হলো MIRAJ - 2000, DASAL- RAFAEL (৩৬টি) যুদ্ধবিমান। এই সব যুদ্ধবিমান ভারতের প্রধান শত্রু চীন এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কিন্তু এই সব যুদ্ধবিমানের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। ধারণা করা হয় বাংলাদেশে এই ধরনের যুদ্ধবিমান ব্যবহার করবে না। তাই বলা যেতে পারে বাংলাদেশে আক্রমণ করলে ভারতীয় বিমান বাহিনী যে ধরণের যুদ্ধবিমান ব্যবহার করবে এর সংখ্যা খুবই কম।
ভারতে বিমান বাহিনী একদিকে যুদ্ধবিমান সংকটে ভুগছে, অন্যদিকে পাকিস্তানের কাছে রয়েছে ফাইটার জেড এবং AF-16 যুদ্ধবিমান।যার সামনে ভারতের রাফায়েল যুদ্ধবিমান কার্যকর খুবই কম। এদিকে আবার চীন থেকে ভারত সামরিক শক্তিতে অনেক পিছিয়ে।সুতরাং বাংলাদেশের ৪০টি মিলিএস-২০০০ দিয়ে বাংলাদেশে আক্রমণ করাটা ভারতের জন্য একেবারেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। তাদের এই আধুনিক যুদ্ধবিমান গুলো মাত্র কয়েকটি স্থানেই সাপোর্ট দিতে সক্ষম। যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই নগণ্য। আর এটাও মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে পরিণত হবে যুদ্ধক্ষেত্রে। প্রাণ হারাতে থাকবে হাজার হাজার নিরীহ মানুষ।
বাংলাদেশ মিলিটারি দিক থেকে অনেক শক্তিশালী একটা দেশ। তাছাড়া ইদানিং লক্ষ্য করলে দেখা যায় অস্ত্র-সশস্র ক্রয়ের ব্যাপারে বেশ মনোযোগ দিচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বর্তমান বিশ্বে সামরিক শক্তির দিক থেকে বাংলাদেশে অবস্থান ৩৭ তম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় ৪র্থ তম। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের যেকোন বিপদে নিজেদের সবকিছু দিয়ে লড়াই করতে সর্বদা প্রস্তুত। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দক্ষতা এবং পেশাদারিত্বে ভারতীয় সেনাবাহিনীর চেয়ে অনেক এগিয়ে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিশ্বের প্রায় ৪৩ টি দেশে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করার অভিজ্ঞতা লাভ করছে। বিপরীতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর যুদ্ধে অভিজ্ঞতা আন্তর্জাতিকভাবে খুবই সীমিত। যদিও তারা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে সর্বাধিক সংখ্যক সেনাবাহিনী পাঠিয়ে থাকে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘের অধীনে থেকে প্রায় অর্ধ শতাধিক দেশে সরাসরি যুদ্ধের অভিজ্ঞতা লাভ করেছে। এতে ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর চেয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দক্ষতা এবং পেশাদারিত্ব অভিজ্ঞতা লাভ অনেকটা বেশি বলা যায়। তাছাড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এইসব দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব অভিজ্ঞতা লাভের পাশাপাশি অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র ক্রয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে। বিশেষ করে বিভিন্ন আগ্রাসন মোকাবেলায় বাংলাদেশ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে যুদ্ধ ট্যাংক, যুদ্ধবিমান এবং অন্যান্য সমরাস্ত্র সংগ্রহ করছে। যা বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরো জোরদার করবে। এমনকি বাংলাদেশ কিছুদিন আগে তুরস্কের কাছ থেকে কিছু সংখ্যক বায়ার আক্তার টিবি-২ ক্রয় করেছে যা বর্তমান পৃথিবীর সবচাইতে অত্যাধুনিক ড্রোন। আর কিছু ড্রোন কেনার জন্য তুরস্কের সাথে চুক্তি করেছে। যার মাত্র ৫০ টা দিয়ে ইউক্রেন রাশিয়ার হাজার হাজার যুদ্ধযান ধ্বংস করে দিয়েছিল। একই সাথে সমরাস্রের উৎপাদন বাড়ানো এবং বাহিরের দেশ থেকে আধুনিক অস্ত্র ক্রয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আরও শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা করছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এই সমস্ত অত্যাধুনিক অস্ত্র বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বহরে যুক্ত হবে। যা বাংলাদেশকে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবে। তাছাড়াও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কৌশলগত শক্তি বৃদ্ধিতে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গুলোর মধ্যে একটা হল এমপিবিয়াস ট্যাংক। বাংলাদেশ চীন থেকে ৫৪ টি অত্যাধুনিক উপচর ট্যাংক অর্ডার করেছে। যা পানিতে এবং মাটিতে উভয় জায়গায় কার্যকর ভাবে চলতে পারে। এই ট্যাংক গুলো এমনভাবে তৈরি যা তীব্র স্রোতেও চলতে পারে। এগুলো বিশেষ ধরনের হামলা চালানোর ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর। যা বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা শক্তিকে আরো মজবুত করবে।
বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সংখ্যা হচ্ছে ১ লক্ষ ৬৩ হাজার। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোন রিজার্ভ ফোর্স নেই। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ট্যাংকবহরে কম্ভার ট্যাংক রয়েছে সর্বমোট ৩২০ টি। এছাড়াও হয়েছে এন্টি ট্যাংক ওয়েপন যা দিয়ে শত্রুপক্ষের ট্যাংক এবং সাজোয়া-যানকে নিমিষেই ধ্বংস করে দেয়া যায়। এই এন্টি ট্যাংক ওয়েপনের সংখ্যা প্রায় ২৫০০ টি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বহরে প্রায় ১৩,১০০টি সাজোয়া-যান রয়েছে। সাজোয়া-যানগুলো ব্যবহৃত হয়ে থাকে সেনাদেরকে নিরাপদে অপারেশন চালাতে এবং লজিস্টিক সাপোর্ট দিতে। বর্তমান বিশ্বে আধুনিক যুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকরী অস্র হলো ক্ষেপণাস্ত্র। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছে ও ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় তার রেঞ্জ ও সংখ্যা খুবই কম। সেনাবাহিনীর হাতে সবচেয়ে শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র হচ্ছে তুরস্ক থেকে ক্রয় করা TRG-300 TIGER মাল্টিপল রকেট লঞ্চার। যার রয়েছে ১৮ ইউনিট। এগুলো রেঞ্জ হচ্ছে ১২০ কিলোমিটার। এটা এছাড়াও TRG-200 & 30 MODEL এর কিছু রকেট রয়েছে অজানা সংখ্যক। এবং চায়না থেকে ক্রয় করা আরো কিছু রকেট প্রজেক্টর’স রয়েছে যার সংখ্যা ৪৯ ইউনিট। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছে রয়েছে ৭০ থেকে ১০০ ইউনিট রকেট প্রজেক্টরস। অবশ্য তুরস্কের TRG-300 TIGER এর সক্ষমতা ক্ষেপণাস্ত্র এর মতো হলেও এগুলোকে রকেট প্রজেক্টরস হিসেবে ধরা হয়। হিসেবে দেখা যায় যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছে মিসাইল ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি নেই। যা অর্জন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সীমান্ত যুদ্ধে কামান ছাড়া টিকে থাকা খুবই অসম্ভব। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হাতে আধুনিক সূচক কামান রয়েছে ২৭ ইউনিট এবং হাতে টানা কামান রয়েছে ৪২৭ ইউনিট। সীমান্তে শত্রুর মোকাবেলায় এলো-পাথারি আক্রমণ করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা অস্র হচ্ছে মটার ওয়েপনস। ছোট বড় মিলিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হাতে আনুমানিক চার হাজারের অধিক মটার ওয়েপনস রয়েছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বহরে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেই। মিসাইল সম্বলিত FM-9T শর্ট-রেঞ্জ এয়ার ডিফেন্সই কেবলমাত্র বাংলাদেশের আধুনিক এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। ছয়টি স্যাম সিস্টেম এবং ২৭৫ টি মিসাইল নিয়ে এর রেজিমেন্টি সেনাবাহিনীর হাতে রয়েছে। এফ এম 90 শর্টেজ এয়ার ডিফেন্সের বেঞ্চ ১৬ কিলোমিটার। সাধারণত নিম্নমুখী হেলিকপ্টার এবং যুদ্ধবিমান ভূপতিত করা যাবে এই সিস্টেম দিয়ে। তাছাড়া বেশি উচ্চতা যুদ্ধবিমান অথবা মিসাইল প্রতিহত করা যাবে না বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এর বাইরে সেনাবাহিনীর হাতে বিভিন্ন রকমের ম্যানপ্যাড রয়েছে যেগুলো কাঁধে বহন করে ব্যবহার করতে হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবদিক থেকে শক্তিশালী হলেও ক্ষেপণাস্ত্র এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দিক থেকে অনেক পিছিয়ে।
যুদ্ধ কখনও শান্তি বয়ে আনতে পারেনা। বাংলাদেশে যদি ভারত আক্রমণ করে তাহলে তারা দখল করতে পারবে না এটা ঠিক। তবে গাজার মতো ধ্বংসস্তূপে পরিণত করতে পারবে। প্রাণ হারাবে লক্ষ লক্ষ মানুষ। এমনকি ভারতের জন্যেও রয়েছে অশনি সংকেত। ভারত বাংলাদেশের সাথে যুদ্ধে ব্যস্ত থাকলে চীন এবং পাকিস্তান ভারতীয় মানচিত্রে আক্রমণ করতে দ্বিধাবোধ করবে না। আর এদিকে সেভেন সিস্টার এবং বিভিন্ন রাজ্য বিভক্ত হওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে যারা,তাদের নিরস্র আন্দোলনকে সশস্ত্র আন্দোলনে পরিণত করে বিভক্ত হয়ে যাবে। এমন ভয়াবহ কিছু হলে যা দুটো দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই দু’দেশের জনগণের উচিত এমন উস্কানি মূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকা। এবং দু’দেশের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা।
লেখক: শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা কলেজ।
মন্তব্য