ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘটনাপ্রবাহ এবং ঢাকা কলেজের অবদান নিয়ে সমন্বয়ক ও ঢাকা কলেজের ছাত্র-শিক্ষকদের মাঝে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সকাল ১১:৩০ মিনিটের সময় ঢাকা কলেজের শহীদ আ.ন.ম. নজীব উদ্দিন খান খুররম্ অডিটোরিয়ামে এই অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়। সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা কলেজের সুনামধন্য অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস। আলোচকবৃন্দ হিসেবে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের আহ্বায়ক ও সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, খান তালাত মাহমুদ রাফি, মোহাম্মদ রাকিব, আরিফ সোহেল, নাজমুল হাসান, তারিকুল ইসলাম। উক্ত আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন জুলাই অভ্যুত্থানে আহত শিক্ষার্থীরা।
আলোচনার বক্তব্যে খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ঢাকা কলেজের বিপ্লবী সহযোদ্ধাদের রাজপথে পাশে পেয়েছি। চট্টগ্রামের বীরচটলার রাজপথেও পাশে পেয়েছি ঢাকা কলেজের সহযোদ্ধাদের।
আন্দোলনের মাঝামাঝি সময়ে আন্দোলন থেমে যাওয়ার ভাব ছিল,তখন কেন্দ্রীয় পর্যায়ে কারো সাথে তেমন কোনো যোগাযোগ করা সম্ভব না হলেও ঢাকা কলেজের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ রাকিব এর আমার ঐসময় প্রায়ই যোগাযোগ হতো। দেশের প্রতিটি ক্লান্তিকালে ঢাকা কলেজের অবদান ছিল অনিষ্কাশিত।
এসময় তিনি ঢাকা কলেজের প্রতি আহ্বান জানান, দেশের প্রতিটি সংকটে যেমন ঐক্যবদ্ধভাবে আপনারা ভূমিকা রেখেছেন তেমনি ভবিষ্যত সংকট মোকাবেলায় আপনাদের উপস্থিতি কামনা করি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সমন্বয়ক রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ঢাকা কলেজ বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে ওতপ্রতভাবে জড়িত। এই গনঅভ্যুত্থানে ঢাকা কলেজের অবদান অনস্বীকার্য। ১৯৬৯ সালের গনঅভ্যুত্থানেও ঢাকা কলেজের ইতিহাস স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। ২৪শের গনঅভ্যুত্থানেও আমরা তা প্রত্যক্ষ করেছি। ঢাকা কলেজ ছাড়া আন্দোলন সফল করা সম্ভব হতো না। এই আন্দোলনে নারী পুরুষ সকলেই ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত ছিল। যখন আমাদের ঢাবির হলগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, তখন আমরা কয়েকটা প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরশীল হই তার মধ্যে ঢাকা কলেজ অন্যতম। আমাদের আন্দোলন চালানোর জন্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেক বেশি বড় ভূমিকা পালন করে। তেমনি ঢাকা কলেজও প্রথম সারিতে থেকে ভূমিকা পালন করেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমাদের আওয়ামী লীগের জাহেলিয়াতের যুগ পার করতে হয়েছে। এখন আমরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পেরেছি; আমাদেরকে ভাবতেও হয়নি, এই কথাটার জন্য বাসয় আর পুলিশ যাবে। আমরা অধিকাংশ সময় দেখি দেশের কিছু টকশো জীবীরা বলেন যে, এই চারমাসে আমরা কি পেলাম? এই চারমাসে বাংলাদেশ একদম রসাতলে চলে গিয়েছে। আহাজারি, শোক,কষ্ট -দুঃখ এইগুলো সবসময় তারা বর্ণনা করতে থাকে। অত্যাচার, অন্যায়,গুম,খুন ইত্যাদি এইসব এর বিরুদ্ধে কখনো তাহাদের আহাজারি,শোক,দুঃখ প্রকাশ করতে শুনি নাই। আমাদের ক্রোধ রয়েছে, এই তরুণ প্রজন্মের ক্ষোভ রয়েছে, সেইসব কলমের বিরুদ্ধে, যারা এতদিন ফ্যাসিবাদের সমর্থনে লিখে গিয়েছে। আমাদের ক্রোধ রয়েছে, সেইসব বিচারকদের বিরুদ্ধে যাদের কলম চলেছে ইনসাফের বিপরীতে জুলুম লেখা হয়েছে । যেসব বিচারকের কলম দিয়ে মজলুমের গলায় ফাঁসির রশি লেগেছে, তাদের প্রতি আমাদের ক্রোধ রয়েছে। আমাদের ক্রোধ রয়েছে সেসব শিক্ষকদের প্রতি যারা ক্লাস বাদ দিয়ে এই ফ্যাসিবাদের শান্তি সমাবেশে সমর্থন করেছে। আমাদের ক্রোধ রয়েছে সেসব আমলাদের প্রতি যার এই ফ্যাসিবাদকে টিকিয়ে রাখতে ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজ করেছে। আমাদের ক্রোধ রয়েছে সেসব ব্যবসায়ীদের প্রতি যারা ২৭ জুলাই “মাদার অফ টেরর” শেখ হাসিনার কাছে গিয়ে উন্নয়নের বায়াত নিয়ে এসেছে। আমাদের ক্রোধ রয়েছে সেসব পুলিশের প্রতি, যেইসব পুলিশ জনগণের টাকায় ফ্যাসিবাদকে দুমড়লে-মুছলে দেওয়ার জন্য যে অস্ত্র কেনা হয়েছে , সেই অস্ত্র তাক করা হয়েছে নিরস্ত্র জনগণের প্রতি।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আহত ও নিহতদের প্রতি দায়বদ্ধতা রেখে হাসনাত বলেন, আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে সেসব মায়েদের প্রতি যারা সন্তান হারা হয়েছেন। আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে সেইসব সন্তানদের প্রতি যারা এতিম হয়েছেন। আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে সেসব বিধবাদের প্রতি যাদের মেহেদীর রক্ত শুকিয়ে যাওয়ার পূর্বেই তাদের স্বামী রাস্তার মধ্যে রক্ত দিতে হয়েছে।
আমাদের ষোড় বছরের আঘাত, এই কিছু টকশো-জীবী এবং বুদ্ধিজীবী যাদেরকে ভারত থেকে ফাইনান্স করা হয় তাদের কথা শুনে ভুলে গেলে চলবে না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজনীতি প্রসঙ্গে এই আহ্বায়ক বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোনো ক্রিয়াশীল সংগঠন না বরং ফ্যাসিবাদ বিরোধী যে শক্তিগুলো ছিল ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, অধিকার পরিষদসহ সবাইকে একত্রিত করার জন্য এবং জাতীয় ঐক্যের প্রতিক হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মাঠে রয়েছে।ফ্যাসিবাদ বিরোধী দলগুলোকে বুঝতে হবে আমরা কোনো তথাকথিত কনভেনশনাল রাজনৈতিক ধারাবাহিকতার মধ্যে নেই।পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মানে তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে। কোনো শক্তি যদি মনে করে তরুণ প্রজন্মকে মাইনাস করে নিজেরা ক্ষমতায় যাবে তাহলে তারা ভুল ভাবছে। পূর্ববর্তী প্রজন্মের অভিজ্ঞতা এবং বর্তমান প্রজন্মের সাহসিকতা নিয়ে আগামীর বাংলাদেশ গড়তে হবে।
পরিশেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যের মাধ্যমে আলোচনা সভার সমাপ্তি হয়।
মন্তব্য